সমরেশের রিসর্টে হানা দিয়েও খালি হাতে ফিরেছে বিধাননগর তথা বাগুইআটি থানার পুলিশ। —প্রতীকী চিত্র।
তোলা না পেয়ে প্রোমোটারকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত বিধাননগর পুরসভার পুরপ্রতিনিধি সমরেশ চক্রবর্তী ওরফে চিন্টু ঘটনার তিন দিন পরেও পুলিশের নাগালের বাইরে। মঙ্গলবার পুলিশ সমরেশের বাড়িতে নোটিস ঝুলিয়েছিল, যাতে তিনি থানায় এসে দেখা করেন। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অধরা সমরেশ। বুধবার উত্তরবঙ্গের চিলাপাতায় সমরেশের রিসর্টে হানা দিয়েও খালি হাতে ফিরেছে বিধাননগর তথা বাগুইআটি থানার পুলিশ।
সূত্রের খবর, তৃণমূলের একটি মহল থেকে সমরেশের আগাম জামিনের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, আক্রান্ত প্রোমোটারকে নিরাপত্তা দিতে এ দিন তাঁর বাড়ির সামনে বাগুইআটি থানার তরফে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত রবিবার বিধাননগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সমরেশের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা তোলা চাওয়া এবং তা দিতে না পারায় ২১ লক্ষ টাকার জন্য তাঁকে মারধরের অভিযোগ করেন কিশোর হালদার নামে এক প্রোমোটার। তিনি অভিযোগে জানিয়েছিলেন, রিভলভারের বাট দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় সমরেশ-সহ সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন কিশোর। কিন্তু সমরেশ তো দূর, মাত্র দু’জন ছাড়া বাকি কারও নাগাল পায়নি পুলিশ।
ইতিমধ্যেই এ দিন চিলাপাতার জঙ্গলে সমরেশের রিসর্টে তাঁর খোঁজে হানা দেয় পুলিশ। এক সাব-ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে বাগুইআটি থানার পুলিশের একটি দল এবং স্থানীয় সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা রিসর্টে অভিযান চালান। সেখানকার ১২টি ঘরেই চলে তল্লাশি। তবে, সমরেশকে না পেয়ে রিসর্টের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ ফিরে যায়।
রিসর্টের কর্মীরা জানিয়েছেন, বছর চারেক আগে চিলাপাতার ওই জঙ্গলে পাঁচ বিঘা জমির উপরে এই রিসর্ট তৈরি করেছিলেন সমরেশ। ঘটা করে সেই রিসর্টের উদ্বোধনও করা হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট রিসর্টের জমি কেনা নিয়ে কিছু অভিযোগও রয়েছে। এক ব্যক্তি এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, সমরেশ তাঁকে ঠকিয়ে জমি হাতিয়ে নিয়েছেন।
‘চিলাপাতা রিসর্ট মালিক সমিতি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যে ওই রিসর্টে সমরেশ যাতায়াত করতেন। সমিতির সভাপতি গণেশকুমার শাহ বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, সমরেশ চক্রবর্তীর নামে একটি অভিযোগ উঠেছে। তবে তাঁর সঙ্গে অনেক দিন দেখা নেই। এখানে পুলিশি অভিযানের বিষয়টিও আমার জানা নেই।’’
সংবাদমাধ্যমে সমরেশের রিসর্টের ছবি দেখে এ দিন সমালোচনাও শুরু হয়েছে বিধাননগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, এক সময়ে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন সমরেশ। পরে প্রোমোটিংয়ে অংশীদারি কারবার শুরু করেন। শেষ পুর নির্বাচনে তিনি প্রথম বার ভোটে দাঁড়ান ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। বর্তমানে দামি গাড়িতে চেপে সমরেশকে ঘুরতে দেখা যায় বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রহৃত প্রোমোটার সংবাদমাধ্যমের কাছে সমরেশের তোলা চাওয়ার যে ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) পাঠিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, সমরেশ কোনও এক জনের সঙ্গে দর কষাকষি করে তাঁকে ১৯ লক্ষ টাকা দিতে বলছেন। সেই দর ওই ব্যক্তির পছন্দ না হওয়ায় সমরেশ তাঁকে বিধাননগর পুরসভার এক মেয়র পারিষদের সঙ্গে দেখা করতেও বলছেন। ভিডিয়োয় এক জায়গায় সমরেশকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘তোমরা মুখ ফিরিয়ে থাকলে আমি উন্নয়ন করব কী করে?’’ কিশোর দাবি করেছেন, ভিডিয়োয় তাঁকেই সমরেশ কথাগুলি বলেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের তাই প্রশ্ন, ‘‘পুর এলাকার উন্নয়নের টাকা তো সরকার দেয়। তা হলে প্রোমোটারের টাকায় সমরেশ কার উন্নয়নের কথা ভিডিয়োয় বলছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy