—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের বাজারে পরিবেশসংক্রান্ত উদ্বেগগুলি কি নিতান্তই অপাঙ্ক্তেয়? নির্বাচনী প্রস্তুতি-অন্তে দেখা গেল, পরিবেশের খাতায় পড়ে রয়েছে বিরাট শূন্য। শুধু এই নির্বাচন নয়, প্রতি নির্বাচনের পূর্বে এই রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক কোন্দল, ক্ষমতা দখলের উৎকট আগ্রাসন, মারামারি, প্রাণহানি যত গুরুত্ব পায়, তার কণামাত্র জোটে না পরিবেশ সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখার সুসংহত পরিকল্পনা রূপায়ণে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য, কারণ গ্রামাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন এবং গ্রামবাসীদের ‘ভাল থাকা’ নিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনেরই বহন করার কথা। তাই পরিবেশ বিষয়ে এই সম্পূর্ণ অবজ্ঞা ও অবহেলা বিস্ময়কর, আতঙ্কজনক।
উন্নয়নের সংজ্ঞা শুধুই রাস্তা, বাঁধ, পানীয় জলের মতো হাতেগোনা বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের সম্পর্কটি নিবিড়। তাই পরিবেশকে বাদ দিয়ে সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবোচিত নয়। সাম্প্রতিক তথ্য ইঙ্গিত করছে, পরিবেশের প্রতি যথেচ্ছাচার যত বাড়ছে, ততই বিপন্ন হচ্ছে দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবিকা। নদীখাত দখল করে অবাধে চলছে চাষবাস, বাড়িঘর নির্মাণ, ইটভাটা তৈরি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষরা। অপরিমিত ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার ফলে পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ছে আর্সেনিক দূষণের পরিমাণ। সমস্যা আরও আছে। ২০২২ সাল অবধি বাংলার ৪১৪৬১টি গ্রামের মধ্যে মাত্র ১১৯টিতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তরল বর্জ্যের ক্ষেত্রে চিত্রটি আরও করুণ। জঞ্জাল জমে থাকা, বেআইনি এবং অপরিকল্পিত নির্মাণ শহরের মতো গ্রামাঞ্চলেও মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যধিক বৃদ্ধি করেছে। প্রতি বছর উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। অথচ, নির্বাচনের আগে শাসক-বিরোধী পারস্পরিক কুৎসা যত চলে, এই সমস্যাগুলি নিয়ে তত আলোড়ন দেখা যায় না। যেমন, পাথর খাদান, ফসলের গোড়া পোড়ানো, বাঁধ-রাস্তা নির্মাণের নামে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার মতো পরিবেশ-বিরোধী কাজ চলতে থাকে, বিরোধী রাজনীতিও গা করে না, সাধারণ মানুষও নয়।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতার অভাবও বড় সমস্যা। নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে তৃণমূল স্তর থেকে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ কি আদৌ অগ্রসর হয়েছে? বহু ক্ষেত্রে শহরের দূষণকারী বর্জ্য জমা করার জন্য গ্রামাঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয়। কলুষিত হয় গ্রামের মাটি, জল, বাতাস। এই প্রবল দূষণ ঠেকাতে কী ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন? তথ্য বলছে, জলবায়ুর নিরিখে ভারতের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলি, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং উত্তরবঙ্গ বিপন্নতার নিরিখে সর্বাগ্রগণ্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরিবেশের প্রসঙ্গটি আলোচনা এবং তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার প্রয়োজন বুঝতে অসুবিধা হয় না। অথচ, সাম্প্রতিক নির্বাচনেও শাসক দল তার পরিচিত উদাসীনতা বজায় রাখল, বিরোধীরাও তাকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তুললেন না। বস্তুত এ রাজ্যে সর্ব স্তরে পরিবেশ বিষয়টি যে কত গুরুত্বহীন, নির্বাচনের প্রচারপর্ব তা বুঝিয়ে দিল আরও এক বার। তবে কিনা, অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy