গয়া জমানা! যাঁরা প্রতিবেদনটি পড়ছেন, তাঁরা যদি বয়সে তিরিশ কিংবা চল্লিশের আশপাশে থাকেন, তবে জেনে রাখুন, এখন আপনারা বয়োজ্যেষ্ঠ! দাদা-দিদি থেকে কাকা-কাকিমা হয়ে এখন প্রায় জ্যাঠামশাই-জেঠিমার পর্যায়ে উত্তীর্ণ। ২০২৫ সালে আগমন হয়েছে নতুন প্রজন্ম ‘জেন বিটা’-র। ফলে বছর ১৫ আগেও যে মিলেনিয়ালদের আধুনিক যুগের প্রতিভূ ভাবা হত, তারা অনেকখানি পুরনো হয়েছে। কারণ, বিটা আর মিলেনিয়াল, দুই প্রজন্মের মধ্যে ফারাক অনেক।
মিলেনিয়ালরাই হল সেই প্রজন্ম, যারা কম বয়সে ইন্টারনেট দেখেছিল। প্রথম থেকেই কম্পিউটারে চোস্ত, প্রযুক্তিতে প্রখর। ১৯৮১-’৯৬ সালের মধ্যে জন্মানো ওই প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর দুনিয়ায় রাজত্ব করেছে একদম শুরুর দিন থেকে। কিন্তু তার পরেও ২৯টা বছর কেটে গিয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই পৃথিবীতে এসেছে নতুন নতুন প্রজন্ম— জেনারেশন জ়েড বা জেন জ়ি এবং জেনারেশেন আলফা। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আরও এক প্রজন্ম শুরু হওয়ায় মিলেনিয়ালরা একটু বেশিই পিছিয়ে গেল।
কমবয়সিদের সঙ্গে মতান্তর হলে অনেকে কথাচ্ছলেই বলে থাকেন, ‘যুগের হাওয়া’ বা ‘জমানা বদলাচ্ছে’। সেই হাওয়া বা বদল যে দুই প্রজন্মের ভাবনশক্তিকে অনেকটাই আলাদা করে দিতে পারে, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। এক প্রজন্মের ফারাকেই দুটো মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনার নানা রকম বিরোধ তৈরি হয়! সেখানে ২০২৫ সালে যে সব শিশু জন্মেছে, তাদের অনেকেই মিলেনিয়াল প্রজন্মের যাঁরা শেষ ধারক, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ২৯-৩১ বছর, তাঁদের সন্তান। সে ক্ষেত্রে বিটা এবং মিলেনিয়ালদের মধ্যে মানসিকতার ফারাক কি অনেকটাই বা়ড়বে? মিলেনিয়ালরাও কি মানিয়ে নিতে পারবেন বিটাদের সঙ্গে!
প্রতিটি প্রজন্মের মানসিকতা তৈরি হয় তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ভিত্তিতে। বিটার সঙ্গে অন্য প্রজন্মের মানসিকতার ফারাক কতটা হবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে প্রতিটি প্রজন্মের বিশেষত্বে নজর দিলে।
গ্রেটেস্ট জেনারেশন (১৯০১-১৯২৭): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আবার বিশ্বজোড়া মহামন্দার সময়ও। ওই সময়ে যাঁরা জন্মেছিলেন, তাঁদের যেমন আর্থিক দুর্ভোগ এবং নানা রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, আবার তাঁরা সব ছেড়েছু়ড়ে যুদ্ধক্ষেত্রেও গিয়েছেন দেশের হয়ে লড়তে। সেই সব বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই ‘গ্রেটেস্ট’ বা মহান তকমা পেয়েছে ওই প্রজন্ম।
সাইলেন্ট জেনারেশন (১৯২৮-১৯৪৫): ঠিক পরের প্রজন্মেই অনেক তফাত। এঁরা যুদ্ধ নয়, শান্তির অনুবর্তী। তাই নিয়ম মেনে চলেছেন। প্রথা ভাঙার প্রয়োজন বোধ করেননি। পরিশ্রম, আনুগত্য এবং স্বাচ্ছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিপ্লবে উদ্যোগী হননি। তাই নাম ‘সাইলেন্ট’ অর্থাৎ, নীরব।
বেবি বুম জেনারেশন (১৯৪৬-১৯৬৪): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ধীরে ধীরে আর্থিক বিকাশ শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। সেই আবহে জন্ম ‘বেবি বুম’ প্রজন্মের। তাঁদের চরিত্র অনেকটাই ইতিবাচক। তাঁরা অনেক বেশি উচ্চাশী, তাঁদের ব্যক্তিবোধও বেশি। চাঁদে মানুষ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বেবি বুমারেরা, আবার ভিয়েতনামের যুদ্ধও দেখেছেন। দেখেছেন নাগরিক অধিকারের জন্য পৃথিবীজোড়া আন্দোলন।
জেনারেশন এক্স (১৯৬৫-১৯৮০): স্বাধীনচেতা প্রজন্ম। চাকরির থেকে ব্যবসার দিকে ঝোঁক বাড়ে এঁদের সময়ে। আবার বিবাহবিচ্ছেদের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। রূপান্তরকামীদের অধিকারের আন্দোলনও মাটি পায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে এঁদেরই প্রথম পরিচয়।
মিলেনিয়াল বা জেনারেশন ওয়াই (১৯৮১-১৯৯৬): ইন্টারনেটের বিস্তারে বিশ্বজগৎকে হাতের মুঠোয় দেখা, আবার একই সঙ্গে পুরনো প্রজন্মের সামাজিকতা বোধের মিলমিশ রয়েছে মিলেনিয়ালদের মধ্যে। ৯/১১ হামলা, রিসেশন অনেক কিছুই দেখেছে এই প্রজন্ম। দেখেছে সমাজমাধ্যমের উত্থানও। তবে মিলেনিয়ালরা বরাবর কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসম্য বজায় রাখতে পেরেছেন বলে মনে করেন সমাজতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের মতে, সেটা সম্ভব হয় তাঁদের মূল্যবোধের জন্যই।
জেনারেশন জ়েড বা আই জেন বা জেন জ়ি (১৯৯৭-২০১০): স্মার্টফোন আর সমাজমাধ্যমে প্রায় ডুবে থাকা প্রজন্ম। তারা রাজনীতির কথা জানে, সমাজের কথাও জানে, আবার ব্যবসায়িক বুদ্ধিও তুখোড়। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বুঝিয়েছে এরাই। কোভিড অতিমারির পরের সমাজ সম্পর্কে এদের ধারণা অনেকটা পাল্টে দিয়েছে।
জেনারেশন আলফা (২০১০-২০২৪): এখনও পর্যন্ত এরা ছোটই। তবে এদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে এআই আর স্মার্ট ডিভাইস। ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, পারসোনালাইজ়়ড লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির সঙ্গে নিয়ে বে়ড়ে উঠছে এরা।
জেনারেশন বিটা (২০২৫-২০৩৯): গ্রিক অক্ষর বিটা থেকেই ধার করা হয়েছে নাম। জেন বিটার অতি প্রযুক্তি নির্ভরতার কথা মাথায় রেখেই যে ওই নাম বেছে নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কারণ, তারা জন্ম নিল এমন একটা সময়ে, যেখানে সব কিছুই ডিজিটাল। যে জমানা সব সময়ে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে জুড়়ে আছে। পড়া, লেখা, কাজকর্ম— সবই হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। সামাজবিদ মার্ক ম্যাকক্রিন্ডল মনে করছেন, বিটারা নিজেদের ডিজিটাল পরিচয়কে অনেক বেশি নিরাপদ করতে পারবে। আবার ডিজিটাল কাজে আরও বেশি করে ভাবনাও মিশিয়ে দিতে পারবে। এ ছাড়া, জেন বিটার মধ্যে সবাইকে নিয়ে চলার গুণও থাকবে বলে জানাচ্ছেন মার্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy