পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির কাছে ‘বিদ্যাসাগর’।
দ্বিশতজন্মবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র
সম্পাদক: তাপস ভৌমিক
১৭৫.০০
কোরক
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির কাছে ‘বিদ্যাসাগর’। সমাজ-সংস্কারের লড়াকু যোদ্ধা। স্পষ্ট প্রতিবাদী। বাংলা গদ্যের বিকাশকর্মী। শিশু ও স্ত্রীশিক্ষার চিন্তক এবং প্রবর্তক। ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী। সর্বোপরি উনিশ শতকীয় বঙ্গীয় নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষা। আবার ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিতর্কিতও। দ্বিশতজন্মবর্ষে তাঁকে নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে, সুলক্ষণ! এর আগে তাঁর দেড়শো বছর পূর্তিতেও এমনই চর্চার চল হয়েছিল, গ্রন্থাদি প্রকাশ পেয়েছিল। সে সময়ের চেয়ে এখন সাময়িকপত্রের প্রকাশ বেড়েছে অনেকটাই। এমনকি কোনও কোনও সাময়িকপত্রের বিশেষ সংখ্যা এখন প্রায় সঙ্কলনগ্রন্থেরই চেহারা নিচ্ছে। কোরক-এর এই ‘দ্বিশতজন্মবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র’ তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কলন। আগেও একবার এ-পত্রিকার তরফ থেকে প্রকাশ পেয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য ব্যক্তিত্ব’, পরে সেটি গ্রন্থাকারে সঙ্কলিত হয়। কোরক-এর সাম্প্রতিক সংখ্যাটিতে নানান দৃষ্টিতে বিদ্যাসাগরকে দেখার চেষ্টা। তাঁর অজেয় মনুষ্যত্ব, শেষ দিনগুলির নিঃসঙ্গতা, বিজ্ঞানমনস্কতা। আবার তাঁকে নিয়ে গবেষক ও চরিতকারদের মূল্যায়ন। বিদ্যাসাগর ও তৎকালীন বঙ্গসমাজে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক। সামাজিক আন্দোলন ও বিদ্যালয় স্থাপনে বিদ্যাসাগরের সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা। প্রতিবেশী সাহিত্য ও সমাজে বিদ্যাসাগরের প্রভাব। তাঁর কালানুক্রমিক জীবনপঞ্জির সঙ্গে আছে কতিপয় পুনর্মুদ্রণও, সেগুলির মধ্যে অসামান্য রচনাটি হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মরণে’। তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণে তিনি উপস্থাপিত করেছেন বিদ্যাসাগরের প্রতিভা ও অনমনীয় চরিত্রটিকে। লিখছেন ‘‘বাংলা গদ্যকে ‘সুমধুর’ অথচ গভীর অর্থবহ, প্রাণবন্ত, ‘কলানৈপুণ্যে’ একান্ত স্বাভাবিকভাবেই লালিত করার বিদ্যাবুদ্ধি মানসিকতা-সঞ্জাত শক্তি ছিল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের। ভাষাকে নিজেরই মতো শিরদাঁড়াসম্পন্ন করে তোলেন তিনিই। রামায়ণ, কালিদাস, শেক্সপীয়র, ঈশপ্ প্রভৃতি থেকে অনুবাদে নামলেন। বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা বলে গর্ববোধ অবশ্যই ছিল, কিন্তু বাংলা ভাষার নিজস্বতাকে মহিমামণ্ডিত করার চেষ্টা থেকে নিবৃত্ত কখনও হননি। সহজবোধ্য নতুন ব্যাকরণ সৃষ্টি হলো তাঁর কীর্তি... লেখনীই অস্ত্র হলো অধঃপতিত সমাজের উন্নয়নকল্পে; বিধবাবিবাহ প্রচলন, বহুবিবাহ নিবারণ, স্ত্রী-শিক্ষাপ্রোৎসাহন প্রভৃতি বিষয়ে অক্লান্ত তাঁর রচনাপুঞ্জ।... গম্ভীর রচনার জন্য খ্যাত এই বিরাট বিদ্বান একেবারে সহজ সরস ও বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ লিখতেও নিবৃত্ত হলেন না...’’।
বন্ধুদের বাধা, সমাজপতিদের ভ্রুকুটি ও ভর্ৎসনা, প্রভাবশালীদের প্রচণ্ড বিরূপতাকে প্রতিহত করায় কোনও ক্ষান্তি ছিল না বিদ্যাসাগরের। প্রায় অসম্ভব পরিবেশে নিজের অর্থ ও সম্পদ অকাতরে ব্যয় করে নৈরাশ্য ও গঞ্জনার শিকার হয়েও চালিয়ে গিয়েছেন অভিযান, যা প্রায় একক সংগ্রামেরই সমতুল। ‘‘তাঁর জীবন ও কর্মকে নতুনভাবে পাঠের প্রয়াস নেওয়া হলো।’’ সম্পাদকের নিবেদন-এ জানিয়েছেন তাপস ভৌমিক।
অজানা বিদ্যাসাগর/ অনন্য দিশারি
সম্পাদক: শঙ্করকুমার নাথ ও হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী
২৫০.০০
বিদ্যাসাগর চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র (পরি: লোক সেবা শিবির)
বিদ্যাসাগরের বহুমুখী সমাজ-ভাবনা, শিক্ষা-ভাবনা (বিশেষত নারীশিক্ষার বিস্তারে), কৃষি-ভাবনা, সর্বোপরি মানবহিতকর বহুবিধ ভাবনা ও কর্ম বিষয়ে বিভিন্ন রচনার সমাহার এ বই। বইটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভূমিকায় বাংলাদেশের আহমদ রফিক মন্তব্য করেছেন: ‘‘রবীন্দ্রচর্চার মতো বিদ্যাসাগরচর্চাও বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক জীবনের পক্ষে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে করি।’’ বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত এই স্মারকগ্রন্থটির সম্পাদকীয় অভিপ্রায়: ‘‘চেষ্টা করা হয়েছে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের অধিকাংশ দিকগুলি নিয়েই আলোচনা করা, আর সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে খুঁজে বার করা যিনি আমাদের কাছে খানিকটা অনাবিষ্কৃত, অজানা।’’ যেমন উপনিবেশবাদের স্বরূপ উদ্ঘাটনে তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন, বা ফয়জ়ুন্নেসা ও শিক্ষাব্রতী রোকেয়া কেমন ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের দ্বারা। কিংবা, তাঁর শিক্ষাব্রতে স্বশ্রেণির পাশাপাশি ছিল যে জনজাতীয় সম্প্রদায়, কর্মাটাঁড়ে তাদের শিক্ষা ও কৃষিসংক্রান্ত কর্মোদ্যোগে কী অসম্ভব তুলনারহিত ভূমিকা নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: ‘‘প্রতিকূলতার বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া হিন্দুত্বের দিকে নহে, সাম্প্রদায়িকতার দিকে নহে, করুণার অশ্রুজলপূর্ণ উন্মুক্ত অপার মনুষ্যত্বের অভিমুখে আপনার দৃঢ়নিষ্ঠ একাগ্র একক জীবনকে প্রবাহিত করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন।’’ শেষে সংযোজিত হয়েছে তাঁর জীবনপঞ্জি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy