—প্রতীকী ছবি।
‘দুরভিসন্ধি’ (৩০-৫) সম্পাদকীয়টির সঙ্গে সহমত, তবে আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র মাধ্যমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এক দিকে যেমন শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণের সিংহদ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনই আঘাত হেনেছে শিক্ষার মর্মবস্তুতে। শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যুক্তিবাদী মনন বিচারবোধ বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠে। অথচ, এখন ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, ডারউইন তত্ত্বকে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে, মধ্যযুগের নানা কল্পকাহিনি সিলেবাসে ঢুকছে। বলা হচ্ছে, আধুনিক বিজ্ঞানের সবই নাকি প্রাচীন কাল থেকে বেদে আছে, এরই নাম ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’। এ হল শিক্ষার গৈরিকীকরণ ঘটানোর জন্য কেন্দ্রের শাসকদের একটি হাতিয়ার। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ খুঁটিয়ে পড়লে দেখা যায়, সেখানে ভারতীয় ঐতিহ্যের জয়গান গাওয়া হয়েছে। নালন্দা, তক্ষশিলা থেকে শুরু করে বেদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত— কিছুই সেখানে বাদ পড়েনি। বাদ পড়েছে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, জ্যোতিরাও ফুলে প্রমুখের মহান সংগ্রাম, যা এই অন্ধত্বের বিরুদ্ধে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছিল।
লক্ষণীয়, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ নিয়ে রাজ্য সরকারও তেমন কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। কেন চার্লস ডারউইনকে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে সরকার কোনও কিছু স্পষ্ট করে না বললেও, বিশেষজ্ঞদের ধারণা ডারউইনের মতবাদের বিষয়বস্তু সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিপন্থী বলেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিলেবাস থেকে পর্যায়সারণি ও পরিবেশবিদ্যার বিশেষ দিককে কোনও যুক্তি ছাড়াই বাদ দেওয়া হচ্ছে। যেখানে বিজ্ঞান চেতনাকে গড়ে তোলা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য, সেখানে বিজ্ঞানকে কেবলমাত্র তথ্য-নির্ভর করা হচ্ছে।
উচ্চশিক্ষার সিলেবাসে ভারতীয় ঐতিহ্যের নামে হিন্দু সংস্কৃতির চর্চাকে যে ভাবে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তাতে শুধু গৈরিকীকরণ নয়, ভারতের বহু-সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে ধর্মীয় আধিপত্যবাদকে চাপানো হয়েছে। দেশীয় ঐতিহ্যের প্রকৃত মূল্যায়ন সেখানে করা হয়নি। নবজাগরণের অধ্যায় গুরুত্বহীন হয়েছে। ইউজিসি-র সিলেবাসে ইসলামি ইতিহাস সংক্ষিপ্ত হয়েছে। গোটা মোগল যুগ স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বাদ পড়েছে। অথচ, এই যুগে প্রথম রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐক্যের অসংখ্য নজির তৈরি হয়েছিল। শাসক দলের এই দুরভিসন্ধিমূলক আচরণের তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানানো উচিত।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া
টিউশনের ক্ষত
‘ভক্ষক’ (৩-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে সরকার-নিয়ন্ত্রিত স্কুলের শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার নিন্দা করা হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। শিক্ষা দফতরের নির্দেশ, শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মুচলেকা, পরিশেষে আদালতের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি সরকারি স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার প্রবণতা। তবে কি কিছু ‘ভক্ষক’ শিক্ষকের জন্য সমগ্র শিক্ষক সমাজের সুনাম মুছে যাবে? শিক্ষকদের অসম্মানের অবিলম্বে অবসান হওয়া প্রয়োজন। সরকারি শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বিরুদ্ধে সকল স্তরের মানুষের খোলাখুলি প্রতিবাদ করা উচিত। তবেই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার হাল ফিরবে, এবং এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা বাঁচবে। শুধুই সরকার বা রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীর কাঁধে দোষ চাপিয়ে দিলে কোনও দিনই এই সমস্যার সমাধান হবে না।
তবে গৃহশিক্ষকতার ক্ষত নিয়ে ভাবতে গেলে এই সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে। মাস্টারমশাইরা স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতেও একটু-আধটু পড়াবেন— এটাই চিরকালীন প্রথা এবং এই নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। সমস্যা শুরু হল যখন স্কুলের পড়াশোনা ক্রমশ বন্ধ হতে থাকল এবং প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র ছাত্রছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত করার এবং বোর্ডের পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র পাওয়ার জায়গায় পরিণত হল। এই অবস্থায় কয়েক জন শিক্ষক সরকারি বেতন পেয়েও উপরি রোজগারের লোভে শিক্ষকের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে শুরু করলেন। পড়াশোনায় মনোযোগী না করিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেওয়া, বা নম্বর পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হল। এই সমস্যার শুরু বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। সরকার শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করল, কিন্তু বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পরিবর্তে শিক্ষকরা যাতে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন, সেই ব্যবস্থা করল। ফলে, শিক্ষকতা আর আদর্শ জীবিকা রইল না, হয়ে গেল সহজে টাকা রোজগারের ক্ষেত্র।
বিদ্যালয়গুলিকে টাকা রোজগারের কারখানা থেকে আগের মতো মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। সরকারি বেতন তো আসলে জনসাধারণের টাকা। শিক্ষকদের বেতন পরোক্ষে মানুষ দেবেন, আবার ওই শিক্ষকদেরই গৃহশিক্ষকতার জন্যও বেতন দেবেন— এতে একই কাজে একই জনকে দু’বার বেতন দেওয়া হচ্ছে না কি? তাই এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া
প্লাস্টিক দূষণ
‘প্লাস্টিকের গেরো’ (১১-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় সরকারি উদাসীনতার কারণে এ রাজ্যে প্লাস্টিকের বেলাগাম ব্যবহার ও তার বিপদের কথা আরও এক বার মনে করিয়ে দিল। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যবহারে রাজ্য পরিবেশ দফতরের তরফে আইন বলবৎ হলেও সে আইন শুধু খাতায়-কলমেই রয়ে গেছে। শুধু ব্যবহারই নয়, এ ধরনের প্লাস্টিক প্রস্তুত, মজুত ও বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি আইন ভঙ্গের জন্য সে ভাবে জরিমানাও করা হয় না। বাজার-হাট সর্বত্র, বিশেষত মাছ, আনাজ ও মিষ্টির দোকানে অবাধে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরসভা এবং সরকারি নজরদারি ও সঠিক জরিমানার প্রয়োগ প্রায় নেই। আজও আমরা সিকিম এবং পড়শি দেশ ভুটান ও নেপালকে দেখে শিখতে পারিনি।
এর সমাধান হিসেবে ক্রেতার কাছে আলাদা কোনও থলে না থাকলে, প্লাস্টিকের ব্যাগের দাম নেওয়া হোক। এ ব্যাপারেও ক্রেতা ও বিক্রেতার সচেতনতা ও সহযোগিতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। আমরা সবাই জানি, দীর্ঘ দিন পরেও প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। ফলে, প্লাস্টিকে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। পাশাপাশি নদী-নালা-খাল-বিল যথেচ্ছ প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ভরে যাচ্ছে, যার ফলে সর্বত্রই নিকাশিব্যবস্থার কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। প্লাস্টিক নিষিদ্ধের জন্য আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা কখনও কোথাও সম্ভব নয় যদি সার্বিক সচেতনতার জাগরণ না ঘটে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
বেশি দাম
সোনারপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী মুদ্রিত মূল্যের থেকেও কিছু টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়। প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আইনকানুন কি এখানে অবলুপ্ত হল?
রিকি দেবনাথ, কলকাতা-১৫০
তারের জঙ্গল
কর্মসূত্রে আমাকে নিয়মিত ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে চিড়িয়ামোড় যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার পাশের প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে তারের জঙ্গল বিপজ্জনক ভাবে পথচারীদের মাথার উপর ঝুলছে। সেগুলি নীচের ফুটপাতেও নেমে এসেছে অনেক জায়গায়। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সীমা ব্যাপারী, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy