Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
Bank

সম্পাদক সমীপেষু: বকেয়া উধাও

অর্থাৎ ২০২৪-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪২,০০০ কোটি টাকারও বেশি অনাদায়ি ঋণ, হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে (রাইট অফ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি।

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১৫
Share: Save:

‘ব্যাঙ্ক থেকে মুছল ৪২,০০০ কোটি’ (১০-১২) শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা গেল, চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধে, অর্থাৎ ২০২৪-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪২,০০০ কোটি টাকারও বেশি অনাদায়ি ঋণ, হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে (রাইট অফ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। সম্প্রতি লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি। গত অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) তারা মুছে দিয়েছিল ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই অঙ্ক ছিল ১.১৮ লক্ষ কোটি। গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সব ব্যাঙ্ক বকেয়া মুছেছে সেই তালিকার শীর্ষ স্থানে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ৮৩১২ কোটি টাকার ঋণ মুছেছে তারা। এ ছাড়া পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) ৮০৬১ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ৬৩৪৪ কোটি এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদা ৫৯২৫ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ মুছে দিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এই লাগাতার বকেয়া ঋণ মুছে দেওয়া খুবই বিপজ্জনক। কাদের বকেয়া ঋণ মুছে দেওয়া হচ্ছে? নির্দ্বিধায় বলা যায়, এর সিংহভাগই হল এ দেশের ধনকুবের গোষ্ঠীর একাংশ। এই টাকা আসলে সাধারণ মানুষের, যাঁদের কষ্টার্জিত অর্থে তিল তিল করে গড়ে ওঠে ব্যাঙ্কের আমানত। আর, সেই আমানত থেকে যাবতীয় ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমন ঘটনা ঋণ খেলাপির প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে সমাজ অভ্যন্তরে। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর না হয়ে, ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধি প্রয়োগ না করে হিসাবের খাতা থেকে বকেয়ার যাবতীয় তথ্য উধাও করে দেওয়ার মাধ্যমে কাদের স্বার্থ দেখছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রীয় সরকার?

অপর দিকে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজন মতো কর্মী নিয়োগ করে গ্রাহক পরিষেবার মানকে উন্নত করার কোনও প্রয়াস নেই। স্থায়ী কাজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’-এর খাঁড়া ঝুলিয়ে অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁদের থেকে যত বেশি সম্ভব কাজ আদায় করার প্রক্রিয়া পুরোদস্তুর বলবৎ রয়েছে। গ্রাহক পরিষেবার মান ক্রমশ নিম্নগামী হলেও সাধারণ গ্রাহকদের পরিষেবা শুল্কের ক্ষেত্র এবং পরিমাণ বাড়িয়ে তাঁদের উপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপানো হচ্ছে।

এ ভাবে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) কমিয়ে হিসাবের খাতাকে আপাত পরিষ্কার দেখানোর পিছনে কোন হিসাব কাজ করছে? অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলছেন যে, মুছে দেওয়া অর্থও আদায়ের চেষ্টা চলে। চললেও, এর বড় অংশের টাকা অনাদায়ি থেকে যায়। আসলে ঋণ মুছে দিয়ে ব্যাঙ্কের খাতা পরিষ্কার রাখলে সেই ব্যাঙ্কের পরিষেবা গ্রহণে আগ্রহী হবে ক্রেতারা। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের এ এক অন্যায় পদক্ষেপ। দেখা যাবে যারা ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিশোধ করছে না, তারাই এ সব ব্যাঙ্কের সরকারি শেয়ার কিনে ব্যাঙ্কের মালিক হবে। সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত বিপুল অর্থ-লগ্নির নিয়ন্ত্রক হবে তারাই। সে কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এ জাতীয় পদক্ষেপে ধনকুবেরদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের পূর্ণ সম্মতি থাকে। ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা আছে কি?

গৌরীশঙ্কর দাস, সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ইউনিটি ফোরাম

হস্তক্ষেপ

ব্যাঙ্ক থেকে ৪২০০০ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ মোছার মতো রোমহর্ষক খবরে এখন পাঠকমন আর সে ভাবে বিচলিত বা শিহরিত হয় না। বোধ হয় দেশটার নাম ভারত বলেই। খবরে প্রকাশ, এই হিসাব কেবল চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসের। বর্ষশেষে তা হলে সংখ্যাটা কোথায় পৌঁছবে? শেষ দু’টি অর্থবর্ষে মুছে যাওয়া এই ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১.১৪ ও ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ভাবতে অবাক লাগে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বার্ষিক ব্যালান্স শিট থেকে প্রতি বার এই বিপুল পরিমাণ অর্থ, যা এক উন্নয়নকামী দেশের জাতীয় সম্পদ, কেমন নিভৃতে লুট হচ্ছে। সরকারি বদান্যতায় প্রভাবশালী বহুজাতিক সংস্থার বকেয়া অনাদায়ি ঋণ যেন কোনও এক জাদুবলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে। বলা বাহুল্য, সরকারের ক্রীড়নক ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের গৃহীত এই ধ্বংসাত্মক অনৈতিক কাজে সমস্ত সাধারণ নাগরিকের নির্বাক দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া করার কিছু থাকে না।

তবে আশার কথা এটাই যে, সর্বোচ্চ আদালত কঠোর পদক্ষেপে নির্বাচনী বন্ডের নামে গোপনে কোন কোন বণিকগোষ্ঠীর অর্থ কোন কোন রাজনৈতিক দলের অর্থভান্ডার স্ফীত করেছে, তা আজ সাধারণ মানুষের অজানা নেই। ঠিক সেই কারণেই প্রার্থনা, এ বার অনাদায়ি ঋণের ক্ষেত্রেও পরিত্রাতার ভূমিকায় মঞ্চে অবতীর্ণ হোক দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের জনগণের কোটি কোটি টাকা ঋণপ্রাপ্ত ধনকুবেরদের দায়মুক্ত করার স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তথা সরকারকে কঠোর নির্দেশ দিন মাননীয় বিচারপতিরা।

মধুসূদন দাশঘোষ, হরিপাল, হুগলি

সতর্কতা জরুরি

ব্যাঙ্কের ৪২০০০ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ মকুবের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই যে, গত বছরও মোছা হয়েছিল অনাদায়ি ঋণ ১৪.৫ লক্ষ কোটি (‘মুছেছে ১৪.৫ লক্ষ কোটির ঋণ, তোপ জহরের’, ৭-১২-২০২৩)। সুতরাং, তফাত শুধুমাত্র সময়ের। ৪২০০০ কোটি টাকা মোছা হয়েছে ছ’মাসের, আর ১৪.৫ লক্ষ কোটি মোছা হয়েছিল ন’বছরের।

সংবাদে প্রকাশ, গত আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) ঋণ মোছা হয়েছিল ১.১৪ লক্ষ কোটি। এ বিষয়ে শীর্ষে ছিল এসবিআই, পিএনবি, ইউবিআই ও অন্যান্য ব্যাঙ্ক। কৃষিকর্ম, গাড়ি বাড়ি ক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাঙ্কের বন্ধকী ঋণ স্বীকৃত। এই ঋণের জন্য জমির দলিল দস্তাবেজ বন্ধক রাখা কিংবা চাকরিজীবীদের ‘স্যালারি স্টেটমেন্ট’ প্রভৃতি ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা হিসাবে জমা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থাকে ঋণ পেতে এ সব হ্যাপা সামলাতে হয় না। শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে কর্পোরেট সংস্থার কোটি কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার আবেদনপত্র খুঁটিয়ে যাচাই করা হয়। তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ, ঋণ পরিশোধের পন্থা প্রভৃতি উল্লেখ থাকে। সর্বোপরি থাকে উপরমহলের ছাড়পত্র।

এতগুলি ধাপ পেরিয়ে ছাড়পত্র পাওয়া কর্পোরেট সংস্থার ঋণ খেলাপি হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছয়। অনাদায়ি ঋণ ব্যাঙ্কের কাছে অনুৎপাদক সম্পদ। প্রশ্ন ওঠে, অনাদায়ি ঋণ মুছে দেওয়া এবং কর্পোরেট সংস্থার ঋণ মকুব করা কি একে অপরের পরিপূরক? ব্যাঙ্কের প্রতি আস্থাভাজন গ্রাহকের গচ্ছিত টাকা এই ভাবে মকুব করে দেওয়া কি বিধিসম্মত?

কর্পোরেট সংস্থাকে ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাঙ্কের আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ, গ্রাহকের মনে ভীতি সঞ্চার হলে ব্যাঙ্কগুলির দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।

অমরেশ পাল, ব্যান্ডেল, হুগলি

ঋণ কত

চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে বাকি এখনও তিন মাস। অথচ এই আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে ৪২,০০০ কোটি টাকারও বেশি অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। ব্যাঙ্কের এই ঋণ মোছা (রাইট অফ) কার্যত জাতীয় ক্ষতি। এটা একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী লোকসভায় এক বার বললেন ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে ৪২,০০০ কোটি টাকা। আবার তিনিই জানালেন, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ'মাসে ব্যাঙ্কগুলি বকেয়া আদায় করেছে ৩৭,২৫৩ কোটি টাকা। ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকছে। সাধারণ মানুষ এত জটিলতা বোঝেন না। ঠিক কত টাকা তা হলে ঋণ মকুব হল, তার সদুত্তর কে দেবে?

সাগরময় অধিকারী, ফুলিয়া, নদিয়া

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Loan Interest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy