Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

অপেক্ষায় আছি কবে এই দুর্দিন কাটবে

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি। এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

সান ফান্সিসকো। লকডাউনের জেরে সুনসান রাস্তা।

সান ফান্সিসকো। লকডাউনের জেরে সুনসান রাস্তা।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫২
Share: Save:

বারো বছর বয়সে দেশ ছেড়েছি বাবা-মার হাত ধরে। দশ বছর সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করার পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের জন্য মার্কিন মুলুকে আগমন। সিঙ্গাপুর বোধ হয় একমাত্র জায়গা যেখানের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা জাতীয় স্তরে স্বীকৃত। তাই বাংলা লেখাটা এখনও ভুলিনি। আর কিছু শব্দ চয়ন আর বানান ভুলটা ঠিক করে দেবার জন্য পাশে মা না থাকলেও গুগল ট্রান্সলেট আর স্পেল চেকার তো আছে। গত এক বছর পশ্চিম উপকূলের সানফ্রান্সিসকোর গুগল ক্লাউড-এ মেশিন লার্নিং আর কম্পিউটার ভিশন নিয়ে অ্যাকশন রেকগনিশন নিয়ে কাজ করছি।

জানুয়ারির শেষে চিনা নববর্ষের পর সেখান থেকে আগত সব মানুষদের হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল। প্রায় একমাস যাবৎ আমেরিকায় ধাপে ধাপে কর্মক্ষেত্র বন্ধ হচ্ছে। প্রথমটা রেকমেন্ডেড “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” নির্দেশ জারি হল। তখনও অফিসে গেছি, কারণ আমার মতো কুঁড়ে মানুষদের জন্য অফিসেই ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ, স্ন্যাক্স, ডিনারের ঢালাও খাবারের ব্যবস্থা উপেক্ষা করা খুবই মুশকিল। কিন্তু না, পরের দিনই আরও কড়া নির্দেশ, খাবার-দাবার বন্ধ, আর বাড়িতে থেকেই কাজ করতে হবে। আমাদের প্রফেশনে বাড়িতে থেকে কাজ করাই যায়, তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু অসুবিধাটা অন্য জায়গায়। খাব কি? বাড়িতে নেই তেমন ব্যবস্থা। ওদিকে ক’দিন আগেই সিঙ্গাপুর থেকে মা-বাবা বাড়িতে শুকনো খাবার মজুত করার জন্য বলে যাচ্ছিল, যথারীতি তেমন আমল দিইনি। প্রথমে ক’দিন অনলাইন নানা রকম অর্ডার করলাম। তার পর যেতেই হল কিনতে। ঢুকতেই হল চাল, ডাল, তেল, নুনের জগতে। মায়ের রান্না বা অফিসের পাওয়া খাবারের পসার, যা এত দিন টেকেন ফর গ্রান্টেড ছিল, তার বাইরে গিয়ে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম খুন্তি নাড়া আর তার পর রান্নার জায়গাটি পরিষ্কার করার চ্যালেঞ্জটা কোথায়। “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” করতে গিয়ে যে এত বেশি ওয়ার্ক অ্যাট হোম করতে হবে আগে বুঝতে পারিনি।

আমার অফিসের মেন্টরের বাবা-মা উহানে থাকেন। খবর নিয়েছি এ দুর্যোগ কাটিয়ে তাঁরা এখন ভাল আছেন। শুনেছি উহানে পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গেই সরকার বাসিন্দাদের বাড়িগুলি সিল করে দেন। সপ্তাহে এক দিন এসে সরকারের তরফ থেকে দরজার বাইরে রেশন দিয়ে যাওয়া হত, আর সেই দিয়েই কাজ চালাতে হত তাঁদের।

ক’দিন আগে পর্যন্ত বাড়ির পাশের পার্কটায় বিকেলবেলায় একটু ঘুরতে যেতাম। এরপর লাল ফিতে দিয়ে পার্কটিও ঘিরে দেওয়া হয়েছে। কষ্ট হল, বুঝলাম আমার ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে দেখতে পাওয়া এক চিলতে আকাশটা দেখেই এ বার থেকে ক্ষান্ত থাকতে হবে। মনে হচ্ছে দম বন্ধকর পরিস্থিতি। তবে সে দিন রাত্রেই নিউ ইয়র্কে কর্মরত এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা হল। শুনলাম, কংক্রিটের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে খাঁ খাঁ করা রাস্তায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হু হু করে ছুটতে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনে বা শববাহী গাড়ীর দৃশ্য দেখে তাদের দিন কাটছে। তার মধ্যে প্রতি দিন সন্ধ্যে সাতটায় সব স্বাস্থ্যকর্মী বা অন্যান্য আপৎকালীন পেশায় থাকা মানুষদের জন্য নিজ নিজ বাসস্থানের জানালা থেকে হাততালি বা হর্ষধ্বনি দিয়ে জীবনকে ছুঁয়ে থাকার চেষ্টাটাই এখন সম্বল। এখনও অবধি নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’হাজার, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় সাতশো ছুঁইছুঁই।

না, বড্ড বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছি। থাক এ সব। সোশাল মিডিয়ায় প্রতি দিন অজস্র মেসেজের ছড়াছড়ি। তার সঙ্গে চলছে “দেন এন্ড নাও” ছবি পোস্টের চ্যালেঞ্জ। চলছে করোনার প্রকোপের থেকে নিজে ভুলে থাকা, আর অন্যকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টায় নাচ, গান, আবৃত্তি পোস্টের ভিড়। বুঝতে পারছি মানুষ নিজে ভাল থাকতে আর সবাইকে ভাল রাখতে চাইছেন। বেরিয়ে আসছে অনেক সুপ্ত প্রতিভাও। আমিও বন্ধুদের সঙ্গে গিটার আর কি-বোর্ড নিয়ে জ্যামিং করলাম। আমার ভাল লাগছে যে, আমাদের দেশ কেমন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ করে বিপর্যস্ত দেশগুলির পাশে দাঁড়াচ্ছে।

পরমাণু বোমা নয়, যুদ্ধাস্ত্র নয়, এক অদৃশ্য ভাইরাস শেষ পর্যন্ত আমাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিল। শুধু মনে হচ্ছে এর শেষ কোথায়? প্রকৃতির সব কিছু আমরা কেমন টেকেন ফর গ্রান্টেড ভেবে নিয়েছিলাম, প্রকৃতি কি তার শোধ তুলছে? জানিনা, তবে কেন হল ভেবে সময় কাটানোর দিন এখন নয় এটা বুঝতে পারছি। আমাদের সিইও প্রত্যেক কর্মীর কাছেই করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু মতামত চেয়েছিলেন। রোগটার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আজ গুগল এবং অ্যাপেল-এর যৌথ প্রচেষ্টায় ব্লু-টুথের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন অ্যাপ দিয়ে কন্টাক্ট ট্রেসিং-এর কাজটি সহজতর করার কাজ শুরু হবে।

তবে যত দিন যাচ্ছে চিন্তা বাড়ছে। মা-বাবা আর আসতে পারল না। মে মাসে আসার কথা ছিল। তবে মন খারাপ করছে খুব। পৃথিবীর আর সকলের মতো আশা করে আছি কবে এই দুর্দিন কাটবে!

সোহম ঘোষ

সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।​)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus San Francisco
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy