ফাইল চিত্র।
আরও একটা বিপুল জয় পেল তৃণমূল। বেশ কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যের যে কোনও নির্বাচনে তৃণমূলের জয় যেমন অনিবার্য এবং অভ্যাসগত হয়ে উঠেছে, তেমন ধারাই অব্যাহত রইল এ বারের পুর নির্বাচনেও। ডোমকলে দীর্ঘ দিনের বাম ঘাঁটি ধসে পড়ল, স্বাধীনতা উত্তর ভারতে প্রথম বার রায়গঞ্জে কংগ্রেসের দুর্গ তছনছ হল, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর পাহাড়েও সমতলের ফুল ফুটল। আরও এক বার প্রমাণিত হল, মহানগর থেকে মফস্সলে, শহর থেকে গ্রামে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট সুদৃঢ়। জনভিত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ যখন এতটাই সুদৃঢ়, তখন ভোটের দিনে অবাধ হিংসার অভিযোগ ওঠার অবকাশটা তৈরি হয় কেন? কেন কিছুতেই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় না কোনও নির্বাচন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি, তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের নানা জনমুখী প্রকল্প, প্রশাসনে দৃশ্যমান গতি— এই সবে সওয়ার হয়েই বার বার বিপুল জয়। বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অর্থাৎ প্রশাসনিক সাফল্য সম্পর্কে তৃণমূলের আত্মবিশ্বাসে কোনও ঘাটতি নেই। তা হলে রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসে ঘাটতির অভিযোগ উঠছে কেন? প্রত্যেকটি বিরোধী দল সমস্বরে বলছে, অবাধ হিংসায় লুঠ হয়েছে গণতন্ত্র। সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত গুলি, বোমা, বন্দুক আর বাইক বাহিনীর দাপটের ছবি আরও জোরদার করছে অবাধ হিংসার সে অভিযোগকে। ফলত সাফল্য আর প্রশ্নাতীত থাকছে না। জয় বিপুল হচ্ছে, কিয়দংশে নিষ্কণ্টকও হচ্ছে, কিন্তু নিষ্কলঙ্ক হচ্ছে না।
তৃণমূলকে আত্মমন্থন কিন্তু করতেই হবে। প্রতিটি জয় আরও বিনম্র করছে দলকে— বার্তা স্বয়ং দলনেত্রীর। সে বার্তা যে দলের সব স্তরে পৌঁছচ্ছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে তৃণমূলের নেতৃত্বকেই। নেত্রীর বার্তা বিনম্রতার, আর দৃশ্যপটটা হিংসার— এমন বৈপরীত্যের পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই কাম্য নয়। কাম্য এমনই নির্বাচন, যেখানে সবচেয়ে বড় জয় পায় গণতন্ত্র। কাম্য এমনই নির্বাচন, যেখানে জনাদেশ হয় নিষ্কলঙ্ক। রাজনৈতিক ভাবে যদি আত্মবিশ্বাসী হয় প্রতিটি পক্ষ, তা হলে সেই নিষ্কলঙ্ক জনাদেশ মোটেই দুর্লভ বস্তু নয়।
সামনে আরও অনেক বড় নির্বাচন— পঞ্চায়েত নির্বাচন। গোটা বাংলা জুড়ে পালিত হবে গণতন্ত্রের সে উত্সব। কারও রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসেই যেন ঘাটতি না থাকে সে উত্সবে। অবাধ হিংসার কোনও দৃশ্যপট আর যেন তৈরি না হয়। প্রয়োজনে এখন থেকেই রাজনৈতিক প্রস্তুতি শুরু হোক সেই লক্ষ্যে। অবাধ হোক সামনের প্রতিটি নির্বাচন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy