লন্ডনে লন্ডভন্ড, বা কল্পবিজ্ঞান-সিনেমা
লন্ডন এখন প্রেতপুরী। সব অন্ধকার। থিয়েটার, গ্যালারি, অপেরা হাউসগুলোর আলো নিভেছে। পাব-রেস্তরাঁ খাঁ-খাঁ করছে। ঠিক যেন কোনও কল্পবিজ্ঞান-সিনেমার দৃশ্য। ব্রিটিশ মিউজ়িয়ামের দালানে আজ শুধুই নৈঃশব্দ্য। মিশরের মমি, বুদ্ধমূর্তি, এলগিন মার্বেলস— সবই ফাঁকা ঘরে নিঝুম দাঁড়িয়ে। থেমে গিয়েছে জনপ্রিয় থিয়েটার-প্রযোজনা ‘ফ্যান্টম অব দি অপেরা’-র শো। শুরু হয়েই বন্ধ হয়েছে হ্যারি পটার খ্যাত ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ অভিনীত স্যামুয়েল বেকেট-এর ‘এন্ডগেম’। বিবিসি-র শোগুলোর শুটিং বন্ধ। জনপ্রিয় শো ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’-এর পরবর্তী সিরিজ়ের কাজও মুলতুবি রয়েছে।
সামনেই পণ্ডিত রবিশঙ্করের জন্মশতবার্ষিকী। সাউথ ব্যাংক-এর ‘শঙ্কর ১০০’ উৎসবের অঙ্গ রূপে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল তাঁর জীবনগাথা ‘ইন্ডিয়ান সান: দ্য লাইফ অ্যান্ড মিউজ়িক অব রবিশংকর’-এর। লেখক অলিভার ক্রাস্ক। অনুষ্ঠানটি হবে না। ৭ এপ্রিল, শিল্পীর জন্মদিনের বহু-প্রতীক্ষিত কনসার্টটিও বাতিল হয়েছে। নোরা জোনস ও অনুষ্কা শঙ্কর ছাড়াও, নীতিন সাহনি ও অলিভিয়া হ্যারিসনেরও পারফর্ম করার কথা ছিল সেখানে। নোরা-অনুষ্কাকে এক মঞ্চে দেখতে ভক্তদের এখন অন্য কোনও সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।
প্রবীণের হাত ধরো
সুপারমার্কেটগুলোয় হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, টয়লেট পেপারের আকাল। দুর্বিপাকে আশার আলো মধ্য স্কটল্যান্ডের এক এশীয় দম্পতি। ৩৪ বছরের আশিয়া জাভেদ ও তাঁর স্বামী ৩৫ বছরের জাওয়াদ। ফলকার্কের রাস্তার কোণে তাঁদের দোকান ‘ডে টু ডে এক্সপ্রেস’। বয়স্কদের বিনামূল্যে বিলোচ্ছেন মাস্ক, জীবাণুনাশক জেল ও পরিষ্কারের টিস্যু। করোনাভাইরাস স্কটল্যান্ডে আছড়ে পড়ার আগেই, পাহাড়প্রমাণ স্টক মজুত করেছিলেন। খরচ পড়েছিল ১.৭৫ লক্ষ টাকার মতো। তখনই দেখেন, রাস্তায় এক বৃদ্ধা কাঁদছেন। তিনি মার্কেটে হ্যান্ডওয়াশ পাননি। দম্পতি তখনই এই দানের সিদ্ধান্ত নেন। মাস্ক, জেল ও টিস্যু নিয়ে ছোট ছোট ব্যাগে ভরছেন, ৬৫-র ঊর্ধ্বে বয়স হলে বিনামূল্যে দিচ্ছেন। যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না, তাঁদের বাড়ি গিয়ে ব্যাগ দিয়ে আসছেন। এখনও ৫০০টা ব্যাগ বিলিয়েছেন, দোকানে আছে ৩০০টা। দম্পতি সংবাদমাধ্যমে প্রশংসিত। তিন সন্তানের মা আশিয়া-র কথায়, অসুখটা বয়স্কদের প্রতি নির্মম, তাঁরা অনেকেই বাইরেও বেরোতে পারেন না। তাঁদের দাদু-দিদা থাকলে এমন সময়ে বড়ই কষ্ট পেতেন। তাই বয়স্কদের হাতটা ধরতে ঠিক এ ভাবেই হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
সেই সময়
মনে পড়ে, প্লেগের সময় উইলিয়াম শেক্সপিয়র গৃহবন্দি। তখনই লিখেছিলেন ‘কিং লিয়ার’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিয়োপেত্রা’, ‘টাইমন অব এথেন্স’ এবং ‘পেরিক্লিস’। ১৬০৬ সালে বিউবনিক প্লেগ বা ব্ল্যাক ডেথ-এ লন্ডনের হাজারো মানুষ মারা যান। শেক্সপিয়রের গ্লোব থিয়েটারে তালা। গৃহবন্দি শেক্সপিয়র এই সময় কবিতা লিখতেন। আর, থিয়েটার খুললে নতুন নাটক লাগবে, তাই লিখতেন নাটক। এ ভাবেই সোনা ফলিয়ে গিয়েছেন নাটকে। এই প্লেগই ১৫৯৬-এ শেক্সপিয়রের একমাত্র ছেলে হ্যামনেটকে মাত্র ১১ বছর বয়সে কেড়ে নেয়। তার পরই তিনি লেখেন অসামান্য ট্র্যাজেডি ‘হ্যামলেট’। ১৫৯২ থেকে ১৬০৫ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ব্ল্যাক প্লেগ বার বার হানা দিয়েছে। ১৬২৫, ১৬৩৬-এও প্লেগ ফিরেছিল। ১৬৬৫-’৬৬-র দ্য গ্রেট প্লেগ-এ লন্ডনে এক লক্ষ মানুষ মারা যান। স্যামুয়েল পিপস লিখেছেন, ধনীরা তখন গ্রাম্য প্রকৃতির কোলে নিরাপদ। প্লেগে গরিবরাই বেশি মরেছিলেন। ঘিঞ্জি শহর ছেড়ে যাওয়ার উপায় ছিল না তাঁদের। এ বার একই ছবি ফিরবে না তো?
চোরদের পৌষমাস
এই দুর্দশার মধ্যে ডাকাত পড়ল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্রাইস্ট চার্চ পিকচার গ্যালারিতে। ডাচ শিল্পী অ্যান্টনি ভ্যান ডিক-এর ১৬১৬ সালের ‘আ সোলজার অন হর্সব্যাক’, অ্যানিব্যালে কারাচ্চি-র ‘আ বয় ড্রিংকিং’, ‘আ রকি কোস্ট, উইদ সোলজার্স স্টাডিয়িং আ প্ল্যান’ নিয়ে গেল চোরে। কলেজ থেকে টেমস নদী হাঁটাপথ। চোরেরা নৌকোয় এসে রাত ১১টা নাগাদ ছবিঘরে ঢোকে। নৌকোতেই পালায়। তিনটি ছবির খোলা বাজারে দাম ৮৭ কোটি টাকারও বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy