Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

স্বার্থ ও ভীতি

কেবল ইরান হইতে তৈল আমদানি নহে, যে চাবাহার বন্দর ইরানি তেলের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া তৈরি হইতেছে, তাহার নির্মাণ অব্যাহত রাখিবার প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক। দুই দিকে দুই পরস্পরবিদ্বেষী দেশকে লইয়া ভারত কী ভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে, নানা দেশ তাহা লইয়া উৎকণ্ঠিত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। (ইনসেটে) ইরান প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। ছবি: রয়টার্স।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। (ইনসেটে) ইরান প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

আর পক্ষকাল মাত্র বাকি, ইরানের উপর নূতন নিষেধাজ্ঞা বহাল হইতে চলিয়াছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পরের প্রতি ভয়ানক হুমকি বর্ষণ করিতেছেন। ট্রাম্প বলিতেছেন, ইরান এমন শিক্ষা পাইবে যাহা ইতিহাসে কখনও ঘটে নাই। রৌহানি বলিতেছেন, আমেরিকা ইরানের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলে তাহা হইবে সব যুদ্ধের বাড়া। এই সবের সূত্র: মে মাসে মার্কিন সরকারের বার্তা— ইরান পরমাণু কার্যক্রম সমূলে প্রত্যাহার না করিলে তাহার কপালে জুটিবে উপরি নিষেধাজ্ঞা। ইরান মাথা নত করে নাই, সুতরাং দ্বিতীয় সম্ভাবনার দিকেই আগাইতেছে ঘটনাপ্রবাহ। মাঝখান হইতে ভারতের উপরও প্রবল মার্কিন চাপ, যাহাতে ইরান-ভারত লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। এমন অবস্থায় ভারত জানাইল, ইরানের সহিত ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগের মতোই থাকিবে। বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভি কে সিংহের মন্তব্য: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত তৃতীয় দেশের কথা মাথায় রাখিয়া চলে না। কেবল ইরান হইতে তৈল আমদানি নহে, যে চাবাহার বন্দর ইরানি তেলের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া তৈরি হইতেছে, তাহার নির্মাণ অব্যাহত রাখিবার প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক। দুই দিকে দুই পরস্পরবিদ্বেষী দেশকে লইয়া ভারত কী ভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে, নানা দেশ তাহা লইয়া উৎকণ্ঠিত।

যেমন জার্মানি। ইতিমধ্যেই জার্মান তরফে ঘোষিত হইয়াছে যে, ভারত যেন তাহার সার্বভৌমতার নীতিতে দৃঢ় থাকিয়া ইরানের সহিত পূর্বের সম্পর্ক রক্ষা করিয়া চলে। এই বিষয়ে জার্মান মাথাব্যথার কারণ কী, সেই প্রশ্ন উঠিতে পারে। উত্তরে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকার নূতন কূটনীতির মধ্যে যে ঔদ্ধত্য, অন্যান্য দেশের নীতি পরিবর্তনের জন্য যে অস্বাভাবিক চাপ, তাহা ইউরোপের প্রধান দেশগুলির বিলকুল না-পসন্দ। নেটো ও ইউরোজ়োন লইয়া ট্রাম্পের অবস্থানও জার্মানি-সহ মধ্য ইউরোপের দেশগুলিকে অপ্রসন্ন করিয়াছে। সম্প্রতি ইউরোপেরই মাটিতে দাঁড়াইয়া ট্রাম্প অনাবশ্যক ভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুক্তকণ্ঠ গুণগান গাওয়ায় সব মিলিয়া ইউরোপে ট্রাম্প-অপ্রীতির মেঘটি এখন ঘোর বর্ষার মতো ঘন হইয়া আছে। সুতরাং ভারত যদি মার্কিন তর্জন অবহেলা করিয়া নিজের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করে, জার্মানির মতো দেশ খুশি হইবে।

অথচ ইরানের প্রতি এই দেশগুলির মনোভাব কোনও কালেই বিশেষ প্রীতিপূর্ণ নয়। ইরানের পরমাণু-কার্যক্রম ইহাদেরও অসন্তুষ্ট করিয়াছিল। কিন্তু ট্রাম্পের দমনভাবাপন্ন কূটনীতি অবশিষ্ট বিশ্বকে আপাতত নিজেদের কূটনৈতিক হিসাব সংশোধন করিতে বাধ্য করিতেছে। কথাটি ভারতকেও মনে রাখিতে হইবে। ভারতের পক্ষে আমেরিকাকে চটানো সহজ না হইতে পারে, কিন্তু নিজের স্বার্থরক্ষার্থে তাহা করিতে হইলে এই বৃহত্তর বিশ্ব কূটনীতির আবহেই তাহা করিয়া ফেলা ভাল। এখনই স্পষ্ট করা ভাল যে ইরানের তেল ভারতের কাছে কত জরুরি। পশ্চিম উপকূলের তৈল শোধনাগারগুলি ইতিমধ্যেই অনিশ্চয়তায় সমাচ্ছন্ন, কারণ তাহাদের বার্ষিক প্রয়োজনের ২৫ শতাংশ খনিজ তৈল ইরান হইতে আমদানি হয়। ভারতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেন এই শতাংশের হিসাবটিই ছাপ ফেলে। ওয়াশিংটন-ভীতি নহে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE