স্বস্তির মুহূর্ত নরেন্দ্র মোদীদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী নিজে এখনও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিবৃতি দেননি। কিন্তু নোটবন্দি থেকে জিএসটি, আধার সংযুক্তিকরণ থেকে জনধন— সরকারের প্রতিটি বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সহকর্মী অরুণ জেটলির মুখমণ্ডল প্রশস্ত হাসিতে উদ্ভাসিত, বয়ানে যুদ্ধজয়ের পরিতৃপ্তি। আচমকা যেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী গোটা মন্ত্রিসভাই। মুডি’জ ইনভেস্টরস সার্ভিস ভারতীয় অর্থনীতিকে যে শংসাপত্র দিল, তা প্রবল শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠল যেন মোদী-জেটলি জুটির জন্য। এমন এক অস্ত্র হাতে পেলেন নরেন্দ্র মোদীরা, যা বিরোধীদের এবং সমালোচকদের যাবতীয় আক্রমণকে এক লহমায় ভোঁতা করে দিতে সক্ষম, একই সঙ্গে বিরোধিতার দুর্গে বিধ্বংসী আঘাত হানতেও সমর্থ। মোদীর হাসি চওড়া হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক।
নোটবন্দি থেকে জিএসটি প্রবর্তন— একের পর এক বৃহৎ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করছিল মোদী সরকার, ক্রমশ তীব্র এবং ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল বিরোধী কণ্ঠস্বরও। সরকারি পদক্ষেপগুলো সাধারণ নাগরিকের জীবনে যে সব নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল, সেগুলোকে তুলে ধরেই সরব হচ্ছিল বিরোধী শিবির। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার যে ভাবে ৭.৯ শতাংশ থেকে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, তা নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সরকার নিজের মতো করে প্রতিটি পদক্ষেপের স্বপক্ষে যুক্তি সাজানোর নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সে সব যুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই খুব গ্রহণযোগ্য ঠেকছিল না বিশেষজ্ঞ মহলের বড় অংশের কাছে। সরকারের ভঙ্গিতেও আত্মবিশ্বাসের যথেষ্ট অভাব ছিল। মুডি’জ রেটিং লহমায় বদলে দিল ছবিটা। বিরোধী শিবিরের প্রবল রব আচম্বিতে স্বব্ধ যেন। আর সরকারের ভাবভঙ্গি যেন মুহূর্তে উজ্জ্বল এবং আত্মবিশ্বাসী।
তা হলে কি বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ এবং সমালোচনা ভিত্তিহীন ছিল? নোটবন্দি বা জিএসটি-তে কারও কোনও সমস্যা কি হয়নি? সমস্যা অবশ্যই হয়েছে। সাধারণ নাগরিক যে দৈনন্দিন জীবন চালাতে গিয়ে আতান্তরে পড়েছেন, সে আমরা সকলেই দেখেছি। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারও যে এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে, সেও কারও অজানা নয়। কিন্তু মুডি’জ রেটিং-য়ে ভারতের উত্থানের পর সরকার খুব জোর দিয়ে এ কথা বলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে যে, সরকার সাহসী এবং উপযুক্ত পদক্ষেপই করেছে। সাময়িক কষ্ট ভোগ করতে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে লাভই অপেক্ষায় রয়েছে। আর নতুন হাতিয়ারে সমৃদ্ধ সরকার পক্ষের সামনে বিরোধী শিবির মানসিক ভাবে যেন দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন
মুডি’জ এফেক্ট: চাঙ্গা বাজার, দাম বাড়ল টাকার, ডগমগ সরকার
মোদী সরকারের ‘সাহসী’ পদক্ষেপগুলোর ফলে আর্থিক বৃদ্ধি যতখানি কমেছে, ততখানি আবার কবে বাড়বে, সে কারও জানা নেই। নোটবন্দির ফলে কালো টাকার সর্বনাশ কতটা হয়েছে, জাল টাকা কতটা ধরা পড়েছে, জঙ্গিরা কতটুকু জব্দ হয়েছে, সে সবের কোনও স্পষ্ট হিসেব নেই। জিএসটি ব্যবস্থায় করের হার নিয়ে যে অসন্তোষ, তা কত দিনে এবং কোন পথে মিটবে সেও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও মুডি’জ রেটিং-য়ে ভারতের উত্থানের খবর যখন আসে, তখন ইতিবাচক এবং গৌরবজনক অনুভূতি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, ভারত আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে সঠিক দিশায় চলেছে এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করছে। তার জেরে ভারতীয় অর্থনীতির ছবিটা বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল হচ্ছে। এ নিশ্চয়ই একটি ইতিবাচক বিষয়।
ইতিবাচক সন্ধিক্ষণে পৌঁছল দেশের অর্থনীতি, মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু এর সুফল সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত কবে পৌঁছবে এবং কী রূপে পৌঁছবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। তবে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আগের চেয়েও উজ্জ্বল করে তোলার কৃতিত্ব মোদী সরকার দাবি করতেই পারে।
এই অর্জনের জন্য সরকারকে সাধুবাদ। এই অর্জন এমন এক সময়ে এল, যখন প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য ভোটমুখী। নির্বাচনে সুফল পাবেন মোদীরা, ধারণা বিশেজ্ঞদের। মোদী সুফল পেলেন কি না, ডিসেম্বরেই স্পষ্ট হবে। সুফল কিন্তু পেতে চান দেশের সাধারণ নাগরিকও। জাতীয় অর্থনীতি যে আগের তুলনায় মজবুত হয়েছে, এবং তার যে কিছু সুফল রয়েছে, দেশের নাগরিক কিন্তু তা প্রত্যক্ষ ভাবে উপলব্ধি করার অপেক্ষায়। মোদীকে এ কথাও মাথায় রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy