ভারতের নীলবসনা কন্যারা বিশ্ব ময়দানে জিতিতে পারেন নাই। উইমেনস ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের নিকট হারিয়া গিয়াছেন। দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা থাকিতে সক্ষম হন নাই। প্রায় সমগ্র দলই সর্বসমক্ষে ভাঙিয়া পড়িয়াছেন। দেশবাসী সান্ত্বনা-শাবাশ দিয়াছেন। এইখানেই এই ঘটনার ইতি হইতে পারিত। দুই-চারিখানি বাক্য খরচ করিয়া সবাই নিজ কাজে মনোনিবেশ করিতেন। মহিলাদের ‘প্রান্তিক’ ক্রিকেট বিস্মৃত হইত। কিন্তু এ-বার সম্ভবত তাহা হইবে না। তাহার কারণ, দেশ জুড়িয়া এ বার মহিলাদের ক্রিকেট বিষয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা গিয়াছে। মিতালি রাজেরা মাঠে নামিলেই বহু মানুষ টেলিভিশন খুলিয়া বসিয়াছেন। ভারতীয় কন্যাদের জয় কামনা করিয়াছেন। এবং ফাইনালের দিন তাঁহারা হারিয়া যাওয়ায় বিশেষ বিমর্ষ হইয়াছেন। ইহা অভূতপূর্ব। ইহার পূর্বে মহিলাদের ক্রিকেট খেলা লইয়া কোনও মাতামাতি তো ছিলই না, বরং নানা ধরনের ব্যঙ্গবিদ্রুপই রীতি ছিল। ‘ক্রীড়াপ্রেমী’দের নিকট মেয়েদের ক্রিকেট বসিয়া দেখিবার যোগ্য খেলা ছিল না, খেলোয়াড় হিসাবে মেয়েরাও দর্শনীয় ছিলেন না। কিন্তু চাকা ঘুরিয়াছে।
কী করিয়া ঘুরিল? খেলোয়াড়দের প্রতিভা, পরিশ্রম এবং তীব্র আকাঙ্ক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু সাফল্যের চাকা, বিশেষত একটি পেশাদার দলগত-ক্রীড়ার ক্ষেত্রে, কেবলমাত্র খেলোয়াড়দের প্রতিভা, পরিশ্রম বা আকাঙ্ক্ষার তীব্রতায় ঘুরিতে পারে না। এই সমস্ত গুণের সহিত যদি উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায়, তবেই তাহা সচল হয়। এই বার মহিলাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাইবার পিছনে বেশ কিছুটা ভূমিকা পালন করিয়াছে বিসিসিআই। ক্রিকেট বোর্ড মহিলাদের ক্রিকেটকে পরিকাঠামো ও প্রচারের সুযোগ দিয়াছে এবং খেলোয়াড়দের সহিত নির্দিষ্ট চুক্তি করিয়া ও ফি বৃদ্ধি করিয়া সাহায্য করিয়াছে। এই সব কারণেই খেলার মান এবং পেশাদারিত্ব দুইই বাড়িয়াছে। ইংল্যান্ডের মাঠে তাহারই প্রতিফলন।
কিন্তু বিসিসিআই-এর দায়িত্ব এইখানে শেষ হয় না। মূলধারা বড় কঠিন ঠাঁই। মহিলাদের ক্রিকেটকে মূলধারায় আনিবার জন্য বিসিসিআইকে যথেষ্ট বিনিয়োগ করিতে হইবে। কেবল অর্থ নহে, সময়ও। মহিলাদের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সৃষ্টি ও লালন করা এবং তাহাকে লাভের কড়িতে রূপায়ণের উপায় ভাবিতে হইবে। যেমন, ভারতে মহিলাদের টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট প্রবর্তনের প্রস্তাব আসিতেছে। তাহাতে বিদেশি খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণের কথাও ভাবা যাইতেই পারে। প্রথমেই সেই উদ্যোগ আইপিএল-এর ন্যায় সাফল্য অর্জন করিবে না, কিন্তু ক্রমশ মেওয়া ফলিতে পারে। তাহার ভরসা বিলক্ষণ। কাহার ভরসা? দর্শকের ভরসা। যে দর্শক অফিস হইতে সত্বর ফিরিয়া মহিলাদের টেনিস দেখেন, অলিম্পিকস বা কমনওয়েলথ গেমস-এ জিমন্যাস্টিকস দেখেন, সাঁতার দেখেন, সাইনা নেহওয়াল বা পি ভি সিন্ধুর ব্যাডমিন্টন দেখেন, তিনিই মহিলাদের টি-২০ ক্রিকেট দেখিবেন। এই বিজ্ঞাপন-নির্ভর গণমাধ্যমের যুগে যথেষ্ট দর্শক খেলা না দেখিলে বিনিয়োগ লাভজনক হইবে না। মহিলাদের ক্রিকেটকে যথেষ্ট দর্শকের নিকট পৌঁছাইয়া দিবার ভার বিসিসিআই’কেই লইতে হইবে। ইহাতে বোর্ড এবং মহিলা ক্রিকেট— লাভ দুই পক্ষেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy