প্রতীকী চিত্র।
২০২৪-এর অলিম্পিক গেমস হইবে প্যারিসে। আয়োজকরা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নিকট আবেদন করিয়াছেন, ব্রেকডান্স-কে অলিম্পিকসে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। তাহাতে নাকি এই ক্রীড়ার আসরটি অনেক নাগরিক ও শিল্পিত হইয়া উঠিবে। শুনিয়া অনেকেরই নিশ্চয় মূর্ছা যাইবার উপক্রম হইবে। কারণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রীড়ানুষ্ঠান ধরা হয় যেটিকে, যেখানে পদক পাইলে মানুষ সটান ইতিহাসে ঢুকিয়া পড়েন, সেইখানে কিনা আঁকিয়া-বাঁকিয়া নৃত্য হইবে, তাহাও আবার ধ্রুপদী নৃত্য নহে! সঙ্গীত বা নৃত্য একটি ক্রীড়ানুষ্ঠানের অঙ্গ হইতে পারে, কেবল তাহার উদ্বোধনী মঞ্চে অথবা সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। জবাবে কেহ বলিতে পারেন, ব্রেকডান্স করিতে প্রভূত শারীরিক নৈপুণ্য এবং তাল ও লয়ের জ্ঞান প্রয়োজন, ঠিক যেমন হয় ‘রিদমিক জিমন্যাস্টিকস’ বা ‘সিনক্রোনাইজ়ড সুইমিং’ (যাহাকে পূর্বে ‘ওয়াটার ব্যালে’ বলা হইত) ক্রীড়াগুলির ক্ষেত্রে। সেইগুলিতে বাজনার সহিত শারীরিক নৈপুণ্য দেখাইয়া যদি অনেকে পদক জিতিতে পারেন, ব্রেকডান্স-শিল্পীরা তাহা পারিবেন না কেন? কিন্তু তাহা হইলে ভরতনাট্যমের শিল্পীরা প্রশ্ন তুলিতে পারেন, তাঁহারা বাদ পড়িলেন কোন অপরাধে? কিন্তু তাহার পূর্বে প্রশ্ন উঠিবে, ক্রীড়ার মধ্যে সহসা শিল্পের অনুপ্রবেশ কেন?
অনুপ্রবেশ অবশ্য বহু পূর্বেই ঘটিয়াছে। ১৯০৬ সালে প্যারিসে একটি সভা হইয়াছিল, আইওসি-র সদস্যেরা এবং বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়, অলিম্পিকসে ক্রীড়ার পাশাপাশি শিল্পেরও প্রতিযোগিতা হইবে। স্থাপত্য, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা ও ভাস্কর্য— এই পাঁচটি বিভাগের শিল্প আহ্বান করা হইবে প্রতিযোগিতায়, এবং পুরস্কার দেওয়া হইবে। শিল্পগুলি অনুপ্রাণিত হইতে হইবে ক্রীড়া দ্বারা। ১৯১২ সালে সুইডেন অলিম্পিকসে এইটি শুরু হয়, যদিও মাত্র ৩৫ জন শিল্পী অংশ লইয়াছিলেন। প্যারিসে যখন ১৯২৪ সালে অলিম্পিকস হইল, ১৯৩ জন শিল্পী অংশ লইলেন, এমনকি তিন জন সোভিয়েট শিল্পীও, যদিও সোভিয়েট ইউনিয়ন অলিম্পিকসে অংশ লয় নাই, এইটি ‘বুর্জোয়া উৎসব’ বলিয়া। ১৯২৮-এ আমস্টারডাম অলিম্পিকসে ১১০০ শিল্পবস্তু প্রদর্শিত হইল পুর-জাদুঘরে, তাহার মধ্যে সাহিত্য সঙ্গীত ও স্থাপত্যের শিল্পগুলি ছিল না। ১৯৩২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকসে যখন এই প্রদর্শনী হইল, দেখিতে আসিলেন ৩৮৪,০০০ মানুষ, যদিও এই অলিম্পিকসে ক্রীড়া-অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল অন্যান্য অলিম্পিকসের তুলনায় কম। কিন্তু ১৯৪৯-এ, আইওসি-র এক সভায় বলা হইল, অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা প্রায় প্রত্যেকেই পেশাদার, অলিম্পিকসের যে অপেশাদার লইয়া আসর আয়োজনের আদর্শ, তাহা ইহার দ্বারা ব্যাহত হইতেছে। অতএব প্রতিযোগিতা বাতিল করিয়া কেবল প্রদর্শনী করিয়া দেখা যাইতে পারে। কোনও পুরস্কার বা পদক দেওয়া হইবে না। ইহাতে প্রবল বিতর্ক বাধিয়া যাইল, ১৯৫২ সালে যদিও সিদ্ধান্ত হইল শিল্প প্রতিযোগিতা করিবার, শেষমেশ একটি প্রদর্শনীই কেবল হইল (আয়োজকরা বলিয়াছিলেন এখন প্রতিযোগিতা আহ্বানের যথেষ্ট সময় নাই)। ১৯৫৪ সালে সিদ্ধান্ত হইল, প্রদর্শনীই হইবে, প্রতিযোগিতা নহে। তাই আজ নৃত্যকে অলিম্পিকসে ডাকিয়া আনিলে, তাহা ঐতিহ্যবিরহিত ঘটনা হইবে না।
কিন্তু ইতিহাসে একটি ব্যাপার আছে বলিয়াই তাহার পরম্পরা রক্ষা করিতে হইবে, ইহা আবশ্যিক নহে। আজ যদি ব্রেকডান্স ঢুকিয়া পড়ে, কাল প্রবল তর্কাতর্কি করিয়া ‘মিউজ়িকাল চেয়ার’কেও অলিম্পিকসের অন্তর্গত করিবার দাবি উঠিতে পারে। আসলে ফ্রান্সের শিল্প-পক্ষপাত ও নূতন চমক দিবার দায়, দুইটিই অতি প্রকট ও উজ্জ্বল। তাঁহারা হয়তো সামান্য রসিকতা ও হইহইয়ের তরঙ্গ তুলিবার জন্য প্রস্তাবটি সাজাইয়াছেন। বা হয়তো ক্রীড়ার সংজ্ঞাই ইহাতে বদলাইয়া যাইবে। ক্রীড়া যদি হয় কতিপয় নিয়ম অনুযায়ী শরীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষমামণ্ডিত আন্দোলন (তাহা হইলে অবশ্য কুস্তি বা বক্সিং-এর সামান্য অসুবিধা হইতেও পারে), তবে কোন দিন যৌন সঙ্গমও সসম্মানে অলিম্পিকসে স্থান করিয়া লইতে পারে। দলে দলে কণ্ঠসঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা যে দিন অলিম্পিকস যাইবার জন্য বিমান ধরিবেন, সেই দিন বিনোদন ও ক্রীড়া মিশিয়া আধুনিক প্রবণতার চূড়ান্ত জয়ধ্বজা উত্তোলিত করিবে। শাহরুখ স্বর্ণপদক না পাইলে ভারতীয়রা ধর্নায় বসিবেন, তাহাতে সন্দেহ কী?
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
ভাষা দিবসে অনেকেই বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক কিছু বললেন। কারও কারও বলাবলি ফেসবুকে আপলোড করা হল, আর তার নীচে ‘কমেন্ট’ পড়েই বোঝা গেল, বাংলা ভাষার আজ যত দুর্দিনই হোক, অশিষ্ট বাংলার চূড়ান্ত সুসময়। পশ্চিমবাংলায় কল্কে পেতে গেলে ইংরেজি বলতে তো হবেই, হিন্দিও, কিন্তু গায়ের ঝাল ঝাড়তে বাংলা গালাগালির বিকল্প বাঙালির কাছে নেই। যত দিন যাচ্ছে, ঝাল বাড়ছে। তাই দুশ্চিন্তার প্রশ্নই ওঠে না, বাংলা ভাষার নিশান উচ্চে তুলে ওই চলেছে স্ল্যাংবং!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy