ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করলেও, তার উপর আপাতত বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা চাপাল না আমেরিকা। বরং দরজা খোলা রাখল কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর তার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করার।
বুধবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, মেধাসম্পদ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) আইন মানার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কড়া না-হওয়া এবং নকল ওষুধ ও পণ্য বিক্রি বন্ধে যথাযোগ্য পদক্ষেপ না-করার কারণে ভারতকে কালো তালিকায় সামিল করছে তারা। যার মানেই হল, আপাতত এই সমস্ত ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপে কড়া নজর থাকবে আমেরিকার। ওই একই বন্ধনীতে রাখা হয়েছে চিনকেও।
তবে এখনই আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতকে ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশি রাষ্ট্র’ বা ‘প্রায়রিটি ফরেন কান্ট্রি’র তালিকায় ফেলছে না তারা। যা করলে মেধাসম্পদ আইন লঙ্ঘিত হওয়া এবং নকল পণ্য বিক্রির নিরিখে বিশ্বের সব থেকে খারাপ দেশগুলির মধ্যে নাম ঢুকত ভারতের। চাপত বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও। ঠিক যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা পোখরানে পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর ভারতের উপর চাপিয়েছিল আমেরিকা।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতরের কাছে অনেক দিন ধরেই ভারতকে ওই ‘প্রায়রিটি’ তালিকাভুক্ত করার দাবি করছিল আমেরিকার বণিকসভা ইউএস চেম্বার অব কমার্স এবং ওষুধ শিল্প। তাদের অভিযোগ ছিল, ভারতে মেধাসত্ত্ব আইন ঠিকঠাক ভাবে মানা হয় না। নকল জিনিসও ঢালাও বিক্রি হয়। ফলে সেখানে লগ্নি ও উদ্ভাবনের সঠিক পরিবেশ নেই।
দফতরটি এই সব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর স্পেশাল ৩০১ রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে ২০১৪ সালেই ভারতকে ‘প্রায়রিটি’ তালিকায় আনা নিয়ে চাপান-উতোর চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এই তালিকায় সেই সব দেশকেই ফেলা হয়, যারা আমেরিকার মতে মেধাসম্পদ আইন ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি। অভিযোগ, ওই সব দেশের খাড়া করা বাণিজ্য বিধিনিষেধের জেরে সেখানে মার্কিন সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতার পরিবেশে ব্যবসা করতে পারছে না। এ ধরনের দেশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে l মার্কিন বৈদেশিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলা l রফতানিতে আমেরিকাকে পিছিয়ে দেওয়া l সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্থার জন্য বাড়তি সুবিধা l মেধাসম্পদের উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না-করা ইত্যাদি।
কিন্তু গোড়া থেকেই আশঙ্কা ছিল, শেষ পর্যন্ত মার্কিন শিল্পমহলের চাপে ভারত ওই তালিকায় সত্যিই অন্তর্ভুক্ত হলে দু’দেশের মধ্যে কার্যত বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু হবে। খারাপ হবে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও।
অনেকে মনে করছেন, সেই ঝুঁকি এড়াতেই আপাতত ভারতকে শুধু কালো তালিকাভুক্ত করল ওবামা প্রশাসন। দরজা খোলা রাখল আলোচনার। এমনকী এ বছরের শেষে এ বিষয়ে ভারতের পরিস্থিতি ফের খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy