প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘এ বারও মৌন মোকাবিলা?’ (২২-৭) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারি নিয়ে রাষ্ট্র-রাজনীতি বেশ সরগরম। যদিও কেন্দ্রের তরফে এই বিষয়ে কোনও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা যতই আত্মশ্লাঘা অনুভব করি না কেন, বাস্তবে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পুস্তকের একটি ‘ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন’ হয়েই নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র আপেক্ষিক। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ দাস হয়েই থাকতে হয় তাকে। সর্বোপরি বিরোধী দল যদি দুর্বল ও বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত থাকে, তবে নিশ্চিত রূপেই চোখে চামড়ার ঠুলি পরানো গাড়ি-টানা ঘোড়ার মতোই গণতন্ত্রকে চালিত করা যায়। লক্ষণীয়, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি ক্ষমতায় আসার পূর্বে ও ক্ষমতা ভোগের সপ্তম বর্ষেও পূর্বতন সরকারের ভুলত্রুটি নিয়েই সরব থেকেছে। দুর্ভাগ্য এমনই যে, এমন কোনও বিরোধী কণ্ঠ নেই, যারা অন্তত একটি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবে, সমস্ত রকম দুর্নীতির অবসান ঘটানোর প্রয়োজনেই জনগণ আপনাদের, অর্থাৎ শাসক দলের উপর আস্থা রেখেছে। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখানো, ও স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধেও কেন এত অভিযোগ উঠছে?
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারিকে নতুন কিছু মনে করার কারণ দেখি না। ফোনে আড়িপাতার ঘটনা এর আগেও বহু বার হয়েছে। লুকিয়ে পাশের বাড়ির কথা শোনা, যৌথ পরিবারে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর কথোপকথনে আড়িপাতার অভ্যাস মানুষের সহজাত। কারণ, ওই কথোপকথন ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের ক্ষেত্রটিকে মজবুত করে। তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেটা একটু বাড়াবাড়িই। কিন্তু কে আর না চায়, বিরোধী দলের কৌশল আগে থেকেই জেনে যেতে!
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। উদ্ভূত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে তাঁরা মৌন থাকবেন, না কি কৌশলে দৃষ্টিভঙ্গি অন্য দিকে সঞ্চালিত করবেন, সে পরিকল্পনা তাঁদের প্রস্তুত আছে বলেই মনে হয়। আপাতত বিরোধীদের দীর্ঘ মৌনব্রত ভঙ্গ হয় কি না, সেটাই দেখার।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
হৃত পরিসর
ব্যক্তিগত স্বাধিকার হরণ করা কি মৌলিক অধিকার হরণ নয়? দেশবিরোধীদের ফোন হ্যাকিং, আর সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের ফোন হ্যাকিং কি একই কথা? পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অফিস-কাছারি কোথাও কি নিজস্ব পরিসর বলে কিছু থাকবে না? এক চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন দেশের সমস্ত মানুষ। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘোষণা করতে হবে আসল তথ্য। এত বড় অপরাধ ভারতে এর আগে কোনও দিন হয়েছে বলে শুনিনি।
রাধারমন গঙ্গোপাধ্যায়
বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ক্ষমতার সুযোগে
সম্প্রতি ইজ়রায়েলি সংস্থার পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ফোনে আড়িপাতা নিয়ে দেশে তুমুল বিতর্ক-বিবাদ চলছে। এ দিকে শুরু হয়েছে সংসদে বাদল অধিবেশন। বিরোধী রাজনৈতিক দল একে হাতিয়ার করে বিরোধিতা শুরু করেছে। সাফাই দিচ্ছে কেন্দ্র। যদিও এটা নতুন কিছু নয়, ইতিপূর্বে ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। বিখ্যাত মানুষ, বিশেষত রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এই ফোনে আড়িপাতা বিষয়টি ঘটে থাকে। সাধারণত শাসক দল তার ক্ষমতার ফয়দা নিয়ে এমন করে থাকে। একে বন্ধ করা খুবই কঠিন।
শিবপদ চক্রবর্তী
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বৃথা বড়াই
দুই কালজয়ী চিন্তাবিদ চাণক্য ও রবীন্দ্রনাথের কল্পিত সংলাপের আধারে নির্মিত রম্যরচনাটি অসাধারণ (‘সত্যি কথা বলব?’, ২৫-৭)। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসকের নীতি কতটা নাগরিক স্বার্থ অনুকূল হওয়া উচিত, ব্যক্তি স্বাধীনতার সুরক্ষা শাসকের দৃষ্টিতে কতটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, নাগরিক সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিষয়ক প্রশ্নগুলি সাবলীল ভাবে গৌতম চক্রবর্তী তুলে এনেছেন। বর্তমানে দেশ জুড়ে চর্চার কেন্দ্রে পেগাসাস সফটওয়্যার। সরকার যাঁদের মনে করছে শাসক তথা রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক, তাঁদের ফোনে গোপনে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে ওই সফটওয়্যারের সাহায্যে। সংবিধান-প্রদত্ত নাগরিক অধিকার পদদলিত করে, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার দোহাই দিয়ে তা করা হচ্ছে। শাসকের এই কাজ বেআইনি ও অনৈতিক, এ কথা নাগরিক সমাজের মনে হলেও, দেশের সুরক্ষাকে ঢাল করে কেন্দ্রীয় সরকার এই নির্লজ্জ কাজকে বৈধ করার চেষ্টা করছে। যা গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারকে হত্যা করছে।
রাষ্ট্র আর শাসককে অঙ্গীভূত করে তোলার এই প্রচেষ্টা দেশের জন্য ভয়ঙ্কর। নরেন্দ্র মোদী সরকারের যে কোনও সমালোচনা আজ দেশবিরোধী কাজ হয়ে যাচ্ছে, আর এই অজুহাতে সমালোচক, প্রতিবাদীদের উপর নেমে আসছে কারাদণ্ড-সহ নানা শাস্তি। বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধকারী এই সরকার যখন গণতন্ত্রের বড়াই করে, তখন জনগণের চোখে তা ভণ্ডামি বলে মনে হয়।
দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া, হুগলি
ভ্রমণে সাবধান
বর্তমানে করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। ঘরবন্দি মানুষ মুক্ত বাতাস নিতে সমুদ্রসৈকত, পাহাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তৃতীয় ঢেউয়ের অভিঘাত আরও বেশি হতে পারে। তাই অনুরোধ, একটু সাবধানি হন। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে করোনা বিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তার নজরদারির প্রতি প্রশাসন তৎপর। এ জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। বেড়াতে যাওয়া হোক নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তবেই বেড়ানোর প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করা যাবে।
সৌগত কাঞ্জিলাল
বাঁকুড়া
চিরজীবী রফি
শুধু দিলীপকুমার নয়, আরও অনেক প্রয়াণের শোকস্তব্ধ সাক্ষী এই জুলাই মাস। রাজেশ খন্না, প্রাণ, জনি ওয়াকার, মেহমুদ, সর্বোপরি বাঙালির দুর্বলতা উত্তমকুমার। তাঁর মৃত্যুর ৭ দিন পরে, ৩১ জুলাই ১৯৮০, প্রয়াত হন মহম্মদ রফি।
রফির গানের সর্বজনগ্রাহ্যতা বেড়েই চলেছে। জনপ্রিয় অনেকেই ছিলেন ও আছেন, কিন্তু রফির এই প্রলম্বিত জনপ্রিয়তা দেখলে প্রশ্ন জাগে, এ কি এক সুগভীর শৈল্পিক মাধুর্য ও গরিমার স্বীকৃতি নয়? বহু জন্মের সাধনা ও প্রতিভার এক বিরল মিশ্রণের প্রতি বিশ্বস্ত অনুরাগের নামান্তর নয়? রফির বিরাট গান-ভান্ডারের সবটাই যে ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরনো, সেটা ঐতিহাসিক তথ্য। তাঁর প্রথম দিকের ভক্তের দল বিদায় নিয়েছে, পরবর্তী অনেকেই বিদায়ের পথে, কিন্তু এই গায়ককে পুরনো বলা যায় না। প্রতি প্রজন্মেই তাঁর গুণমুগ্ধ শ্রোতা তৈরি হচ্ছে। এ ভাবেই অমরত্ব অর্জিত হয়।
অভিনেতা ফিরোজ খান বলেছিলেন, “রফিসাহেব না থাকলে আমরা যারা নিজেদের বড় হিরো বলে মনে করি, কেউই থাকতাম না। তিনিই প্রকৃত নায়ক, তাঁর তুলনায় আমরা শূন্যগর্ভ ছায়া। তাঁর একটি গানেই তো সবাই চিনল আমাকে।” সেই গানের প্রতিটি শব্দ, সুর, লয় আমৃত্যু ফিরোজ খানের মুখস্থ ছিল। অতঃপর তাঁর সংযোজন: “ষাটের দশকে থার্ড রেট ছবিতে ফার্স্ট রেট গান হত। এখন ঠিক তার উল্টো। কারিগরি উন্নতি হয়েছে প্রচুর, তাতে লাভ কী? এখন তো আর মহম্মদ রফি নেই!”
কথাটা ভুল। মহম্মদ রফি নেই কে বলল?
সুরঞ্জন চৌধুরী
কলকাতা-৯৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy