গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ৬ জন সেনাকর্তার একটি প্রতিনিধি দল কোনও ঘোষণা ছাড়াই ৬ দিনের পাকিস্তান সফর সেরে শনিবার ঢাকায় ফিরেছে। পিঠোপিঠি জবাবি সফরে পাকিস্তানের চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছে বলে সূত্রের খবর। দু’দেশের সরকারি মাধ্যমে এই সফর নিয়ে একটিও কথা নেই। তবে এই সফরের খবর পৌঁছনোর পরে ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে দু’টি বিষয়। প্রথমটি সফর নিয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা। দ্বিতীয়টি পাক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে আসা সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের পরিচয়, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান তিনি। দলে আইএসআই-এর আরও এক উচ্চপদস্থ কর্তাও রয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি আরব আমিরশাহির একটি উড়ান সংস্থার বিমানে (নম্বর ইকে৫৮৬) দুবাই থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টার কিছুটা পরে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন বলে সূত্রের খবর। আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে দলটিকে স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মেহদি। সূত্রের খবর, পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে মালিক ছাড়া রয়েছেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল অ্যানালিসিস (ডিজি এ) মেজর জেনারেল শহিদ আমির আফসার। এ ছাড়া রয়েছেন মেজর জেনারেল আলম আমির আওয়ান এবং এসএসজি-র কর্তা মুহাম্মদ উসমান লতিফ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালিত পাঁচতারা হোটেল র্যাডিসন ব্লু-তে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে পাকিস্তানি দলটির। বাংলাদেশের সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া গাজীপুরে সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন এঁদের সফরসূচিতে রয়েছে বলে খবর।
পাকিস্তানি বাহিনীর এই সফর নিয়ে বাংলাদেশ সেনাদের জনসংযোগ বিভাগ আইএসপিআর-এর কোনও ঘোষণা নেই। যেমন ছিল না বাংলাদেশের সেনাকর্তাদের পাকিস্তান সফর নিয়েও। দলটি ফিরে আসার দু’দিন পরে বাংলাদেশের আইএসপিআর বিবৃতি দিয়ে জানায়, ১৩ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সেনাকর্তা। অনেকের ধারণা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দফতর ডিজিপিআর সে দেশে সফরে যাওয়া বাংলাদেশি সেনাকর্তাদের ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার পরে বাধ্য হয়ে এই বিবৃতি দিতে হয়েছে বাংলাদেশের আইএসপিআর-কে। তবে আইএসআই কর্তাদের এই বাংলাদেশ সফর নিয়ে ডিজিপিআর বা আইএসপিআর— সকলেরই মুখে কুলুপ। ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই সফরের বিষয়ে খবর প্রকাশ হলে তাদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করার চেষ্টাও হতে পারে।
তবে এই সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে কৌতূহলী ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। ভারতকে জবাব দিতে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের কথা বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক প্রভাবশালী শিক্ষক ও সে দেশের কয়েক জন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। ভারতের এক প্রাক্তন কূটনীতিকের মতে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আদতে জামায়াতে ইসলামী ও কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের হাতে পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের পাকিস্তান প্রেম ‘বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে’। আইএসআই-প্রধানের সফর প্রমাণ করে, পাকিস্তান এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ করতে রাজি নয়।
সুযোগ কী ভাবে কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান? সূত্রের খবর, বাংলাদেশের ক্ষেপণাস্ত্র প্রীতির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে গাজীপুরের সমরাস্ত্র নির্মাণের কারখানায় তাদের ‘শাহীন’ সিরিজ়ের ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতেও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে পাকিস্তান। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি প্রথাগত অস্ত্রের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র বহনেও সক্ষম। বাংলাদেশের হাতে পাকিস্তানি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে পূর্ব ও পশ্চিম— দুই সীমান্তেই চাপে থাকবে ভারত। ১৯৭০-এপাকিস্তান আমলে গাজীপুরের সমরাস্ত্র কারখানাটি নির্মাণের পরে কাজ শুরু করলেও ১৯৭১-এর যুদ্ধে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩০৩ একর জায়গার উপরে এই বিশাল কারখানাটি পরে ধাপে ধাপে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। পাকিস্তানি দলটি এই কারখানা পরিদর্শন করবে সম্ভবত সেখানে ক্ষেপণাস্ত্রনির্মাণের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রশ্ন— এই জন্যই কি এই সফর নিয়ে এত ঢাক-ঢাক গুড়-গুড়?
ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কয়েকশো জঙ্গি জেল থেকে মুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই তাদের পুনর্গঠনের খবর আসছে ভারতের গোয়েন্দাদের কাছে। আনসারুল্লা বাংলা টিমের চাঁই মৌলানাজসিমউদ্দিন রহমানি কারামুক্তির পরে জঙ্গি সংগঠনগুলির পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশে নতুন একটি ‘হাব’ বা ঘাঁটি গড়ে তুলেছে আইএসআই। জঙ্গি-জেহাদিদের জড়ো করে সংগঠন গড়ার পাশাপাশি তাদের হাতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক যেমন তুলে দেওয়া হচ্ছে, চলছেপ্রশিক্ষণও। ভারতের নানা জায়গায় ‘ছুপা রুস্তম’ বা ‘স্লিপার সেল’ গুলিকেও সচল করাহচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আসা বেশ কিছু জেহাদি অসম ও পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের পরে ধরা পড়েছে। ভারত সরকার সীমান্তে প্রহরা জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতে আইএসআই-প্রধান আসিম মালিকের সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy