লোপামুদ্রা মিত্র। —ফাইল চিত্র।
রসনা তৃপ্তির সম্ভাবনা দেখেই ভেড়াটাকে মেরে ফেলার ছক কষতে শুরু করেছিল নেকড়ে। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ার অজুহাত মিলছিল না। কোনও উপায় না দেখে ভেড়াটাকে নেকড়ে অবশেষে বলেছিল, কোনও এক অতীতে ওই ভেড়াটার বাবা জল ঘোলা করে তার জল খাওয়ায় বিঘ্ন ঘটিয়েছিল। তাই বাবার সাজা এখন সন্তানকেই পেতে হবে।
নেকড়ে আর ভেড়ার এ কাহিনি সুবিদিত। এই রূপক আসলে একটা সামাজিক নৈরাজ্যের গল্প বলে। এই রকম এক নৈরাজ্যের আভাসই পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খেজুরিতে। সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের সহকর্মীদের আটকে রাখলেন স্থানীয় এক ক্লাবের সদস্যরা। কোনও এক অতীতে অন্য কোনও এক শিল্পী অনুষ্ঠান করতে যাবেন বলেও যাননি। অতএব এ বার যে শিল্পীকে পাওয়া গিয়েছে, তাঁর সহকর্মীদেরই আটকে রাখা হোক। নেকড়ে আর ভেড়ার আখ্যানটার সঙ্গে বেশ খানিকটা যেন মিলে যাচ্ছে লোপামুদ্রাদের অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন: লোপামুদ্রাদের হেনস্থা, পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার
প্রশ্ন হল, নৈরাজ্যের এই বীজ কি নতুন বোনা হয়েছে? না, এ বীজ নতুন নয়। দেশ, কাল, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতির সীমানা তুচ্ছ করে নৈরাজ্যের একটা প্রবণতা সব সমাজেই থাকে। সেই প্রবণতাকে বশে রাখার জন্য সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দরকার পড়ে, প্রশাসনিক নিগড়ের প্রয়োজন হয়। সেই নিগড়ে শৈথিল্য এলেই স্বেচ্ছাচারিতা মাথাচাড়া দেয়।
তা হলে কি আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় শৈথিল্য এসেছে? জবাবটা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি সাধারণ নাগরিকের সমীহে যে বেশ টান পড়েছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সমীহে ঘাটতি পড়ার সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। যে ঘটনা সত্যিই ঘটেছে, তাকে সাজানো ঘটনা বানিয়ে দেয় এই প্রশাসন। ডেঙ্গির মতো এক ভয়ঙ্কর বাস্তবকে পরাবাস্তবের রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয় এখানে। প্রশাসন প্রমাণ করতে চায়, সবই আসলে কল্পকথা।
আসলে বাস্তবটা যখন স্বস্তিদায়ক হয় না, তখনই এমন কল্পকথার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর সে কল্পরাজ্যের আস্তিন থেকে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলতে থাকে নৈরাজ্যের উপাদানগুলো।
পুলিশি হস্তক্ষেপেই উদ্ধার হয়েছেন আটকে পড়া শিল্পীরা শেষ পর্যন্ত। কিন্তু পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ল কেন? খেয়াল-খুশিতে যা খুশি করে ফেলা যায়, এমনটা খেজুরির ওই ক্লাবের সদস্যদের মনে হল কেন? উত্তর পাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আত্মবিশ্লেষণ করুক প্রশাসন, কল্পরাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবটার মুখোমুখি দাঁড়াক প্রশাসন। এখনও যদি বাস্তবটাকে স্বীকার করার সাহস না দেখানো যায়, তাহলে কল্পরাজ্যের আড়াল খুঁজে নিয়ে এই নৈরাজ্যবাদীরা দাপট আরও বাড়াবে। তেমন একটা দিন সম্ভবত আমরা কেউই দেখতে চাই না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy