Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Saif Ali Khan Attack

অনধিকার প্রবেশ

মুম্বইয়ের মতো শহরে নাগরিকের জীবনের সুরক্ষা, বিশেষত এক জন চিত্রতারকার নিরাপত্তায় মোড়া নিজের বাড়ির মধ্যেই জীবনের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:২৬
Share: Save:

নিশুতি রাতে মুম্বইয়ের বহুতলে অজানা দুর্বৃত্তের প্রবেশ, এবং হতচকিত গৃহকর্তার মুখোমুখি পড়ে তাঁকে নৃশংস ভাবে ছুরি চালিয়ে অবলীলায় পালিয়ে যাওয়া— শুধু এইটুকুই ঘটনা ও বিপদ দুইয়ের ভয়াবহতা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। গত সপ্তাহে মুম্বইয়ের এই ঘটনায় যে হইচই পড়েছে তার আরও কারণ গৃহকর্তার পরিচয় চিত্রতারকা সেফ আলি খান, এবং পরবর্তী ঘটনা-পরম্পরায় দ্বিবিধ ‘অপারেশন’: একটি মুম্বইয়ের হাসপাতালে চিকিৎসকদের, অন্যটি পলাতক দুর্বৃত্তের খোঁজে মুম্বই পুলিশের। অভিনেতা আপাতত বিপন্মুক্ত, তবে যে ভাবে তিনি আক্রান্ত হলেন তা জেনে শিউরে উঠতে হয়, অন্তত দু’টি ছুরিকাঘাত প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল মেরুদণ্ডে। মুম্বইয়ের মতো শহরে নাগরিকের জীবনের সুরক্ষা, বিশেষত এক জন চিত্রতারকার নিরাপত্তায় মোড়া নিজের বাড়ির মধ্যেই জীবনের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওঠা দরকারও: যে নিরাপত্তাবহুল বহুতলের সিঁড়ি দিয়ে তো বটেই, জলের পাইপের ‘ডাক্ট’ বেয়েও রাতবিরেতে অচেনা লোক উঠে পড়তে পারে তা যে নিশ্ছিদ্র লৌহবাসর নয়, প্রমাণিত।

আক্রান্তের ‘হাই প্রোফাইল’ পরিচয়ের জন্যই নয়, পরিস্থিতির সামগ্রিকতার বিচারেও এ ঘটনায় উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ। একটি কারণ যদি হয় নাগরিকের নিরাপত্তায় বড়সড় ফাঁক, ততোধিক বড় কারণটি হল এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি— যে প্রবণতা এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে মুম্বইয়ে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে। পুলিশের তৎপরতায় মূল অভিযুক্ত ধরা পড়েছে, এবং তার নাম ঠিকানা পেশা ইত্যাদির সূত্রে উঠে আসছে প্রতিবেশী দেশ, অনুপ্রবেশ, সংখ্যালঘু ইত্যাদি শব্দ। পুলিশের তরফে যেই অভিযুক্তের প্রকৃত পরিচয়, নাম ভাঁড়িয়ে মুম্বইয়ে থাকা ইত্যাদি তথ্যগুলি প্রকাশ্যে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে নেতা-মন্ত্রীদের মন্তব্যের ফুলঝুরি। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, অভিযুক্তের পরিচয়েই তাঁর অপরাধপ্রবণতার প্রমাণ, এর সঙ্গে মুম্বইয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কোনও যোগ নেই। শিবসেনার এক সাংসদ এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্রে কাজ করতে আসা প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করা দরকার।

এমন হাড় হিম করা অপরাধমূলক ঘটনার যথাযথ পুলিশি তদন্ত অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেই তদন্ত এবং পরবর্তী বিচারপ্রক্রিয়াও যেন রাজনীতির পাকেচক্রে না পড়ে বা তার দ্বারা প্রভাবিত না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার আরও বেশি করে। এই মুহূর্তে মুম্বইতে তা হচ্ছে বলে মনে হয় না। সংশয় জাগে, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের নাম পরিচয় ইত্যাদি তথ্য যে ভাবে মুম্বই পুলিশ ফলাও করে ঘোষণা করল, তাতে রাজনীতির কারবারিদের হাতেই তুরুপের তাসটি সযত্নে সাজিয়েগুছিয়ে তুলে দেওয়া হল কি না। ভারতে এই প্রবণতাটি পুলিশ-প্রশাসন ও রাজনীতিকদের দ্বারা বহুআচরিত, এবং এই দুইয়ের যোগসাজশেই অনেক সময় একটি ঘটনার ভবিষ্যৎ কার্যপ্রণালী নির্ধারিত হয়। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও তা আদৌ উড়িয়ে যাওয়া যায় না: অনুপ্রবেশ, সংখ্যালঘু ইত্যাদি স্পর্শকাতর ধারণাগুলি রাজনৈতিক দল ও নেতারা নিজেদের স্বার্থেই লুফে নেবেন, পুলিশও সেই অবসরে একটু দম ফেলার ফুরসত পাবে— প্রখ্যাত চিত্রতারকার উপর হামলার অভিঘাত তাদের উপরেও কম নয়। দুর্বৃত্তের অনধিকার প্রবেশ যেমন ভয়ঙ্কর, যে কোনও ঘটনাতেই রাজনীতির অনধিকার প্রবেশও কি সমান বিপজ্জনক নয়?

অন্য বিষয়গুলি:

Saif Ali Khan Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy