‘নতুন গণক্ষমতার উত্থান’ (৭-৫) নিবন্ধে রণবীর সমাদ্দার লিখেছেন, গণক্ষমতার উৎসে সংঘর্ষ, অর্জনে সংঘর্ষ এবং সে ‘সংঘর্ষ থাকবেই’। এই সংঘর্ষে ‘অ্যান্টিথিসিস’ স্পষ্ট। সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃষ্টিশীলতা অস্পষ্ট। তাই এই গণক্ষমতার নতুনত্ব বা উত্থানে ‘বামপন্থা’র তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হল না।
লেখক এখানে গুরুত্ব দিয়েছেন ‘অধোবর্গের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির উপর’, কিন্তু তা শুধু নির্বাচনী ফলেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। আর্থিক ক্ষমতার ভিত্তিতে শিকড় গাড়তে পারেনি। অর্থনৈতিক সক্ষমতা ছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতা একান্তই দয়া, দাক্ষিণ্য, ভর্তুকি, অনুদান, সাহায্য-ভাতা নির্ভর। সংগঠিত রাজ্য সরকারি ক্ষেত্রে কর্মীরা সাধারণ ভাবে নিয়মিত বঞ্চনায় অখুশি। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারি কর্মীর মাধ্যমে ‘অধোবর্গ’-এর অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য রাজ্য সরকারি পরিকল্পনাও কার্যকর হতে পারে না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য পরিসংখ্যানের শুকনো অঙ্ক নিয়ে বিস্তর তর্কবিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু তাতে ‘অধোবর্গ’-এর পাতে নিজের শ্রম, ক্ষমতা ও মান দিয়ে অর্জিত চিঁড়ে জুটছে না, এর পর বিশুদ্ধ পানীয় জলে ভেজার কথা।
সৃষ্টিশীল প্রশাসন লোকপ্রিয় হয়েছে, বাঙালির আত্মপরিচিতি নতুন মোড়ে এনেছে, নারীসমাজের গুরুত্ব বেড়েছে, সাধারণের সঙ্গে বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ জনকল্যাণ নীতি গুরুত্ব পেয়েছে ইত্যাদি নানা কথা লিখেছেন রণবীরবাবু। এই শ্লাঘা তখনই সার্থক, যখন অধোবর্গের মধ্যে আত্মঘাতী সংঘর্ষ কম হবে এবং পাশাপাশি অধোবর্গের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে। অথচ, মোটামুটি ২০০০ সালের পথ ধরেই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরেও কেবল খুনোখুনি সংঘর্ষ হয়ে চলেছে। অধোবর্গীয় জনবাদী আন্দোলনকারীদের দুই হাতে সুস্থায়ী, পরিবেশবান্ধব কাজ নেই। আর এটাই যদি অভ্যাস হয়ে যায় ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে, তা হলে বাঙালির আত্মপরিচিতি, জনকল্যাণ, নারীসমাজ প্রভৃতির গুরুত্বের অন্য, অর্থাৎ নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক অর্থ প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। নির্মাণের বদলে শুধুই ধ্বংস কোনও নীতির ভিত হতে পারে না।
রণবীরবাবু আরও লিখেছেন, বামপন্থা শেষ হয়ে যায়নি। তিনি ভরসা রেখেছেন বাংলার বর্তমান বামপন্থী ঐতিহ্য, জনবাদী আন্দোলন, সংগঠনে, যাঁদের বিপুল সমর্থন পেয়েছে বর্তমান শাসক সরকার। রণবীর সুকৌশলে অধোবর্গের অস্তিত্ব সাপেক্ষে এই নতুন শ্রেণিবিভাজন করেছেন, যেখানে এক উচ্চবর্গ তৈরি হয়ে যায়। বামপন্থায় শোষক-শোষিত, শাসক-শাসিত বিভাজনের মতো। কিন্তু সেখানে তো নির্দিষ্ট মতাদর্শ থাকে। নিবন্ধ পড়ে মনে হচ্ছে যেন এক ‘বামপন্থা’র নবজন্ম হয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল, সাম্যবাদী মতাদর্শ ছাড়া বামপন্থা হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ‘নতুন গণক্ষমতার উত্থান’ কী করে হল, তা স্পষ্ট হল না।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
কথা হবে?
রণবীর সমাদ্দার সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফল এক জন সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে বিজিত দলগুলোর উদ্দেশে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছেন, যা জনবাদী রাজনীতির পরিপেক্ষিতে এই সঙ্কটকালে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তৃণমূলের জনবাদী রাজনীতি এবং সেই ধারণার দ্বারা পরিচালিত সমস্ত সরকারি কাজকর্ম এই চমকপ্রদ ফলের কারণ, যা নেত্রীকেও বিস্মিত করেছে, তার বিশ্লেষণ মৌলিকতার দাবি রাখে। খুব সঠিক ভাবেই তিনি বলেছেন, বামপন্থা শেষ হয়ে যায়নি। তবে বামপন্থী এবং দক্ষিণপন্থী বিরোধী দল এবং শাসক দলের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে প্রস্তাব লেখক রেখেছেন, তা কত দূর কার্যকর হবে, সে সন্দেহ থেকেই যায়।
অশোক কুমার দত্ত, কলকাতা-৫১
পড়ানো চলছেই
ঈশা দাশগুপ্ত (‘অনিশ্চিত শিক্ষার ভবিষ্যৎ’, ৭-৫) মনে করেন, করোনার করালগ্রাসের প্রভাব শিক্ষার উপরে পড়েছে। সহমত পোষণ করে বলছি, তবুও আমরা হাল ছাড়ব না। শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, সরকার যৌথ ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনলাইনে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করে চলেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার শিক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে, টেলিভিশনে ক্লাস করে সেই কাজ খুব সুচারু ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলা শিক্ষা পোর্টালে যে ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ দেওয়া হয়েছিল, তাতে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হয়েছে।
গত শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব দেওয়া শুরু হয়েছে। এখন ভারত সরকারের উচিত সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে পড়ুয়ারা উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা পায়। তাই হাল ছেড়ো না বন্ধু। সদ্যপ্রয়াত বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষের ভাষায় বলতে পারি, “কিছুই কোথাও যদি নেই/ তবু তো ক’জন আছে বাকি/ আয় আরো হাতে হাত রেখে/ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।” গত ফেব্রুয়ারি মাসে যখন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয়ের দরজা খুলে যায়, তখন শিক্ষক-শিক্ষিকারা আরও বেশি করে অফলাইন ক্লাস করিয়ে ছাত্রদের জ্ঞানস্পৃহা মিটিয়েছেন। এমনকি অনেক বিদ্যালয় দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মক টেস্ট নিয়ে খাতার মূল্যায়ন করেছেন। যদিও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপ্রিল মাসে আবার অফলাইন পড়াশোনা সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে, গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে। তবু শিক্ষক শিক্ষিকারা অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
কাঞ্চন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজবাটি, পূর্ব বর্ধমান
প্রকৃত বন্ধু
শাস্ত্রে আছে দুর্ভিক্ষে, রাজদ্বারে, শ্মশানে যিনি সঙ্গী হন, তিনিই প্রকৃত বন্ধু। আমার এক বন্ধুর বাড়ি আদ্যাপীঠ মন্দিরের পাশে। বাড়িতে বন্ধু, বন্ধুর স্ত্রী আর শাশুড়ি— এই তিন জন ছিল। অনেকের মতো ওরাও ভেবেছিল করোনা ওদের ছুঁতে পারবে না। কিন্তু মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস ভেদ করে সে আক্রমণ করল। অল্প জ্বরেই বন্ধু আর তার স্ত্রী টেস্ট করতে গেল। করোনা টেস্টের টিকিট ওদের ব্ল্যাকে কিনতে হল বেশি টাকা দিয়ে। রিপোর্ট এল পজ়িটিভ।
দু’ঘরে দু’জন, আর বন্ধুর শাশুড়ি আর এক ঘরে। তাতেও ঠেকানো গেল না। দু’দিন পরে তাঁকেও ধরল, আর বেশি বয়স বলে বোধ হয় অক্সিজেন স্তরও তাড়াতাড়ি কমতে লাগল। এ দিকে কোথাও ফাঁকা বেড নেই। এক দিন রাত ১২টা নাগাদ বৃদ্ধার অক্সিজেন লেভেল প্রায় ৭৪-এ নেমে এল। রাত কাটবে কি না, সন্দেহ। মরিয়া হয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নম্বরে ফোন করা হল। ও পাশে এক জন ফোন ধরলেন। বন্ধু সব কথা তাকে জানাল। তাঁরা বাড়ির ঠিকানা জেনে নিলেন, এবং আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার আশ্বাস দিলেন।
কথামতো প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ডোরবেল বেজে উঠল। বাইরে তিনটে ছেলে, বছর কুড়ি বয়স, দাঁড়িয়ে আছে। এক জনের ঘাড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার। পুরো পেশাদারদের মতো অক্সিজেন লেভেল টেস্ট করে, সিলিন্ডার ফিট করে দিল। অন্যদেরও অক্সিজেন টেস্ট করল। তার পর বলল “কালকে দিদাকে কোথাও ভর্তি করাতে হবে। আমরা অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে যাব। প্রতি দিন দু’বেলা খোঁজ নেব। আপনার কোনও ভয় নেই কাকু।” ছেলেগুলো নিজেদের বিপদের কথা না ভেবে, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে অচেনা, অনাত্মীয় এক জনের বিপদে গভীর রাতে ছুটে এসেছে, তাদের থেকে আপন আর কে হতে পারে?
পোপো মুখোপাধ্যায়, গড়িয়া, কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy