ধর্মতলায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস সাড়ম্বরে পালিত হল। করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় এই সমাবেশ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, ধর্মতলার সমাবেশ থেকে যাতে করোনা আরও ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে না-পড়ে, সেই দিকে প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানিয়েছিলেন, সভার জন্য যথাযথ অনুমতি নেওয়া হয়েছে, এবং ৩০ জুনের সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলা হবে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কেবলমাত্র দু’টি টিকা এবং বুস্টার ডোজ় নেওয়া লোকেদের। সমাবেশে দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে বলা হবে।
দূরদর্শনে ওই সমাবেশের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখে আমরা আতঙ্কিত! সরকারের সুরক্ষা-নির্দেশিকার তোয়াক্কা না করে, গায়ে-গা ঠেকিয়ে অগণিত মানুষ সমবেত হয়েছিলেন সমাবেশ মঞ্চের সামনে! চোখে পড়েনি সমাবেশের প্রবেশপথে কোনও ব্যক্তিবিশেষের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে, কিংবা তাঁর দু’টি টিকার এবং বুস্টার ডোজ়ের শংসাপত্র চাওয়া হচ্ছে! ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ ঢেউয়ের দাপটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এমতাবস্থায় এই অব্যবস্থা এবং অবিমৃশ্যকারিতার জন্য সরকার এবং প্রশাসন দায় অস্বীকার করতে পারে না। শাসক দল, সরকার এবং প্রশাসন এই কারণে আদালত অবমাননার শিকারও হতে পারে!
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১
অবরুদ্ধ শহর
প্রতি বছর একুশে জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে তার দু’দিন আগে থেকে নগরজীবন যে ভাবে থমকে যায়, যে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হন শহরবাসী, সে দিকে দেখা কি প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? না কি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার মধ্যেই দলীয় শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের ধারা বজায় থাকে? নেতানেত্রীদের আগাম ক্ষমা চাওয়ায় সেই দুর্গতির তীব্রতা একটুও কমে বলে মনে হয় না। যে প্রশাসনের স্বঘোষিত অবস্থান হল ধর্মঘট, বন্ধ বা কোনও রকম অবরোধ হতে না দেওয়া, বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘটে অফিসে হাজিরা না দিলে যেখানে বেতন কাটতে প্রশাসন দ্বিধা করে না, তারা কী করে শহরের হৃদয়ভূমি জুড়ে এমন ভাবে শহিদ দিবস পালন করে, যার জন্য গোটা শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে? অনেক সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মীরা ছুটি নিতে বাধ্য হন।
কোভিড সংক্রমণ যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে, তখন সকল কোভিড বিধি জনজোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে যে ভাবে সমাবেশে শামিল হল প্রশাসন, তাকে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বললে ভুল হবে না। আইন বানানো যাঁদের কাজ, আইন মানানো যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরাই যখন নিয়ম ভাঙার খেলায় উন্মত্ত হয়ে ওঠেন, তখন অনিয়মই নিয়ম বলে পরিচিতি পায়। ১৯৯৩ সালের একটি দুঃখজনক ঘটনার রেশ টেনে, তার শোকের আবহে সত্যিই কি আজ শহিদ দিবস পালন করা হচ্ছে?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
প্রচার টিভিতে
‘বদ্ধভূমি’ (২২-৭) সম্পাদকীয়টি বলিষ্ঠ এবং সময়োপযোগী। যথার্থই মনে করানো হয়েছে যে, একুশে জুলাই এখনও ঘোষিত সরকারি ছুটির দিন নয়। ছুটি দানে দরাজহস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবে দেখতে পারেন, এই দিনটিকে ছুটির দিন করা যায় কি না। ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ভিড়ের বহর দেখে আরও বেশি করে এটা মনে হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য দিনমজুর মানুষকে কলকাতা অবধি দু’-তিন দিন আগেই টেনে আনা কেন? এই অসহায় মানুষগুলিকে অসহ্য গরমে, রোদ-বৃষ্টিতে ধর্মতলার সঙ্কীর্ণ রাস্তায় আবদ্ধ করে যন্ত্রণায় ফেলা হয় কেন? দু’তিন দিন ধরে কলকাতার রাস্তাগুলিকে যানজটে জর্জরিত করা হয় কেন? সর্বোপরি, অতিমারির ভয়াবহতা অগ্রাহ্য করে এমন জমায়েত করা হল কেন?
তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাই শহিদ দিবস পালন রাজ্যের সর্বত্র খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া যায় টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা প্রচারের মাধ্যমে, যে ভাবে গত দু’বছর তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, ‘ভার্চুয়াল’ সভা। ভোটের প্রচারেও অতঃপর কথায় কথায় সব দলের ‘ব্রিগেড চলো’ ঘোষণার প্রয়োজন আর নেই। টিভির চ্যানেলেই দলের নেতারা তাঁদের বক্তব্য রাখতে পারবেন। তাতে করোনা-সহ সব রকম রোগের সংক্রমণ রোখা সম্ভব হবে। যানজট, মারামারি, হানাহানির প্রয়োজন হবে না। রাস্তায় মিটিং-মিছিল স্থানীয় স্তরে চলতে পারে।
এতে রাজনৈতিক উন্মাদনা কমতে পারে। রাজনৈতিক খুন, ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বারংবার যে কোনও অবরোধ, বন্ধের বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। তাঁকেই এগিয়ে এসে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে হবে। দূর-দূরান্তের মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে কলকাতাকে দু’তিন দিনের জন্য অচল রেখে শক্তির আস্ফালন দেখানোর লোভ সংযম করলে মানুষের ভাল হবে।
তপন কুমার দাস, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
হেঁটে অফিস
প্রতি বছরই ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে সিইএসসি-র ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা শুনতে বাংলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে মানুষ এসে ভিড় করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য জোরাজুরি ও আবেদন তো আছেই। এর জন্য পূর্ব প্রস্তুতিতে স্থানীয় স্তরে সভা, মিটিংও দিনের পর দিন চলে। ভিড়ের বহর বাড়িয়ে শক্তি প্রদর্শনের জন্য দলের অন্দরে অসম প্রতিযোগিতাও চলে। তার জেরেই কলকাতার অলিগলি জনারণ্যে পরিণত হয়ে যায়। দৃশ্যদূষণ, শব্দদূষণের মহামিলন ঘটে। বাসের দেখা মেলে না, পথে চলার উপায় নেই, তবু কাজের দিনে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। বাস, লঞ্চ সব বন্ধ। অথচ, সব অফিস-আদালত খোলা। ছ’কিলোমিটার পথ হেঁটে অফিস যেতে হয়েছে।
বিসদৃশ হলেও সত্য এটাই যে, শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য। অথচ, সারা বাংলা দেখল, সমাগত জনতার মধ্যে পিকনিকের মেজাজ।
ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, কলকাতা-১৫
ভয়ের তাড়না
আগেই আঁচ করা গিয়েছিল, এ বার একুশে জুলাই শহিদ স্মরণের নামে উন্মাদনা হবে। কারণ, কোভিডের দরুন বিগত দু’বছর এই উদ্যাপন থেকে তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্য সরকারকে বিরত থাকতে হয়েছে। তাই এ বার কোভিডের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মহা ধুমধামে পালিত হল। সামনে পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। কিন্তু লোক জড়ো করতে গিয়ে যা হল, তা রীতিমতো অত্যাচারের নামান্তর। শহরতলি ও গ্রামগঞ্জের গরিব মানুষদের ভয় দেখিয়ে তাদের রুজি-রোজগার বন্ধ করে শক্তি প্রদর্শন করা হল। পাড়ায় পাড়ায় নাকি এমন হুলিয়া জারি করা হয়েছিল যে, প্রত্যেক বাড়ি থেকে কমপক্ষে এক জন করে সভাস্থলে যেতেই হবে, তা না হলে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অনুদান থেকে শুরু করে সব রকম সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি জল সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। পার্টির মস্তানদের দৌরাত্ম্যে মানুষ অতিষ্ঠ। আর কত দিন চলবে এ ধরনের পেশি প্রদর্শনের রাজনীতি?
প্রফুল্ল কুমার সরকার, কলকাতা-৭৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy