রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘পরিশ্রমের মর্যাদামূল্য’ (৩০-১০) অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প নিয়ে যাঁরা অন্ধের মতো সমালোচনার তির ছুড়ে চলেছেন— এই টাকা আসলে ‘ভিক্ষা’ দেওয়া— তাঁরা যে আদৌ বাস্তববাদী নন, তার প্রমাণ রাজ্যের প্রতিটি ভোটের ফলাফলেই পাওয়া যাচ্ছে। স্বস্তির কথা— প্রবন্ধকারের সুতীক্ষ্ণ কলমই বলে দিচ্ছে যে, মেহনতি মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে যে রাজনৈতিক দল, তার সদস্যরাও এই প্রকল্পকে ‘ভিক্ষা’ বলতে দ্বিধা করেন না। অভিজ্ঞতা বলছে, কিছু নীতি-আদর্শবাদী কমরেড বন্ধুদের সমালোচনার প্যাঁচ অন্য প্রকৃতির। তাঁদের বক্তব্য, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর টাকা দেওয়া হচ্ছে ভাল কথা। কিন্তু প্রয়োজন নেই যাঁদের, সেই পরিবারের মহিলাকেও এই টাকা দেওয়া হচ্ছে কেন? ওই বন্ধুদেরই উল্টে প্রশ্ন করেছিলাম, বাম আমলের প্রায় শুরু থেকেই ‘বেকার ভাতা’ দেওয়া চালু হয়েছিল। সে-টাকাও বাছবিচার না করে সকলকে দেওয়া হত কেন? যে সব পরিবারে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরিরত, তাঁদের বেকার সন্তানরাও বেকার ভাতা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন কী ভাবে?
সবিনয়ে বলি— আজকাল একটা সরলীকরণ চলছে সর্বত্র। যাঁরা বামেদের বক্তব্য কিংবা তাঁদের তথাকথিত নীতি-আদর্শ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলছেন, তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তারা চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছেন শাসক দলের ‘চটিচাটা’ হিসাবে। আর এই কারণে মাঝে মাঝেই ভাবছি— এই বঙ্গের বামদলের উঁচুতলার নেতা-সহ তাঁদের সমর্থকরা বুঝতে পারছেন না, তাঁরা জনসমর্থনের বদলে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন!
পরিশেষে বলি— পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারের যে মহিলারা মাসে হাজার বা বারোশো টাকা করে হাতে পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন, এর প্রশংসার বাইরেও বলা যায়, তাঁরা কার্যত সকলে ‘খেটে খেয়ে’ই এই টাকাটা গ্রহণ করছেন। দেশের সমস্ত মহিলার চাকরি বা কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে নিশ্চয়ই এই ‘ভিক্ষা’ এক দিন বন্ধ হয়ে যাবে। আরও যোগ করি, বামনেতাদের কিন্তু জোর গলায় প্রশ্ন তুলতে শোনা যায়নি যে, কেন্দ্রের আরএসএস বেষ্টিত বিজেপি সরকার যে বছরে দু’কোটি করে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কী হল?
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
পারিশ্রমিক
‘পরিশ্রমের মর্যাদামূল্য’ প্রসঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য এই চিঠি। প্রবন্ধে উল্লেখ আছে, সমীক্ষায় দেখা গেছে অনেক মহিলা দিনভর সংসারের দায়িত্ব পালন না করলে তাঁরাও মাসে কয়েক হাজার টাকা রোজগার করতে পারতেন। প্রশ্ন জাগে, যেখানে দেশে বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী, নিজ রাজ্যে কাজের অভাবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে ‘পরিযায়ী’ হতে হয়, কোভিড-পরবর্তী সময়ে কাজের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত, সেখানে মাসিক কয়েক হাজার টাকা রোজগারের কাজ পাওয়া কি এতটাই সহজ? প্রসঙ্গক্রমে বলি, সম্প্রতি ইতিহাসে স্নাতকোত্তর অন্তিম বর্ষের এক ছাত্রী পরীক্ষা শেষে আমার কাছে জানতে চেয়েছে, প্রাইভেট আইটিআই থেকে (সরকারি আইটিআই-এ ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর তার নেই) সে ফিটার কিংবা ইলেকট্রিক্যাল কোর্স করবে কি না! কারণ, কর্মখালির বিজ্ঞাপনে নাকি ওই সম্পর্কিত কাজের কিছুটা চাহিদা আছে!
বেশ কিছু কাল আগে ‘গৃহবধূদের পারিশ্রমিক প্রদান’ বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে, আমার স্ত্রীকে গৃহকর্ম বাবদ পারিশ্রমিক প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পক্ষান্তরে তার যুক্তি ছিল, সে নিজে বাড়ির রান্নার দায়িত্ব সামলানোর ফলে রান্নার লোকের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বেঁচে যাওয়ায় প্রকারান্তরে পরিবারের সাশ্রয় হয়। অর্থাৎ, তার পরিশ্রমের আর্থিক বিনিময়-মূল্য পরোক্ষ ভাবে পারিবারিক অর্থ-তহবিলে সঞ্চিত হয়ে কিছুটা সমৃদ্ধি আনে। আসলে মেয়েরা সংসার চালানোর ‘ম্যানেজমেন্ট’ এতটাই ভাল বোঝেন যে, নির্দিষ্ট আর্থিক সীমাবদ্ধতার ভিতরেও তাঁরা সফল ও সুন্দর ভাবে সংসার চালাতে পারেন।
আর দেশের সম্পদের শতকরা আশি ভাগ যাঁরা কুক্ষিগত করে রেখেছেন তাঁরা কারা, কোন (অবৈধ) উপায়ে কুক্ষিগত করে রেখেছেন এবং তাঁরা কী কারণে লজ্জিত হবেন, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেল।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের উপযোগিতা প্রশ্নাতীত, গ্রহণযোগ্যতা সংশয়াতীত এবং এর প্রয়োজনীয়তা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডারের কতিপয় বিরুদ্ধ-সমালোচকের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে, এই প্রকল্পের প্রাপক নয় এমন সবাইকেই প্রবন্ধকার কেন সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন, সেটা বোধগম্য হল না!
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
আলো দূষণ
এত আলো কেন! গাছ-পাখি-বাদুড়-কাঠবেড়ালি কি এত আলো চায়? আলো দূষণ বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি সমস্যা, যা প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহারের ফল। কৃত্রিম আলো অপ্রয়োজনীয় ভাবে ব্যবহারের ফলে যেখানে আলো থাকার দরকার নেই, সেখানে পৌঁছে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর প্রভাব জীবজগৎ ও মানবস্বাস্থ্যের উপর ক্রমান্বয়ে পড়ছে।
আলো দূষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন চোখ ঝলসানো আলো যা চোখে ব্যথা সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টিশক্তিকে বিঘ্নিত করে। ‘স্কাইগ্লো’ বা আকাশ আলোকিত করা আলো, যেমন শহরের কৃত্রিম আলো, রাতের আকাশকে এত উজ্জ্বল করে তোলে যে তারাগুলি আর দেখাই যায় না। ‘লাইট ট্রেসপাস’ বা আলোর অনুপ্রবেশ, যেখানে একটি স্থানের আলো অন্য স্থানে পৌঁছে বিরক্তি বা সমস্যা সৃষ্টি করে, ‘ক্লাটার’ বা আলোর জট, যেখানে অনেক আলো এক সঙ্গে জমা হয়ে দৃষ্টিশক্তি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
বিশ্বে অধিকাংশ মানুষ বসবাস করেন আলো দূষিত অঞ্চলে। শহুরে এলাকায় এই পরিমাণ আরও বেশি। অতিরিক্ত আলোর কারণে ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হওয়ায় মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন স্থূলতা, ডায়াবিটিস এবং হৃদ্রোগে ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। অদক্ষ হাতে আলো লাগানোর কারণে প্রতি বছর বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়, যেটি মূলত শক্তির অপচয়। প্রতি বছর অসংখ্য পাখি আলোর কারণে মৃত্যুবরণ করে, মূলত বাতিস্তম্ভগুলিতে আঘাত পেয়ে বা অভিবাসন চলাকালে বিভ্রান্ত হয়ে।
আলো দূষণ রোধ করার জন্য আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। যেমন অকারণ ও অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ রাখা। শক্তি সঞ্চয়কারী এলইডি আলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। রাস্তা ও বাড়ির আলোকসজ্জা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিজ্ঞাপনের বোর্ড ও দোকানের আলোর পরিমাণ ও সময় সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। মানুষকে আলো দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাতে হবে। এ ছাড়াও নীতিনির্ধারকদের আলো দূষণ রোধে আইন প্রণয়নের জন্য উদ্যোগ করতে অনুরোধ করি। আলো দূষণ একটি নীরব বিপদ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। এটি রোধ করতে ব্যক্তি, সমাজ এবং সরকারের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সন্দীপন সরকার, পাল্লা রোড, পূর্ব বর্ধমান
উমার প্রয়াণ
চলে গেলেন পথের পাঁচালী-র ‘দুর্গা’। উমা দাশগুপ্ত। তাঁর সহজ সরল গ্রাম্যতা অভিনয়ে এনেছিল নতুন ধারা, যার দৌলতে বাংলা সিনেমা পেয়েছিল জগৎজোড়া খ্যাতি এবং পরিচালক হিসাবে সত্যজিৎ রায় স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের আঙিনায়। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এ রকম কয়েক জন আছেন, যিনি একটিমাত্র ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে দর্শক মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন। তাই উমাদেবী আজও প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল বাঙালি হৃদয়ে। তাঁর প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
শান্তনু সিংহ রায়, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy