Advertisement
E-Paper

কুড়িয়ে পাওয়া খুদে ‘ঘর’ পেল আমেরিকায়

প্রশাসন সূত্রে খবর, আমেরিকার নিউজার্সির বাসিন্দা জসুয়া মাইকেল লরেন্স এবং তাঁর স্ত্রী রাভেন এলিজাবেথ লরেন্স সঙ্গীতকে দত্তক নিয়েছেন।

দত্তক নেওয়ার পরে। সোমবার।

দত্তক নেওয়ার পরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪০
Share
Save

পরিজনেরা অনাদরে তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন জঙ্গলে। শিশুটির দেহ পিঁপড়ের কামড়ে হয়েছিল ক্ষতবিক্ষত। উদ্ধারের পরে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা চলে হাসপাতালে। তারপর ঠাঁই হয়েছিল সরকারি হোমে। এ বার সুদূর আমেরিকায় ‘নতুন ঘর’ পেল সঙ্গীত নামের বছর চারেকের শিশুপুত্রটি। সোমবার মেদিনীপুরের হোম থেকে সে গেল তার পালক বাবা-মায়ের কাছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, আমেরিকার নিউজার্সির বাসিন্দা জসুয়া মাইকেল লরেন্স এবং তাঁর স্ত্রী রাভেন এলিজাবেথ লরেন্স সঙ্গীতকে দত্তক নিয়েছেন। এ দিন মেদিনীপুরে কালেক্টরেট চত্বরে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এই দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিশুপুত্রটিকে পেয়ে খুব খুশি আমেরিকার ওই দম্পতি। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলছেন, ‘‘সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে শিশু দত্তক নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া বলছেন, ‘‘সম্পন্ন মানুষজন এ ভাবে এগিয়ে এলে আরও অনেকে অভিভাবকের স্নেহ, ভালবাসা ও ঘর পাবে।’’ দত্তক নেওয়া সঙ্গীতকে কোলে নিয়ে ঘুরেছেন আমেরিকার ওই দম্পতি। একরত্তিকে পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত তাঁরা।

বছর চারেক আগে ঝাড়গ্রামের এক জঙ্গল থেকে শিশুপুত্রটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তখন তার বয়স মাস কয়েক। কী ভাবে উদ্ধার হয়েছিল? জঙ্গল থেকে পাতা কুড়োচ্ছিলেন কয়েকজন। হঠাৎই তাঁরা দেখতে পান, শিশুটি পড়ে রয়েছে। খবর যায় পুলিশ-প্রশাসনে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘জঙ্গলে পরিত্যক্ত শিশুপুত্রটি পড়েছিল। পাতা কুড়োনোর সময় কয়েকজন দেখতে পেয়েছিলেন।’’ তার শারীরিক গঠনে কিছু ত্রুটি ছিল। বিশেষ করে ডান পায়ে এবং মুখে। অনুমান, সে কারণেই তার বাবা-মা তাকে জঙ্গলে ফেলে গিয়েছিলেন। উদ্ধার হওয়ার পর দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছে শিশুটির। শুরুতে তাকে রাখা হয়েছিল ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের মানিকপাড়ার হোমে। পরে সেখান থেকে তাকে মেদিনীপুরের সরকারি হোমে স্থানান্তর করা হয়। শিশুপুত্রটির নাম-ঠিকানা এ সব কিছুই জানা যায়নি। চেষ্টা করেও তার পরিজনেদের খোঁজ মেলেনি।

হোমেই তার নাম রাখা হয়েছিল সঙ্গীত। মেদিনীপুরে সরকারি শিশু দত্তক কেন্দ্র রয়েছে (স্পেশালাইজ়ড অ্যাডপশন এজেন্সি, সংক্ষেপে এসএএ বা শা)। বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন চত্বরে (বালিকা হোম)। কেন্দ্রটি চালু হয়েছে ২০১৯ সালে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সঙ্গীতকে নিয়ে এই কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত ৬০টির বেশি শিশু দত্তকে গেল। এর মধ্যে কয়েকজন গেল ভিন্ দেশে। উল্লেখ্য, আগে আদালতের নির্দেশে শিশু দত্তক নেওয়ার নিয়ম চালু ছিল। পরে নিয়ম বদল হয়েছে। পরিবর্তিত নিয়মে জেলাশাসকের নির্দেশেই শিশু দত্তক নেওয়া যায়। আগে দত্তক দেওয়ার নির্দেশনামায় সই থাকত জেলা বিচারকের। এখন সই থাকে জেলাশাসকের। আমেরিকার ওই দম্পতির দুই মেয়ে রয়েছে। সঙ্গীতকে নিয়ে তাঁদের তিনটি সন্তান হল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, ‘‘ভারতীয় নাগরিক, প্রবাসী ভারতীয়, বিদেশিরাও এ দেশ থেকে শিশু দত্তক নিতে পারেন। তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে পৃথক নিয়ম রয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’র (কারা) তত্ত্বাবধানে, ‘অথরাইজড ফরেন অ্যাডপসন এজেন্সি’র (আফা) মাধ্যমে পালক বাবা-মায়ের কাছে সঙ্গীত কেমন রয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। শিশুপুত্রটির কী নাম রাখবেন তাঁরা? ওই দম্পতি জানিয়েছেন, নাম রাখা হবে— ড্যানিয়েল সঙ্গীত লরেন্স।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore america

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}