আর বাহ্যিক সৌন্দর্য নহে, অতঃপর নারীর সক্ষমতা এবং অন্তরের দীপ্তি বিচার করিয়াই নাকি ‘মিস অ্যামেরিকা’ পুরস্কার দেওয়া হইবে। সুইমিং কস্টিউম পরিয়া হাঁটিবার প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন প্রথাটি বাতিল করিয়া এই ঘোষণা করিল পুরস্কার কমিটি। পুরস্কারটি এখন নেহাতই তাৎপর্যহীন, ফলে এ হেন অর্থহীন কথাতেও কেহ বিশেষ আপত্তি জানান নাই। বাহ্যিক সৌন্দর্যই যদি মাপকাঠি না হয়, তবে আর মিস অ্যামেরিকা গোত্রের পুরস্কারের তাৎপর্য কী? গ্লোরিয়া স্টেনাম, জোন বায়াজ়, মেরি মর্গান বা সেরেনা উইলিয়ামসকে তাঁহাদের ‘অন্তরের সৌন্দর্য’-এর স্বীকৃতি পাইতে এমন কোনও বিউটি প্যাজেন্টের দ্বারস্থ হইতে হয় নাই। ভবিষ্যতেও হইবে না। মেধা বা দক্ষতার স্বীকৃতির ক্ষেত্র পৃথক। কাজেই, ‘মিস অ্যামেরিকা’-র ন্যায় প্রতিযোগিতা যাহা ছিল, তাহাই থাকিবে। অবশ্য, এই নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতাটিতে আর সুইম সুট পরিবার বাধ্যবাধকতা থাকিবে না। পরিবর্তনটিকে অনেকেই স্বাগত জানাইয়াছেন। কর্তৃপক্ষের মতে, বহু আমেরিকান নারীই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক হইয়াও জনসমক্ষে বিকিনি পরিধানে অরাজি থাকায় পিছাইয়া যাইতেন। এই বার তাঁহারাও সামিল হইতে পারিবেন। তবে, ১৯২১ আর ২০১৮-র মধ্যে দূরত্ব দুস্তর। গত এক দশকে যৌনতা এমনই সহজলভ্য হইয়াছে, নারীর অনাবৃত দেহের দর্শন এমনই সুলভ হইয়াছে যে তাহার জন্য আর কেহ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মুখ চাহিয়া থাকেন না। তবুও, মিস অ্যামেরিকার পরিচালকরা যে মুখ ফুটিয়া কথাগুলি বলিয়াছেন, তাহার গুরুত্ব কম নহে। ভোগবাদ যখন নারীকে সম্পূর্ণ পণ্য হিসাবেই দেখিতেছে, তখন খানিক ভিন্ন সুর শোনা গেলে ভালই।
তবে, এই ঘোষণাটির পিছনেও আছে বাজার। একদা যে বাজারের তাগিদে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিকিনি পরিহিত নারীদেহের প্রদর্শনী হইত, এখন সেই বাজারের তাগিদেই তাহা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হইতেছে। তাহার একটি কারণ, নারীর ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়াছে। নারী এখন আর শুধু পরোক্ষ উপভোক্তা নহে, প্রত্যক্ষ ক্রেতা। এবং, আর্থিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর সামাজিক বোধগুলিও অনেক বেশি বাঙ্ময় হইয়া উঠিয়াছে। অস্বীকার করা চলে না, পুঁজি এখনও নারীকে পণ্য হিসাবে দেখে— হরেক বিজ্ঞাপন সেই দর্শনের ছাপ বহন করে। কিন্তু, তাহার বিরুদ্ধে প্রতিরোধও হইতেছে। সেই প্রতিরোধ শুধু নারীর নহে, পুরুষেরও। একবিংশ শতাব্দীর ‘পুরুষ’ নারীর পণ্যায়নে গত শতাব্দীর পুরুষের তুলনায় কম আগ্রহী। ‘মিটু’-র ন্যায় সামাজিক আন্দোলন এই বাস্তবটিরই সূচক। সেই প্রতিরোধই জন্ম দিয়াছে এক ধরনের রাজনৈতিক শুদ্ধতার, যাহার দাবি মানিয়া ভোগবাদকে বলিতে হয়, বাহ্যিক সৌন্দর্য নহে, নারীর অন্তরের দীপ্তিই আসল। মিস অ্যামেরিকার হৃদয় পরিবর্তনের পিছনে ইহাই মূল চালিকাশক্তি, এমন একটি সন্দেহ হওয়া বিচিত্র নহে। কারণ, এই প্রতিযোগিতার যেটুকু তাৎপর্য বাঁচিয়া আছে, তাহা বাণিজ্যিক। প্রতিযোগিতাটিকে কেন্দ্র করিয়া বিজ্ঞাপন, বিপণন ইত্যাদি। যদি প্রতিযোগিতাটির মূল সুরই সমাজের অগ্রসর অংশটির নিকট অগ্রহণযোগ্য হয়, তবে তাহার বাণিজ্যিক গুরুত্বও বহুলাংশে হ্রাস পায়। অতএব, বিকিনির দিন গেল। বাজারের অনিচ্ছার সম্মুখে টিকিতে পারে, তাহার সাধ্য কী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy