Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Education System

সম্পাদক সমীপেষু: শিশুর শিক্ষা

‘শিক্ষা অভিযান’-এর মতো উদ্যোগগুলি শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করেছে।

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:০৫
Share: Save:

শিক্ষা জনগণের উন্নতির প্রধান স্তম্ভ। আমজনতার উন্নতি হলে, সেই দেশও উন্নত হয়। দেশের সাধারণ মানুষ পিছিয়ে পড়লে, তাতে পুরো দেশ পিছিয়ে পড়ে। জঙ্গল মহলের ৭টি জেলা তথা বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। এই অঞ্চলে ঘন অরণ্যচারী মানুষ এবং নিকটবর্তী গ্রামগুলো দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মানসম্মত শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। এই অঞ্চলটি প্রধানত তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায় অধ্যুষিত, যাঁরা মূলত কৃষি এবং কৃষি-সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগ এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করে চলেছে। পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং যোগ্য শিক্ষকের অভাবের কারণে এই অঞ্চলের অনেক শিশু প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পূর্বে বঞ্চিত ছিল এবং বর্তমানেও হচ্ছে।

একটি শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন এনজিও-র প্রচেষ্টায় এই সমস্যা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ‘শিক্ষা অভিযান’-এর মতো উদ্যোগগুলি শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করেছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেখানে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, যা অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক এবং শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক। ভৌগোলিক দূরত্ব, শিক্ষক সঙ্কট এবং ভাষাগত বাধা সত্ত্বেও বেশ কিছু অঞ্চলে স্থানীয়দের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং মাওবাদীদের উপদ্রব নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি দৃশ্যমান। এ ছাড়াও, জঙ্গল মহলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে পাঠদান পদ্ধতি গড়ে তোলা উচিত। আধুনিক প্রযুক্তি ও কমিউনিটি ভিত্তিক শিক্ষা প্রচলন করে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে। শিক্ষার প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জঙ্গল মহলের আরও বেশি শিশু প্রাথমিক এবং নার্সারি শিক্ষায় প্রবেশ করতে শুরু করলে, অঞ্চলটি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। এখনও অনেক কাজ বাকি। যেমন— উন্নত সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পরিকাঠামো এবং আরও বেশি জনগণের স‌ংযুক্ত হওয়া।

জঙ্গল মহলের শিশুরা আজ যে শিক্ষা পাচ্ছে, তার সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎটি জড়িত। প্রাথমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায় এই শিশুরা দারিদ্র, অশিক্ষা, কুসংস্কার, শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে অঞ্চলের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

সুস্মিতা মণ্ডল, জোতবাণী, পশ্চিম মেদিনীপুর

দায়িত্বজ্ঞানহীন

অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি সরকারি স্কুলগুলিতে বার্ষিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ সংক্রান্ত “সার্ভার গতিহীন, নম্বর তুলতে সমস্যা ‘বাংলার শিক্ষা’য়” (২৫-১২) খবরটি দেখে। ইদানীং প্রায় সর্বত্র ‘সার্ভার-ডাউন’ এবং ‘লিঙ্ক-ফেলিয়র’— এই দু’টি শব্দের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য কাজকর্ম খাবি খেতে থাকে। এখন সেই অবস্থাটা যে একেবারে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই শুরু হয়ে গেল, এটাই বড় উদ্বেগের! চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল সময়মতো হাতে না এলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ভোগান্তি হয়, সেই ভোগান্তি হয় প্রাথমিক স্তরেও; বিশেষত স্কুল বদলের প্রয়োজন হলে। তবে আমার উদ্বেগের আরও এক গভীর কারণ হল, পরীক্ষার ফলপ্রকাশে একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার নজিরবিহীন অভাবের দৃষ্টান্ত দেখে।

আমার গৃহপরিচারিকার ক্লাস ওয়ানে পড়া ছ’বছরের শিশুটির পরীক্ষার ফলপ্রকাশ ব্যবস্থা দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছি। অভিভাবকদের ডেকে, ছাপানো রেজ়াল্ট তাঁদের হাতে দিয়ে সেটি আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্লাস টিচার। অজুহাত, স্কুল খুললে নতুন বছরে সংশোধিত মার্কশিটটি দেওয়া হবে। কিন্তু সংশোধনের বিষয়টি যে কী, সেটি ভেঙে বলেননি। পাশ-ফেল না থাকায় নব্বই জন অভিভাবক মাথা না ঘামালেও, সেই দলের এক জন অন্তত সাহস করে জানান যে, সারা বছর ধরে ক্রমান্বয়ে নেওয়া তিনটি পরীক্ষার ফল যোগ করে যে নম্বর হাতে লেখা হয়েছে, সেই ‘মোট’ নম্বরেই তো ভুল আছে। উপায়ান্তর না দেখে, শ্রেণিশিক্ষিকা তখন অজুহাত হিসেবে তুলে ধরেন— সার্ভার ডাউন, রাত জেগে নম্বর আপলোড করা এবং একই সঙ্গে তাঁর নিজের মেয়ের পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকার কারণগুলি। ইতিমধ্যেই তিনি অবশ্য সেই ভুল নম্বরের মার্কশিটটি স্কুলের ওয়টস্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দিয়ে প্রমাণ রেখেছেন যে, নির্ধারিত সময়েই ফলপ্রকাশ করে দিতে পেরেছেন তিনি। সেই প্রকাশিত ফলটিতে যোগে ভুল থাকার দরুন গ্রেড ‘এ’ পাওয়া নম্বরগুলি সব গ্রেড ‘সি’ হয়ে গেছে। কলকাতার একটি নামকরা স্কুলে ক্লাস ওয়ানের একটি সেকশনে ক্লাস টিচারের স্বাক্ষর এবং প্রধান শিক্ষয়িত্রীর স্বাক্ষরের স্ট্যাম্প-সহ সমস্ত ছাত্রের সেই ভুল রেজ়াল্ট কিন্তু সর্বত্র চলে গেল! যাতে হাতে লেখা এবং টাইপ করা দু’রকম নম্বরই এন্ট্রি করা হয়েছে এবং যোগ করার সময় ডিজিট ‘4’গুলি বদলে ডিজিট ‘1’ হয়ে গেছে। তাই ‘47+ 48+ 48+47’ ভুল এন্ট্রিতে হয়ে গেছে ‘17+18+18+17’ এবং গ্রেড ‘এ’ গুলি সব গ্রেড ‘সি’ মানের।

প্রশ্ন, শ্রেণিশিক্ষিকা তো প্রধান শিক্ষয়িত্রীকে সবটা জানিয়ে দু’দিন পরেও রেজ়াল্ট দিতে পারতেন! ঘটা করে অভিভাবকদের ডেকে, জেনে বুঝে একটা ভুল রেজ়াল্ট কেনই বা ধরিয়ে দিয়ে আবার তা ফেরত নিয়ে নিলেন! কেনই বা সেই অসংশোধিত রেজ়াল্টটি অভিভাবকদের ওয়টস্যাপ গ্রুপে দিনের দিন পাঠিয়েও দিলেন? জানা গেল না, প্রধান শিক্ষয়িত্রীর অজ্ঞাতে, না কি তাঁর সম্মতিতেই এত বড় একটা অনৈতিক কাজ ঘটে গেল! এও জানা গেল না, ওই শ্রেণিশিক্ষিকা ঠিক কার কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য? তিনি কি নিজের স্বাক্ষর এবং ওই স্কুলের সর্বোচ্চ প্রধানের স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প ব্যবহারের আইনি গুরুত্ব জানেন না? সার্ভার-ডাউনের অজুহাত দেখিয়ে এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে চাপা দেওয়া যায়?

এ প্রশ্ন কি উঠবে না যে, লাগামটা তা হলে ঠিক কোথায় এবং কার-কার হাতে রয়েছে?

মন্দার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৬৮

অগ্রগতি কই

“‘বর্বর’ শক্তিকে রুখতে হবে, বসু-স্মরণে ডাক কারাটের” (১৮-১) শীর্ষক সংবাদে জানলাম, সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাট বলেছেন, জ্যোতি বসু মানে ‘বাম আন্দোলনের অগ্রগতির প্রতীক’। প্রশ্ন হচ্ছে, অগ্রগতির মাপকাঠি কী? বাম আন্দোলন কি সত্যিই এগোচ্ছে, না পিছোচ্ছে? সংসদীয় গণতন্ত্রে একটা মাপকাঠি আছে। সেটি হচ্ছে, সংসদে বা আইনসভায় দলগত শক্তির মান। সেই মাপকাঠিতে দেখা যাক বাম আন্দোলন কোথায় আছে।

ত্রিপুরা: সিপিএম এক সময়ে বিরোধীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এখন প্রায় মুছে যাওয়ার মতো অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গ: শূন্য। কেরল, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, প্রভৃতি রাজ্য মাঝে-মাঝে লোকসভায় সিপিএমকে ছাড়পত্র দিয়েছে। এখন বেশ কিছু কাল তারাও সিপিএমের প্রতি বিমুখ। কারাট সম্ভবত দিল্লির ভোটার। তিনি এ-যাবৎ কোনও সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন? যত দূর জানি, না।

১৯৬৪ সালে সিপিএম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৫২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে জিতে খাতা খুলেছিল। এই বিচারে ২০০৪ সালটি ছিল সিপিএমের স্বর্ণযুগ। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৪৩। পরের তিনটি নির্বাচনে অবক্ষয় হতে হতে সিপিএম প্রস্তর যুগে ফিরে গেছে বলা যায়। সংখ্যা এক আঙুলে কুলিয়ে যাচ্ছে।

একে কি অগ্রগতি বলে?

মিহির গঙ্গোপাধ্যায়, কোন্নগর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Education system Junglemahal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy