E-Paper

পড়াশোনার বদলে

গত আড়াই বছর ধরে মুর্শিদাবাদের তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না, কারণ তাদের বিদ্যালয় আপাতত গৃহহীনদের ‘অস্থায়ী’ ঠিকানা।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:০৬
Share
Save

বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে আড়াই বছর সময়কালটি হেলাফেলার নয়। শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ার পথে যেখানে প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে গত আড়াই বছর ধরে মুর্শিদাবাদের তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না, কারণ তাদের বিদ্যালয় আপাতত গৃহহীনদের ‘অস্থায়ী’ ঠিকানা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গঙ্গার ভাঙনে মুর্শিদাবাদের সমসেরগঞ্জের বহু পরিবার গৃহহারা হয়। তাঁরা প্রতাপগঞ্জ জুনিয়র হাই স্কুল, প্রতাপগঞ্জ প্রাইমারি স্কুল, এবং লোহারপুর সেকেন্ডারি এডুকেশন সেন্টারকে অস্থায়ী বাসস্থান বানানোর জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়েছিল কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু সেই সময় থেকেই প্রায় ৩৮টি পরিবার এই বিদ্যালয়গুলিতে থেকে গিয়েছেন। স্থানাভাবের কারণে একটিমাত্র ঘরে সমস্ত ক্লাস করাতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ, নতুন ভর্তির সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সংক্ষেপে, স্কুলগুলির অস্তিত্বই এখন বিপন্ন, কারণ অভিভাবকরা সেগুলিকে সন্তানের পঠনপাঠনের যোগ্য মনে করছেন না।

অথচ, গঙ্গার ভাঙনে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, চাষের জমি তলিয়ে যাওয়া মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা নয়, যা দিয়ে প্রশাসনের এ-হেন অ-প্রস্তুতির যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দর্শানো যায়। ২০২৩ সালে এই সমসেরগঞ্জ পরিদর্শন করেই গঙ্গা ভাঙন রুখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, এই টাকায় ভাঙনের পাড় সারানো যাবে। যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাঁদের পাট্টা দেওয়া হবে। অতঃপর সরকারি সাহায্যে ভাঙন-দুর্গতরা অন্যত্র সরে যাবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা যে স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলির ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি, তা স্পষ্ট। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা সরকারের দেওয়া জমি পেয়েছেন, কিন্তু সেই জমিতে বাড়ি তোলার মতো অর্থ তাঁদের নেই। মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, এর সমাধানের ব্যবস্থা করা স্থানীয় প্রশাসনের কর্তব্য। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রামের পাকা স্কুলবাড়িটিতে আশ্রয় নেওয়া তুলনায় নিরাপদ ঠিকই, কিন্তু সেই ব্যবস্থা নিতান্তই ‘অস্থায়ী’ হওয়া কাম্য। দুর্যোগ নিয়মিত ঘটতে থাকলে বা দীর্ঘ দিন স্থায়ী হলে দুর্গতদের জন্য নির্দিষ্ট স্থায়ী পরিকাঠামোযুক্ত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার বিকল্প হতে পারে না।

স্থানীয় প্রশাসনের এই নির্লিপ্তি সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার প্রতি রাজ্যের সরকারি অবহেলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ রাজ্যে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের উপযুক্ত পরিবেশই নেই। নেই উপযুক্ত ক্লাসঘর, পরিকাঠামো, ভদ্রস্থ শৌচালয় বা খাওয়ার জায়গা। বহু বিদ্যালয়ে বর্ষায় ক্লাস বন্ধ রাখতে হয় ভাঙা ছাদের কারণে। তদুপরি রয়েছে যে কোনও সরকারি কাজে, এমনকি নির্বাচন কালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার জায়গা হিসাবে বিদ্যালয়গুলিকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার অদ্ভুত প্রবণতা। এমনিতেই ছুটির দাপটে সরকারি ও সরকারপোষিত বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন শিক্ষার কোণঠাসা দশা, তার সঙ্গে এই বাৎসরিক হরেকরকম্বা যুক্ত হলে শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? এক বড় সংখ্যক পড়ুয়া আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। তাদের অভিভাবকদের হয় নীরবে এই শিক্ষাহীনতাকে মেনে নিতে হয়, নয় সন্তানের শিক্ষায় ইতি টানতে হয়। এই চিত্র সংবিধান-বর্ণিত শিক্ষার অধিকারের সঙ্গে আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ganga Erosion Schools

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।