নীলাঞ্জন দে-র ‘আর্থিক দুনিয়ার সাক্ষর নাগরিক’ (৩-১২) প্রবন্ধটি বর্তমানে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক। ঠিক যে, জমানোর মতো ‘উদ্বৃত্ত’ টাকা বেশির ভাগ মানুষেরই হাতে থাকে না। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ এবং যাঁদের অবসরকালীন প্রাপ্তির কোনও সুযোগ নেই, তাঁদের এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিনিয়োগ বা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাস হতে হবে তথ্যভিত্তিক, আবেগজনিত নয়। মানুষকে বুঝতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু এগুলো কোনওটাই সঞ্চয়ের বিকল্প নয়। তাই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বা বিভিন্ন বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের কথা শুনে বেশির ভাগ অর্থ বা সামগ্রিক অর্থ বিমাতে বিনিয়োগ করা সুবিবেচনার কাজ নয়। আবার মেয়াদি আমানতে আজ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে টাকা রেখে যে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, পাঁচ বছর বাদে হয় সেই সুদ অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো আরও কমবে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়টির সম্ভাবনাই বেশি। তা ছাড়া অর্থনীতির নিয়মে মূল টাকারও অবমূল্যায়ন ঘটবে কিছু কাল পরে।
এই সমস্ত কারণে চড়া সুদের প্রলোভনে বিভিন্ন চিটফান্ডে টাকা রেখে, সেই অর্থ আর ফেরত পাননি অসংখ্য প্রান্তিক মানুষ। সতর্কবাণী হিসেবে বাজারগত ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হলেও, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ কিন্তু বর্তমানে অনেকটাই নিরাপদ, কারণ এই সমস্ত ফান্ড পরিচালিত হয় পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান বা সংক্ষেপে এসডব্লিউপি বলে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের একটা প্রকল্প আছে, যেখানে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করলে, প্রতি মাসে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের তুলনায় যেমন বেশি সুদ পাওয়া যায়, তেমনই মূল টাকাও নিয়মিত ভাবে বাজার অনুযায়ী বাড়তে থাকে, যা ভবিষ্যতের জন্য অতি আবশ্যক। এ ছাড়াও প্রয়োজনমতো যে কোনও সময়েই এই টাকা আংশিক বা পুরোটাই তুলে নেওয়ার সুযোগ আছে। সঞ্চিত অর্থের একাংশ এই ক্ষেত্রে অতি সামান্য ঝুঁকিতে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুতরাং মানুষকে ওয়াকিবহাল করে যথাযথ ভাবে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য, সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের নিখরচায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত কর্মশালা আয়োজন করা যেমন জরুরি, তেমনই আর্থিক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা এই ধরনের প্রবন্ধ আরও বিস্তৃত ভাবে প্রকাশের প্রয়োজন।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
ট্রাম্প-নীতি
অশোক কুমার লাহিড়ীর ‘ভারতের জন্য সুসংবাদ’ (২-১২) শীর্ষক প্রবন্ধটি সুলিখিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, ট্রাম্পকে উপেক্ষা করে এই বিশ্বে চলাফেরা করা বড়ই মুশকিল। ট্রাম্প বলেছেন চিন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ষাট শতাংশ ও ব্রিকস-ভুক্ত দেশগুলির উপর কুড়ি শতাংশ শুল্ক বসাবেন। চিনের রফতানি করা বস্তুসমূহ আজ সারা বিশ্বের বাজার দখল করে নিয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে অত্যন্ত পেশাদারি দক্ষতায়, সুচারু ভাবে চিন বিবিধ বস্তু রফতানি করে চলেছে। সব দেশেই তা বিকিয়েও যাচ্ছে হইহই করে। রফতানিকৃত বস্তুর গুণগত মান সম্পর্কে তেমন কোনও বড় অভিযোগ চিনের বিরুদ্ধে শোনা যায় না। উপযুক্ত মানের বস্তু বহির্বিশ্বে চিন ছাড়ে যথেষ্ট কম মূল্যে। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল রফতানিকারক দেশ এখন চিন। ষাট শতাংশ শুল্ক চিনের উপর ধার্য করলে চিন অবশ্যই আমেরিকায় রফতানি বন্ধ রাখবে। হয়তো সেই পরিমাণ পণ্য কিছু কম মূল্যে, নিজের লাভ কমিয়ে, অন্য দেশে বেচবে। এ ভাবে সাময়িক সময়ের জন্য চিনের কিছু ক্ষতিও হতে পারে। কিন্তু আমেরিকার বাজারে জোগান দেবে কে? চিনের পাঠানো দ্রব্যসামগ্রীতে আমেরিকানরা অভ্যস্ত এত দিন। চিনের মতো গুণমানসম্পন্ন দ্রব্য বাজারজাত করা ও বিক্রীতে ক্রেতাকে দ্বিগুণ বা তারও অধিক মূল্য দিতে হবে। নিজের দেশেই আমেরিকার ব্যবসা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে। দ্বিগুণ দামের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে। পতন ঘটবে ডলারের। দেশের অর্থাৎ আমেরিকার মানুষই ক্ষিপ্ত হবেন ট্রাম্পের বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি নিয়ে।
একটা কথা প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন। বাকি পৃথিবী সদ্য শেষ হওয়া আমেরিকার নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ না করেও ওই নির্বাচন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ট্রাম্পের সমস্ত রকম নীতির দিকে সারা পৃথিবী তাকিয়ে থাকে। ভারতের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। আমেরিকার বিদেশ নীতি, বাণিজ্য নীতি এখনও ভারতের বাজারকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের পর্বে দেখা গিয়েছে, তিনি আজ যা সিদ্ধান্ত নেন, কাল তা বদলে দেন। সুতরাং, ভারতের ক্ষেত্রে তাঁর আগমন ‘সুসংবাদ’ হবেই, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না।
স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪
দুই দেশ
সত্তরের দশকের কথা বলছি। মাঠে, চায়ের দোকানে, বাসে, ট্রেনে, ট্রামে, অফিসে সব জায়গায় ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ ছোট ট্রানজ়িস্টার সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার কমেন্ট্রি বেশি জনপ্রিয় ছিল।
সেই সময় মজিদ খান, জ়াহির আব্বাস, ইমরান খান, আসিফ ইকবাল, জাভেদ মিঁয়াদাদ সমৃদ্ধ পাকিস্তানের ক্রিকেট দল খুব শক্তিশালী ছিল। একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করতাম। পাকিস্তান যখন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে খেলত, আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্রীড়ামোদী মানুষ কখনও পাকিস্তানকে সমর্থন করতেন না। পাকিস্তানের প্রতি এই ঘৃণা ও বিদ্বেষ আজও রয়ে গেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে থাকার জন্য আমরাও ভীষণ একাত্মবোধ করেছি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। আমাদের আশপাশের অনেক বাড়িতে বাংলাদেশের মানুষ এসে থেকেছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁরা দেশে ফিরে গিয়েছেন। তখন কিন্তু ধর্মীয় বিভাজন গুরুত্ব পায়নি, গুরুত্ব পেয়েছে বাংলা ভাষা। ধীরে ধীরে দু’দেশের মানুষের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করলাম। মাঝে মাঝে ও-দেশে হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর করার খবর আসতে থাকল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রিকেট খেলার সময় এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের সময় সমাজমাধ্যমের সৌজন্যে আমরা দেখছি যে, ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ পরস্পরের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করছেন।
এ সবের মূলে সেই ধর্মীয় মৌলবাদ। ধর্মকে চিরকালই রাজনীতিকরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছেন। রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য এই ঘৃণা ও বিদ্বেষ কখনও প্রশমিত করার চেষ্টা করা হয়নি, বরং একে সযত্নে লালন করে চলেছেন দুই দেশের রাজনীতিকরা। আশা করি, দু’দেশের সরকার এই পরিস্থিতিতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করবে, যাতে কোনও দেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত না হন।
আশিস রায়চৌধুরী, পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লি, শিলিগুড়ি
অ-পরিচ্ছন্ন
রেল লাইনের ট্র্যাক ও স্টেশন পরিচ্ছন্ন রাখার ভাবনা নিয়ে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেনে বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ট্রেনেই তা ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়ার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি মালদহ-হাওড়া ডাউন ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় ভ্রমণ করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল। গোটা যাত্রাপথ নাকে রুমাল দিয়ে যেতে বাধ্য হলাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
সোমনাথ চৌধুরী, বোলপুর, বীরভূম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy