Advertisement
E-Paper

মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে গুজব, ‘ব্লক্‌ড’ সমাজমাধ্যমে ১০৯৩টি অ্যাকাউন্ট! যুগে যুগে গুজবের চাষ বাংলায়, বদলেছে মাধ্যম

বাংলায় যখন কংগ্রেস জমানা, তখন বামেদের বিরুদ্ধে গুজব রটানোর অভিযোগ উঠত। আবার বাম জমানায় সেই কাঠগড়ায় কখনও দাঁড় করানো হয়েছে কংগ্রেসকে, কখনও তৃণমূলকে। এখন বাংলায় যখন তৃণমূল জমানা, তখন গুজবের ‘গুরু’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে বিজেপিকে।

Rumors have been spreading in West Bengal politics for a long time

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৪
Share
Save

রাজ্যপুলিশের বড়কর্তা জাভেদ শামিম বলেছিলেন, ‘‘গুজবের কারখানা চলছে!’’ গুজব ছড়ানো রুখতে মুর্শিদাবাদে এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। তাতেও শানায়নি। রাজ্যপুলিশকে এখনও পর্যন্ত ১,০৯৩টি সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে হয়েছে!

গত রবিবারই রাজ্যপুলিশকে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বলতে হয়, পাঁচ বছর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (এনআরসি) বিরুদ্ধে ম্যাঙ্গালোর, লখনউয়ের আন্দোলনের ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে ‘দীপাবলি, দশেরা, দুর্গাপুজোর মতো ধর্মীয় উৎসবে বাংলায় হিংসার ছবি’। ভুয়ো ছবি (ফেক) থেকে সতর্ক থাকুন।

কিন্তু গুজব থামেনি। মুর্শিদাবাদের ঘটনা আরও এক বার দেখিয়ে দিল, বঙ্গ রাজনীতিতে গুজব চলমান। সময়বিশেষে সব দলের বিরুদ্ধেই গুজব রটানোর অভিযোগ রয়েছে। আবার সময়বিশেষে সব দলই গুজবের ‘ভুক্তভোগী’। রাজনৈতিক দলগুলি সবসময়েই বলে, গুজব ছড়াবেন না। কিন্তু দেখা যায়, তাদেরই একটা অংশ গুজব ছড়ানোয় অভিযুক্ত হয়ে পড়েছে।

বস্তুত, যুগ যুগ ধরেই গুজব ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রায় সব দলই সেই অস্ত্র ব্যবহারের দোষে দুষ্ট। কিন্তু কোনও দলই নিজের দায় স্বীকার করে না। তারা দায় চাপায় তাদের বিরোধীদের ঘাড়ে। প্রযুক্তির উন্নতির পর ‘সত্য’ যাচাই করার হাজারো উপায় থাকলেও গুজব থামানো তো যাচ্ছেই না। বরং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই গুজব রটানো শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত রায় যেমন বলছেন, ‘‘গুজব চিরকালই অস্ত্র। এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে, গুজব রটানো বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, রাজনীতিকদের উদ্দেশ্য থাকে। গুজব সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর মাধ্যম। ইন্টারনেট এখন তাকে আরও সহজ করে তুলেছে।’’ গুজব রটানোর কারণ? প্রবীণ তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়ের জবাব, ‘‘বাঙালি গুজব চায় আর গুজব পছন্দ করে বলেই গুজব রটে।’’ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস জমানার সময় বামেদের বিরুদ্ধে গুজব রটানোর অভিযোগ উঠত। আবার পরবর্তীকালে বাম জমানায় কাঠগড়ায় কখনও দাঁড় করানো হয়েছে কংগ্রেসকে আবার কখনও তৃণমূলকে। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল জমানায় ‘গুজবের গুরু’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে বিরোধী বিজেপিকে।

যাটের দশকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন সম্পর্কে বামেদের তরফে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রফুল্ল স্টিফেন হাউসের মালিক। জ্যোতি বসুর বিলেতসফরের সময় রটনা ছিল, তিনি নাকি ইংল্যান্ডে গিয়ে শরীরের রক্ত বদলে আসেন! স্টিফেন হাউসের মালিকানা বা বিলেতসফরে রক্তবদল— কোনও ‘গুজব’ নিয়েই দুই মুখ্যমন্ত্রী নিজমুখে কোনও জবাব দেননি। যদিও দলগত ভাবে কংগ্রেস বা সিপিএম জবাব দিয়েছে। দু’টি বক্তব্যের কোনওটিরই সারবত্তা প্রমাণিত হয়নি। নিছকই গুজব। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জমানার শেষদিকে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের সময়ে নানাবিধ গুজবের অভিযোগ তুলেছিল বামেরা। হাজার হাজার শিশুর পা চিরে হলদি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ভাষ্যকেও ‘বিরোধীদের তৈরি গল্প’ বলে দাবি করে তারা। আবার তৃণমূল জমানাতেও গত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনা ভেসে বেড়িয়েছে, যার সঙ্গে সত্য বা বাস্তবের প্রায় কোনও সম্পর্ক নেই। মুর্শিদাবাদে তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য গুজবের ইতিহাসের মধ্যে ঢুকতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কোনও গুজব নেই। যা এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে এসেছে, তা-ও সত্যের থেকে বহু দূরে। অর্ধসত্যের কাছাকাছি।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম এবং বিজেপির চিরকালীন হাতিয়ার গুজব। সিপিএমের লোকেরাই ছেলেধরা গুজব রটিয়ে দিয়ে আনন্দমার্গীদের হত্যা করেছিল বিজন সেতুতে। আর বিজেপি-ও ‘ফেক’ ছড়িয়ে, ভিন্‌রাজ্যের ছবি দিয়ে বাংলার পরিস্থিতিকে বিষাক্ত করতে চাইছে।’’ তবে নন্দীগ্রামে কোনও গুজব ছিল না বলেই দাবি কুণালের। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে এখনও অত মানুষ নিখোঁজ কেন?’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রফুল্ল সেনের প্রসঙ্গে যাননি। তিনি নন্দীগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘সে দিন যারা রটিয়েছিল, হলদি নদী শিশুদের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে, তারা এখন হয় তৃণমূলে নয় বিজেপিতে।’’ তবে সুজন জানিয়েছেন, ক্ষমতার জন্য গুজব রটানো হয়। রাজনীতিকদের একটা অংশ তা করে। বিভিন্ন দলের প্রবীণ রাজনীতিকেরা একান্ত আলোচনায় বলছেন, গুজব ছিল, আছে এবং থাকবে। এক প্রবীণ বামনেতার কথায়, ‘‘বাঙালি জাতি অনেক জাতির থেকে চিন্তায় প্রগতিশীল। কিন্তু হিংসা এবং কাঁকড়াবাজি এই জাতির গভীরে প্রোথিত। গুজব তারই প্রতিফলন।’’

সংক্ষেপে
  • সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শমসেরগঞ্জ-সহ কিছু অঞ্চলে।
  • মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার তদন্তে বুধবার ২০ সদস্যের সিট গঠন করে রাজ্য পুলিশ।
West Bengal Politics Murshidabad Unrest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।