অভিরূপ সরকারের লেখা ‘গণতন্ত্রের নতুন পরীক্ষা’ (৬-১) সাম্প্রতিক কালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। ‘এক দেশ এক ভোট’ কথাটির মধ্যে রাজনীতি, কূটনীতির ছোঁয়া রয়েছে। যদিও একে সহজ সরল ভাবে দেশের লোকসভা ও বিধানসভা ভোট এক সঙ্গে করার কথা বললে হয়তো এমন অভিসন্ধিমূলক প্রস্তাব বলে মনে হত না। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি, নানা বিতর্ক আছে। গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের শাসন কাজ চালানোর জন্য ‘ভোট’ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে নির্বাচিত হন আমাদের প্রতিনিধি, যাঁরা দেশের শাসনভার কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু ভোট চালনা করতে একটি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় ও অপব্যয় হয়। সরকারের পক্ষ থেকে যা খরচ হয় তার থেকে অনেক বেশি খরচ হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। এক সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট হলে এই খরচ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে। জনগণের করের সেই বেঁচে যাওয়া টাকায় দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প বাণিজ্য, বিজ্ঞানের অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
ভোট দীর্ঘ দিন দেশের উন্নয়নের গতি স্তব্ধ করে দেয়, অফিস কাছারিতে সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়, পড়াশোনা শিকেয় ওঠে, জনগণ নানান অসুবিধার সম্মুখীন হন। সর্বত্র যেন একটা ‘সাজো-সাজো’ রব। এর আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দু’টি ভোট আলাদা হলে লোকসভা বা বিধানসভার অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধি আবার প্রার্থী হয়ে নতুন করে তাঁর এলাকায় ভোট করার কারণ হয়ে দাঁড়ান। দু’টি ভোট এক সঙ্গে হলে সেই সুযোগ কেউ পাবেন না। পাঁচ বছর অন্তর দু’টি ভোট এক সঙ্গে হলে ভোটদাতার সংখ্যা এবং ভোট দানের হার বাড়বে। লেখাপড়া, কাজকর্ম নিয়ে যাঁরা বাইরে থাকেন, তাঁরাও গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে পারবেন। ভোট পাঁচ বছরে এক বার হলে তবু তাকে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ের ভোট বছরে এক বার বা তার বেশি হলে সেটা অত্যাচারের সমতুল্য। বর্তমানে তেমন ভোট-ই তো চলছে।
অন্য দিকে, এক সঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের প্রবণতা থাকে দল দেখে ভোট দেওয়ার— প্রবন্ধের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। এখন গ্ৰাম থেকে শহর সর্বত্র নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। এখনও দল দেখে ভোট দেওয়া ভোটারের সংখ্যা কম নয়। এক সঙ্গে ভোট হলে কিছু ভোটার দল দেখে ভোট দেবেন এবং কিছু জন প্রার্থী বিচার করে ভোট দেবেন। ফারাক কিছু থাকবে না। লেখকের এ-কথার সঙ্গেও একমত হতে পারছি না যে, ছোট বড় আঞ্চলিক দলগুলোই গণতন্ত্র ধরে রাখে, তার মানে সর্বভারতীয় দলগুলো সেই কাজে অপারগ। তা-ই যদি হত, তবে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ প্রায় ৭৮ বছর ভারতের গণতন্ত্র স্বমহিমায় বিরাজ করত না, ভেঙে পড়ত। এ কথা সত্যি, এই সময়কালে গণতন্ত্রের উপর বিভিন্ন অত্যাচার, অবিচারের খাঁড়া নেমে এসেছে। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মাধ্যমে তাকে আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
আঞ্চলিক দলগুলি যে সব রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করার সব রকম কৌশল নেওয়া হচ্ছে। বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে। এগুলো কি গণতন্ত্রের ধারক-বাহকের পরিচয়? আসল সত্যটি হল, পদ, ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তি হাতের মুঠোয় থাকলে, ‘যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ’। তাই দেশের স্বার্থে, নাগরিকদের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে দু’টি ভোট এক সঙ্গে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
এককের লাভ
অভিরূপ সরকারের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা এবং বিধানসভার ভোট হত এক সঙ্গেই। তার পর থেকেই লোকসভা বিধানসভার ভোট হয়ে আসছে আলাদা আলাদা ভাবে। কী এমন প্রয়োজন হল, যে দুটো ভোট এক সঙ্গে করতে মরিয়া হয়ে উঠল শাসক দল বিজেপি? শুধুই কি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এই পদক্ষেপ? তা হলে বিজেপি একাধিক প্রার্থীকে লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করত না। সেই প্রার্থী জয়লাভ করলে, আগের পদ ছাড়ার কারণে অন্য জায়গায় পুনরায় নির্বাচন করতে হয়। ‘এক দেশ এক ভোট’ যখন বিজেপি চাইছে, তখন তাঁরা কেন একাধিক জায়গায় দাঁড়িয়ে অনর্থক পয়সা খরচ করেন? আসলে দেশের ক্ষমতাকে একটি দলের হাতে কেন্দ্রীভূত করতেই এই প্রয়াস। ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন যদি চালু হয়, তবে ভোটারদের লোকসভা এবং বিধানসভায় একটি দলকেই ভোট দেওয়ার প্রবণতা যে বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে লাভবান হবে বিজেপিই। সংসদীয় ব্যবস্থায় দেশের বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্ব হারাবে, যা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়।
রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বাতিল নয়
অভিরূপ সরকারের প্রবন্ধে আরও কিছু তথ্য অলিখিত থেকে গিয়েছে। ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে শেষে তাঁর মন্তব্য, এতে সর্বভারতীয় দল বিজেপি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। তাঁর লেখায় এই প্রস্তাবিত নীতির ‘সুবিধা’ এবং ‘অসুবিধা’ প্রায় সমান-সমান। স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ দিন লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নির্বিঘ্নে এক সঙ্গেই হয়েছে। ভুললে চলবে না, ভারতে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র টিকে আছে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির কল্যাণেই। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে বর্তমান ৩৬টি বিধানসভায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক আঞ্চলিক দল আছে। এদের মধ্যে এক রাজ্যে অন্য আঞ্চলিক দলের ‘প্রবেশ নিষেধ’ হলেও কেন্দ্রে ক্ষমতার অংশীদার হতে দিল্লিতে গিয়ে হাতে হাত মেলাতে তাদের অসুবিধা নেই। তাই আঞ্চলিক দলগুলি রাজ্যে কুস্তি করেও কেন্দ্রে গিয়ে দোস্তি করে। এক-একটা রাজনৈতিক দলের ‘মতাদর্শ’ এক-এক রকম। বাস্তবে পরিবারতান্ত্রিক আঞ্চলিক দলগুলির কোনও ‘মতাদর্শ’-ই নেই। তারা শুধু মাত্র নিজেদের দলের, এমনকি পরিবারের সঙ্কীর্ণ গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ‘অভিভাবক’-হীন রাজনৈতিক দল বা জোটে কেউ কাউকে মানে না।
শুধুমাত্র আঞ্চলিক দলগুলির সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন হলে, তা হবে একপ্রকার মাথাহীন দেহ, মাথার অভাবে বিভিন্ন দলগুলি যেমন-খুশি বা নিজের দলের নেতৃত্বের কথামতো চলতে থাকবে। ‘অভিভাবক’-হীন ওই সরকারের আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থেও লড়ালড়ি করবে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটেরই শাসনাধীন অন্য এক রাজ্যকে দায়ী করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিভিন্ন রাজ্যের নদীগুলির মধ্যে জলবণ্টন, আন্তঃরাজ্য খাদ্যপরিবহণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আর এ রকম সরকার হলে বিদেশ নীতি তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, যার নজিরও আছে পূর্বের কয়েকটি জোট সরকারের আমলে। সর্বভারতীয় দলের শাসনাধীন রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনে যে বাধ্যবাধকতা থাকে তা ওই সরকারের থাকবে না। তাই কংগ্রেস দলের ক্ষমতা যত কমে যাক না কেন ওই সর্বভারতীয় দলকে এখন ‘পছন্দ’ করছে না কোনও আঞ্চলিক দল। ফলে শত সুবিধা থাকলেও, ‘এক দেশ এক ভোট’ হলে শুধুমাত্র সর্বভারতীয় দল সুবিধা পেয়ে যাবে, এই যুক্তিতে তা বাতিল করা যায় না।
নিকুঞ্জবিহারী ঘোড়াই, পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর
আবর্জনাময়
টালিগঞ্জ এলাকায় আমাদের বাড়ির গলির মুখটা থাকত আবর্জনাময়। সম্প্রতি সেখানকার ভাঙা ডাস্টবিন সরিয়ে কংক্রিটের পাকা জায়গা করে নতুন ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও লোকজন রাস্তার উপরেই ময়লা ফেলে যাচ্ছে। লোকের বোধোদয় কবে হবে?
সূূর্য দত্ত, কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy