কলকাতার রাস্তায় লোকশিল্পীদের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
ছৌ নাচ, গান, ঢাকের লড়াই, কবির লড়াই— কিছুই বাদ পড়েনি। তবে সব কিছুর মধ্যেই ছিল লোকসঙ্গীতশিল্পীদের নিজেদের একগুচ্ছ দাবি। তাতে জুড়ল ভিন্ন আঙিনার জন্য প্রতিবাদের সুর! বিভিন্ন জেলা থেকে শুক্রবার সকালেই কলকাতায় আসতে শুরু করেন লোকশিল্পীরা। নিজেদের দাবি নিয়ে ধর্মতলা চত্বরে জমায়েত করেন তাঁরা। সেই জমায়েত থেকে লোকশিল্পীরা নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা তোলার পাশাপাশি আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদেও সুর তোলেন।
‘সারা বাংলা লোকশিল্পী সংসদ’-এর পক্ষ থেকে শুক্রবার কলকাতায় লোকশিল্পীদের একটি কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে লোকশিল্পীরা আসেন কলকাতায়। বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ-সহ আটটি জেলার লোকশিল্পীরা অংশ নেন কর্মসূচিতে। সকাল থেকেই হাওড়া এবং শিয়ালদহ ভিড় করেন লোকশিল্পীরা। তার পর তাঁরা পৌঁছে যান সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারে। সেখান থেকেই মিছিল করে লোকশিল্পীরা আসেন ধর্মতলা চত্বরে। কলকাতা পুরসভার পাশে জমায়েত করেন তাঁরা। সেই জমায়েত থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৬ দফা দাবির একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়। স্মারকলিপিটি দেওয়া হয় কলকাতার ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের কাছে।
লোকশিল্পীদের মিছিল ও জমায়েত দেখা যায় অন্য ছবি। অন্যান্য কর্মসূচির মতো এই মিছিলে নেই তেমন কোনও স্লোগানের আওয়াজ। নানা রঙে, নানা বেশে লোকশিল্পীরা হাজির হন মিছিলে। শিল্পীরা নিজেদের শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেন তাঁদের জীবনযন্ত্রণা, সুখ-দুঃখ, দাবিদাওয়ার কথা। কেউ কেউ করম নাচ, আদিবাসী নৃত্য, ছৌ নাচে পা মেলান। কেউ আবার গলা মেলান বাউল গানে। ঢাকের বাদ্যিতেও ছিল প্রতিবাদের আওয়াজ। কবির লড়াই নজর কেড়েছে।
তিন দশক আগে রাজ্যের লোকশিল্পীদের জন্য গড়ে উঠেছিল ‘সারা বাংলা লোকশিল্পী সংসদ’ নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে লোকশিল্পীদের দাবি নিয়ে কথা বলে আসছে। এই সংগঠনের সভাপতি দীপক বিশ্বাস এবং সম্পাদক গোকুল হাজরা জানান, কী ভাবে বিভিন্ন স্তরে সম্মেলন এবং জেলাগত কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের দাবিদাওয়াগুলি তৈরি করেছেন। তাঁদের দাবির মধ্যে ছিল, বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে লোকশিল্পের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে লোকশিল্প পরিবেশন-সহ বহাল ভাতা ৩০০০ টাকা এবং ৫০০০ টাকা পেনশন চালু করা।
শুধু নিজেদের দাবি নয়। পাশপাশি, আরজি কর-কাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও তোলা হয় লোকশিল্পীদের প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে। লোকশিল্পীদের মঞ্চে যোগ দেন জুনিয়র ডাক্তারেরাও। ‘জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট’-এর নেতা অনিন্দ্যসুন্দর মণ্ডল বক্তৃতায়আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তের প্রসঙ্গ তোলেন। লোকশিল্পী সংগঠনের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল জানায়, বহু আগে থেকেই শুক্রবারের কর্মসূচির কথা নবান্নে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। অভিযোগ, বারংবার এ বিষয়ে বার্তা পাঠানো হলেও প্রশাসনের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। তবে শুক্রবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকশিল্পীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ইন্দিরা। আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, যদি তাঁদের দাবি না পূরণ হয়, তবে ভবিষ্যতে জেলায় জেলায় বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy