অনুষ্কা শর্মা ও বিরাট কোহালি ধন্যবাদার্হ, অন্তত তিন দিনের জন্য তাঁহারা গোটা দেশকে ‘ধর্ম’যুদ্ধ হইতে মুক্তি দিয়াছিলেন— পাকিস্তানের প্রতিনিধির সহিত মনমোহন সিংহের বৈঠকের ন্যায় ‘মারাত্মক’ সংবাদও জনমানসে তেমন আঁচড় কাটিতে পারে নাই। তাঁহারা লুকাইয়া বিবাহ সারিতেই বিদেশে পাড়ি দিতেছেন কি না, এই জল্পনায় লোকের সময় কাটিয়াছে। মানুষের আগ্রহ স্বাভাবিক, কারণ এক অর্থ ইহা রূপকথার বিবাহ। রাজনীতি (এবং, অধুনা হিন্দুত্ব) ব্যতীত আর যে দুইটি বিষয়ে গড়পড়তা ভারতীয়র অসীম আগ্রহ, বিরাট এবং অনুষ্কা যথাক্রমে সেই ক্রিকেট ও বলিউডের সর্বাগ্রগণ্য মুখগুলির অন্যতম। দুই জনই ছকভাঙা, দুই জনই সফল, এবং বেশ কয়েক বৎসর যাবৎ তাঁহাদের সম্পর্কটি প্রকাশ্যে রহিয়াছে। মনস্তত্ত্বের তাত্ত্বিকরা বলিবেন, এহেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মনে ক্রমে একটি আত্মীকরণ ঘটে— মানুষ নিজের অবচেতনেই এই তারকাদের মধ্যে নিজেদের, এবং তাঁহাদের প্রাপ্তির মধ্যে নিজেদের প্রাপ্তি দেখে এবং সন্তুষ্ট হয়।
কিন্তু, সম্পর্কটি সাধারণ নহে। পাত্রপাত্রীর তারকা-পরিচিতির কারণে নহে, সম্পর্কের চলনের অ-সাধারণতার কারণে। কয়েক বৎসর আগে বিরাট কোহালির পারফর্ম্যান্স মন্দ হওয়ায় ভারতের ‘নেটিজেন’রা অনুষ্কাকে আক্রমণ করিয়াছিল। তাহার কদর্যতার মাত্রার সহিত এই দেশ পরিচিত— ‘ক্রিকেটপ্রেমী’রা হতাশ হইলে তেমন ভাষা এবং ভঙ্গিতেই আক্রমণ করিতে অভ্যস্ত। বিরাট রুখিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। বান্ধবীর সম্মানের প্রশ্নে তাঁহার অবস্থানটি ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে সুলভ নহে। কিন্তু যাহা আরও দুর্লভ, তাহার প্রমাণও বিরাট পেশ করিয়াছেন। গত বৎসর বিরাট ও অনুষ্কার মধ্যে সম্ভবত বিচ্ছেদ হইয়াছিল। সেই সময় আইসিসি টি টোয়েন্সি ট্রফিতে বিরাট অসাধারণ ব্যাটিং করায় নেটিজেনরা অনুষ্কাকে ‘ট্রল’ করিতে আরম্ভ করেন। এই বারও ‘প্রাক্তন’ প্রেমিকার পার্শ্বে দাঁড়াইতে বিরাট দ্বিধা করেন নাই। পারস্পরিক সম্মানের মাধ্যমে তাঁহারা সম্পর্কটিকে যে মর্যাদা দিয়াছেন, তাহা বড় সুলভ নহে। যে ভারতীয় ভক্তরা তাঁহাদের বিবাহের ছবি ‘শেয়ার’ করিতে ক্লান্তিহীন, সম্পর্কের মর্যাদার পাঠটিও যদি তাঁহারা গ্রহণ করিতেন, পুরুষতন্ত্রের শিকল কিছু শিথিল হইত।
কিছু ভক্তের গোঁসা হইয়াছে— তাঁহারা বলিতেছেন, বিবাহ লইয়া এমন লুকাচুরির কী ছিল? মিডিয়ারও প্রাণান্ত হইয়াছে— মহাতারকার বিবাহ, অথচ ছবি নাই, সংবাদ নাই। রাগ যদি করিতেই হয়, তবে বিরাটের উপর নহে, নিজেদের স্বভাবের উপর ক্ষুব্ধ হওয়াই বিধেয়। তারকা-জীবনের সব খবরের প্রতি সাধারণ মানুষের অসীম তৃষ্ণাই পাপারাৎজির জন্ম দিয়াছে। বিবাহ নামক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত একটি ঘটনাকে জনসমক্ষে না আনিবার, সেই সংক্রান্ত কোনও সংবাদ মিডিয়াকে না দেওয়ার পূর্ণ অধিকার যে কোনও তারকার আছে। বিরাট-অনুষ্কা সম্মানজনক ভাবে সেই অধিকার প্রয়োগ করিয়াছেন মাত্র। বরং, এই চূড়ান্ত প্রচারাকাঙ্ক্ষী সময়ে যে সচেতন ভাবে প্রচার হইতে দূরে থাকা যায়, বিরাট-অনুষ্কা সেই নিদর্শনও তৈরি করিলেন। জীবনের এই ইনিংসে তাঁহারা নট আউট থাকুন, তাঁহাদের জীবন-চলচ্চিত্র সুপারহিট হউক, ভক্তরা নিশ্চয়ই এমন প্রার্থনাই করিতেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy