গত বছর তাঁর বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর্পোরেট কর থেকে ৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে আয়ের আশা রেখেছিলেন। —ফাইল চিত্র।
ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্র এই মুহূর্তে এক নাটকীয় পরিবর্তনের সম্মুখীন। কর্পোরেট অর্থনীতি বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, আর্থিক উদ্যোগ বাদ দিয়েও তালিকাভুক্ত ২৬০০-রও বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধেই বিগত সম্পূর্ণ বছরের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি লাভ করতে সমর্থ হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই উদাহরণ ২০২১-’২২-এর সম্পূর্ণটিই জুড়ে ৬০ শতাংশের আশপাশে বৃদ্ধিকে সূচিত করতে পারে। ২০২০-’২১-এর তুলনায় এই লভ্যাংশ দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু তা বস্তুতপক্ষে ছিল তার আগের বছরের অধোগতির থেকে সামান্য উত্থান মাত্র।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সংখ্যাতাত্ত্বিক নমুনার বাইরেও কর্পোরেট ক্ষেত্রের একটি বৃহৎ অংশ অবস্থান করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেশ কিছু তালিকা-বহির্ভূত বড় সংস্থা (যেমন হুন্ডাই, কোকাকোলা, পেপসি, আইবিএম এবং অ্যাকসেনচার) এবং ব্যাঙ্ক ও বিশালাকার সরকারি সংস্থা (যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল, ওএনজিসি, কোল ইন্ডিয়া ইত্যাদি)-র কথা। যদিও এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি (সরকারি ব্যাঙ্ক সমেত) আগের থেকে ভাল অবস্থায় রয়েছে এবং তালিকা-বহির্ভূত বৃহৎ সংস্থাগুলি তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির চেয়ে ভিন্নতর কিছু করেছে, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। লভ্যাংশের বৃদ্ধির ব্যাপারে সংযত থাকার বিষয়টি নন-ব্যাঙ্কিং সরকারি উদ্যোগগুলির ক্ষেত্রে সম্ভব হতে পারে। তা মেনে নেওয়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদযোগগুলির তরফে গুণগত মানের দিক থেকে খারাপ উৎপাদন (সামগ্রিক লভ্যাংশের মধ্যে যে সব উদ্যোগের অংশ নেহাতই সামান্য) সত্ত্বেও কেউ এ বছর লভ্যাংশে স্ফীতির আশা রাখতেই পারেন।
এই সুসংবাদের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যার মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নমুনায় উল্লিখিত বিক্রয়-সংক্রান্ত রাজস্ব (জুলাই-সেপ্টেম্বর চতুর্মাসিকে এক বছর আগের হিসাবের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি) অন্যতম। সেই সঙ্গে রয়েছে সুদপ্রদানের বিষয়ে স্থবিরতা, যা মোট লভ্যাংশের পরিমাণের বৃদ্ধিকেই সূচিত করে। ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কর্পোরেট ঋণ এবং ইকুইটির অনুপাত ছ’বছরের মধ্যে সব থেকে কম পরিমাণে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সব পরিসংখ্যান বিবিধ বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে পারে, যার মধ্যে শেয়ার বাজারের সার্বিক ভাবে উজ্জ্বল ছবিটিও বর্তমান। সম্ভবত ঘটনাটি তা-ই। কিন্তু যখন আয়ের বিবর্ধন লক্ষণীয়, তখন পণ্যমূল্য এবং আয়ের অনুপাত বিভ্রান্তিকর বলে বোধ হতে পারে।
এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে লক্ষ করার মতো বিষয় এই যে, যখন উৎপাদন ক্ষমতার উপযোগ ন্যূনতম, তখনও এমন ঘটছে এবং বেশ কিছু সংকটাপন্ন ক্ষেত্রেও তা ঘটছে। যাকে ‘আউটপুট গ্যাপ’ বলা হয়, তেমন ক্ষেত্রেও এমন ঘটলে বলা যেতে পারে যে, নতুন বিনিয়োগ না হওয়া সত্ত্বেও বিক্রয়ের ব্যাপারে বৃদ্ধির সুযোগ থেকে যাচ্ছে এবং সে কারণে অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে সুদের বোঝা চেপে বসছে। অর্থাৎ, যদি বিক্রয়ের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, লাভের ক্ষেত্র বিবর্ধনের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।
এখানে সরকারি রাজস্বের কিছু নিশ্চিত প্রভাব থেকে যাচ্ছে। গত বছর তাঁর বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর্পোরেট কর থেকে ৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে আয়ের আশা রেখেছিলেন। কার্যত এটি কোভিড সংক্রমণের বছর অর্থাৎ ২০২০-’২১-এর চেয়ে ২২.৬ শতাংশ বেশি। প্রসঙ্গত, সে বছর কর্পোরেট কর বাবদ আয়ের পরিমাণ ছিল ৪.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু প্রাসঙ্গিক ভাবে দেখা যায় যে, তার আগের দুই বছর ২০১৯-’২০ এবং ১০১৮-’১৯-এ আদায়ীকৃত কর্পোরেট কর ছিল এর চেয়ে কম। বলা যেতে পারে, রাজস্ব হ্রাসের দ্বারা দু’বার বিপর্যস্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর মূল্যায়নে খানিক সাবধানী থাকতে চাইছেন।
ফলাফলে দেখা যেতে পারে, যদি কেউ বছরের প্রথমার্ধের কর্পোরেট লভ্যাংশ সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানের উপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করতে চান, তা হলে সম্পূর্ণ বছরের লাভের পরিমাণ ২০১৮-’১৯-এর দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই বছর কর্পোরেট কর সংগ্রহ হয়েছিল ৬.৬৪ লক্ষ কোটি টাকা। যদি এ বছর লাভের পরিমাণ কর্পোরেট করকে তার পূর্বতন শীর্ষবিন্দু অতিক্রম করাতে না পারে এবং বাজেটের তুলনায় তা যদি বিপুল পরিমাণে বেশি না হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে যে, কর্পোরেট কর বিষয়টির মধ্যেই কিছু গন্ডগোল রয়েছে।
কর্পোরেট করের হারে সাম্প্রতিক পরিবর্তন, যা মোদী সরকারের দুই শাসনকালে ধাপে ধাপে ঘোষিত হয়েছে, আশা করা যায় তা রাজস্ব-নিরপেক্ষ হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর-ছাড়কে কমিয়ে কম হারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে কার্যকরী করের হার এবং ন্যূনতম করের হারের মধ্যে ফারাক সুবিশাল হয়ে না দাঁড়ায়। এ ধরনের সংস্কারের অভিঘাত যথেষ্ট বোধ্য। ন্যূনতম করের হারকে বৃহৎ অর্থনীতির অন্যান্য বিষয়ের কাছাকাছি নিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারটি এতে সম্ভব হবে।
বাজেটের দিন সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে, যার মর্ম হল এই সব পরিবর্তন রাজস্ব-নিরপেক্ষ কি না। সে ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবা করের হারও রাজস্ব-নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। কিন্তু তার বিপরীতই ঘটে থাকে। যদি তা এখন কর্পোরেট করের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, তবে অর্থমন্ত্রীকে সেই সব ক্ষেত্রে ভাল করে নজর দিতে হবে, যেগুলিতে কর ছাড়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy