রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
গত বারের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে যে ভাবে মোদী ঝড়ের সম্মুখীন হয়ে কংগ্রেস পার্টি সম্মানজনক জায়গায় দাঁড়িয়েছিল, সেই ধারা এ বার আর অব্যাহত রইল না। পাঁচ বছর আগে জেতা ৭৭টি আসন থেকে নেমে তারা এ বার জিততে পেরেছে সাকুল্য ১৭টি আসন। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, পার্টির এই অধঃপতনের দায় কার। কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে হিমাচল প্রদেশে পার্টির জয়ের সব কৃতিত্ব রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রাকে দিলেও, সেটা আদৌ ঠিক কি? যদি তা-ই হত, তা হলে গুজরাতে কংগ্রেসের এ রকম ভরাডুবি হল কেন? সত্যি বলতে, এ বারের ভোটে প্রথম থেকেই কংগ্রেস এক প্রকার মেনে নিয়েছিল যে, গুজরাতে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। যেখানে আগের নির্বাচনে রাহুল গান্ধী প্রায় মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন গুজরাতে, সেখানে তিনি এ বার সভা করেছেন নামমাত্র। শেষের দিকে মল্লিকার্জুন খড়্গে কয়েকটি সভা করে হাল ধরার চেষ্টা করলেও, তা দিয়ে আর কংগ্রেস পার্টির মাটি ফেরত পাওয়া সম্ভব ছিল না।
আসলে নরেন্দ্র মোদী খুব ভাল করেই জানেন যে, তাঁর নিজের এলাকায় তাঁকে হারানো কারও পক্ষেই খুব সহজ কাজ নয়। তার অনুমান যে নেহাতই কথার কথা নয়, তা গেরুয়া শিবিরের এ বারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়া থেকে পরিষ্কার। টানা সাত বার নির্বাচনে জেতার মধ্য দিয়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টের কৃতিত্বকেও ছুঁয়ে ফেলেছে। এ বছর বিজেপি যেখানে প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে, কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার সেখানে কমে হয়েছে সাড়ে ২৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, আম আদমি পার্টি (আপ) পাঁচটি মাত্র আসন জিতলেও তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৩ শতাংশের মতো। গুজরাতে আসন জেতার মধ্য দিয়ে আপ জাতীয় দলের মর্যাদাও পেয়ে গিয়েছে। সে কারণেই আপকে সমগ্র বিপক্ষ দল থেকে আর ব্রাত্য রাখা উচিত হবে না।
যদিও বহু দিন বাদে দেবভূমি হিমাচল প্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে কংগ্রেস জিতেছে ৪০ টি আসন। নিঃসন্দেহে, এই জয় কংগ্রেসকে আগামী দিনে আরও উদ্বুদ্ধ করবে। প্রতি পাঁচ বছর শাসক বদলের যে ঐতিহ্য রাজ্যটি ধরে রেখেছিল, বিজেপির প্রবল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ বার তার অন্যথা হল না। এই প্রথম কোনও রাজ্যবাসী খারিজ করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব। সেই কারণে লিখতে হয় গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অপ্রত্যাশিত নয়।
অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর
অবক্ষয়
সম্পাদকীয় ‘অভিভাবকহীন’ (৮-১২) বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মূল্যবোধের অসারতার এক মূল্যবান নিরীক্ষণ। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী বিধির মডেল কোড অমান্য করে ভোটদান করে ভোটের দিনও দলীয় প্রচার ও পদযাত্রা করেন। সেখানে কমিশন মূক ও বধিরের ভূমিকায় ছিল। ‘প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পদ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে’— সংবিধান বর্ণিত এই শপথবাণী সম্পর্কে পদাধিকারীরা কি আদৌ শপথগ্রহণের পর আর অবহিত থাকেন?
জনসাধারণ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। দলীয় জনপ্রতিনিধিরাই আবার তাঁদের নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচিত করেন। সংবিধান বলে, যে মুহূর্তে দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করেন, সেই ক্ষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী সমগ্র দেশের আর মুখ্যমন্ত্রী স্বরাজ্যের সমস্ত জনগণের মুখ হিসাবে পরিগণিত হন। সংসদ বা বিধানসভার সদস্য হলেও, কোনও বিল পাশ করার ভোটাভুটিতে দলীয় হাই কমান্ডের ‘হুইপ’ তাই এই দু’জনের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য নয় (সভার ‘স্পিকার’-এর ভূমিকার মতো, বিলের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটদানের সংখ্যা সম সংখ্যক হলেই কেবল তাঁরা ঐচ্ছিক ভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন)। কেননা দলমত নির্বিশেষে তাঁরা সমগ্র জনগণের প্রতিভূ। কিন্তু বাস্তবে কী পরিলক্ষিত হয়, তা আমজনতা অবহিত। ‘ভারতীয় রাজনীতির চালচলন’ নিয়ে সম্পাদকীয় নিরীক্ষণ, ‘বাবু যা করেন, বাবুর বিরোধীরা কিছু কাল পরেই তা করেন’ প্রসঙ্গে বলা যায়, শপথ গ্রহণের পর থেকেই তথাকথিত কেন্দ্রবিরোধী অনেক মুখ্যমন্ত্রীকে সংবিধান বর্ণিত পদমর্যাদা ভুলে, শুধু দলীয় সভা নয়, সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চের মর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে সেই মঞ্চ থেকেই অবলীলায় বিরোধী পক্ষকে তোপ দাগতে দেখা যায়। তাই সম্পাদকীয় আক্ষেপ, “নির্বাচনী বিধি ভাঙার, বিধিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্পর্ধাটি প্রতিষ্ঠা করার এই সংস্কৃতিটিই কেন দেশে এই ভাবে চালু হয়ে গেল... এটাই ভাবার বিষয়।” যদিও ভোটসর্বস্ব এ দেশের আমজনতার মনে তা কোনও রেখাপাত করে বলে মনে হয় না। কারণটা বহুবিধ। এ দেশে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজে মাথা উঁচু করে প্রতিবাদী হওয়ার জন্য যে অনমনীয় মেরুদণ্ড দরকার, সেটাকেই নমনীয় ও ভঙ্গুর করে তোলে সমাজের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ‘মাথা’রা । বিশ্বের ‘বৃহত্তম’ গণতন্ত্রে প্রজাগণের কাছে তা নির্মম স্বৈরতন্ত্রের আস্বাদন বলেই মনে হয়।
মধুসূদন দাশঘোষ, হরিপাল, হুগলি
স্বৈরাচার
কিছু দিন আগে দুই স্কুলছাত্রকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে উত্তর কোরিয়ার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা কিম জং উন-এর পুতুল-প্রশাসন। সাজাপ্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা দুই কি তিন, সে ব্যাপারে যদিও মতভেদ আছে। ওদের অপরাধ, ওরা দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কে ড্রামা’ নির্মিত সিনেমা, টিভি সিরিজ় দেখেছিল। এর আগেও সেনাবাহিনীর আধিকারিককে বিদেশের সোপ অপেরা দেখার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় সেখানকার প্রশাসন। প্রসঙ্গত, টিভিতে শাসনকর্তার প্রশস্তি এত গাওয়া হয় যে, অন্য অনুষ্ঠান দেখার সময় বিশেষ হয়ে ওঠে না। সে দেশে রেডিয়োও দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে খোলা রাখতে হয় রাষ্ট্রপ্রধান অথবা রাষ্ট্রের গুণগান শুনতে। ছাত্রদের যাঁরা গুলি চালিয়েছেন, তাঁদেরও নিজের সন্তান অথবা নাতি-নাতনির কথা ভেবে হয়তো হাত কেঁপেছিল। তবু তা করতে হয়েছিল। স্বৈরতান্ত্রিক প্রভুর আদেশ না মানলে তাঁদের দিকেও বন্দুক তাক করা হত যে।
রাজার নিষ্ঠুরতার খুব সামান্য কিছুই সেখানকার বজ্র-আঁটুনির বেড়া পেরিয়ে জানতে পারে বাইরের বিশ্ব। সে দেশের এক বিরাট সংখ্যক নাগরিক আজও দু’বেলা পেটপুরে খেতে পান না, অথচ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষায় ব্যয় বেড়েই চলেছে। নিরস্ত্র স্কুলছাত্রদের ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে হত্যা হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতার তালিকায় একটি লজ্জাজনক সংযোজন। মৃতের সংখ্যা কম বলে হয়তো বিষয়টা কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব পায় না। এই সব কাজ-কারবার দেখতে দেখতে সারা বিশ্বের চোখেও বোধ হয় একটা সহনশীলতার আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। তাই হয়তো সংবাদমাধ্যমেও কম গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে।
এক জন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রনেতার নিষ্ঠুরতার বিষয়টি খোলাখুলি আলোচনায় উঠে আসুক, যাতে বিরুদ্ধ জনমত গঠিত হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। মোট কথা, বিকারগ্রস্ত মানুষদের থামানো দরকার অবিলম্বে।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি
স্ট্যাম্প পেপার
কিছু দিন আগে আলিপুর জাজেস কোর্টে গিয়েছিলাম নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার কিনতে। জনৈক স্ট্যাম্প বিক্রেতা বললেন, উকিলবাবুর নামে ছাড়া কোনও স্ট্যাম্প পাওয়া যাবে না। ওঁর কাছে যা আছে, সব নাকি উকিলবাবুদের নামে। সাধারণ মানুষ নিজের নামে স্ট্যাম্প পেপার কিনতে পারবেন না কেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়টির প্রতি যথাযথ নজর দিতে অনুরোধ করি।
অরুণ গুপ্ত, কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy