ফাইল চিত্র।
নয়ছয় করিবার অভ্যাসটি কোনও ক্ষেত্রেই বাঞ্ছনীয় নহে। ইতিহাসে তো নহেই। অথচ আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ঘোষণা যে— গত অনুসন্ধান শেষ হইবার পর এক বৎসর না পুরাইতেই দিল্লির ষোড়শ শতাব্দীর পুরানা কিলায় আবার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরু হইবে— তাহাতে প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস লইয়া প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক নয়ছয়ের সংশয় এড়ানো অতিশয় কঠিন। সংবাদ-সূত্রে জানা যাইতেছে যে, এই কেল্লার ভূগর্ভে নাকি মহাভারতের ইন্দ্রপ্রস্থের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণ মিলিবার ঘোরতর সম্ভাবনা দেখিতেছেন সরকারি কর্তারা। তাই সদ্যসমাপ্ত খনন-অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও আবার নূতন করিয়া অনুসন্ধান শুরু করিবার নোটিস। প্রশ্ন দুইটি। এক, যদি বা এই সম্ভাবনা সত্য হয়, সে ক্ষেত্রেও এক বৎসরের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য নূতন করিয়া শুরু করা বিধিসম্মত কি না। সাধারণত, এই ধরনের ঐতিহাসিক ‘সাইট’ বা প্রমাণ-ভূমিতে খননকার্য চালাইবার নিয়মাবলি এতদ্দ্বারা লঙ্ঘিত হইতেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ত্বরান্বিত অনুসন্ধানের চোটে যদি এত মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ কোনও ভাবে বিনষ্ট হয়, তাহা অতীব দুর্ভাগ্যজনক হইবে। বিষয়টি গুরুতর। এএসআই একটি ঐতিহ্যপূর্ণ দায়িত্ববান সংস্থা। গত কয়েক দশকে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাহারা যথোচিত দায়বদ্ধতার সহিত পালন করিয়া দেশের ইতিহাসকে নানা ভাবে সুরক্ষিত রাখিয়াছে। রাজনৈতিক প্রণোদনা দিয়া তাহার কার্যক্রম পরিচালনা করা যদি সরকারি দুরভিপ্রায় হইয়া থাকে, এখনই তাহার কঠোর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ জরুরি।
দ্বিতীয়ত, এক বারের খননকার্যে কোনও প্রমাণ না মিলিলে আর এক বার খননকার্য প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে চালু প্রথা। কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, কী প্রমাণ মিলিবে, সে বিষয়ে সরকারি কর্তারা একটি পূর্ব ধারণা রাজনৈতিক ভাবে নিশ্চিত করিয়া রাখিবেন, এবং তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত লইবেন। পরিস্থিতি এখন যেমন দাঁড়াইয়াছে, তাহাতে যেন তেন প্রকারেণ ওই স্থলে ইন্দ্রপ্রস্থের তুলনীয় কোনও ভগ্নাবশেষ বাহির করিতেই হইবে, নতুবা জাতির অকল্যাণ। মুশকিল এইখানেই। মহাভারত বা রামায়ণের কাহিনি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে। কিন্তু শেষ বিচারে এই দুইটিই সাহিত্যকর্ম। নিশ্চিত ভাবে বাস্তব ঘটনার সহিত সংযুক্ত থাকিবার দায় এই দুই মহাকাব্যের নাই, কোনও কালে ছিল না। যে কোনও স্বাভাবিক বুদ্ধির মানুষ বুঝিবেন যে জাতির কল্পলোকে এই ধরনের সাধারণ মানসভূমি বিরাজ করিতে পারে, যাহার সহিত রক্তমাংসের দুনিয়ার সম্পর্ক না-ই থাকিতে পারে, থাকিলেও তাহা অতি সুদূর হইতেই পারে। গায়ের জোরে, অর্থের জোরে, কৌশলের জোরে সেই সব কাহিনিকে বাস্তব ইতিহাসে পরিণত করা চলে না। যদি তেমন কোনও দায় কোনও রাজনীতি নিজের স্কন্ধে তুলিয়া লয়, তাহাতে কেবল মিথ্যাচরণ হয় না, ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাইয়া বিপদের একটি বিরাট অবকাশ নির্মিত হয়। এমন একটি রাজনীতি যে এই মুহূর্তে এএসআইতে চলিতেছে, তাহার পরোক্ষ প্রমাণ, প্রথম খননকার্যের পরিচালককে দ্বিতীয় বারে আর দায়িত্ব দেওয়া হয় নাই, অথচ সাধারণ ভাবে কিন্তু তাহাই দস্তুর। এই দস্তুর-ভাঙা ত্বরান্বিত দ্বিতীয় প্রকল্প বলিয়া দেয়: পুরানা কিলা বিষয়ে বিজেপি-সরকার শাসিত এএসআই কর্তৃপক্ষের আগ্রহের কারণটি— ইতিহাস নহে, রাজনীতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy