ব্যাঙ্কের ঘাড়ে চেপে থাকা অনুৎপাদক সম্পদের বিপুল বোঝাই ইউপিএ সরকারের সব থেকে বড় দুর্নীতি বলে বুধবার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২৪ ঘণ্টাও পেরোলো না। তা নিয়ে পাল্টা তীর ছুঁড়ল কংগ্রেস। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করল, ঋণ খেলাপের সমস্যা আসলে ফুলেফেঁপে উঠেছে নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই। যার উত্তরে বিজেপির একাংশ বলছে, এ বিষয়ে পরিসংখ্যান আগেই দিয়ে রেখেছে অর্থ মন্ত্রক। দেখিয়েছে, কী ভাবে আগে ধামাচাপা দিয়ে রাখা ঋণ খেলাপের সমস্যা এখন কড়া হাতে মোকাবিলা করেছে কেন্দ্র। আর অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, মূল কৃতিত্ব সম্ভবত প্রাপ্য রঘুরাম রাজনের। অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যাকে কার্পেটের তলা থেকে বার করে আনার উপর জোর দিয়েছিলেন ওই প্রাক্তন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরই।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব বলছে, ২০১৩-’১৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মোট অনুৎপাদক সম্পদ ছিল ২.২৭ লক্ষ কোটি টাকা। সেখানে সরকারি বয়ান অনুযায়ীই গত অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ৭.৩৩ লক্ষ কোটিতে। অর্থাৎ, মোদী জমানার ৪২ মাসে বেড়েছে প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক মিলিয়েও মোদী সরকারের জমানায় অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক বেড়েছে ৫.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। তাদের প্রশ্ন, এই কেলেঙ্কারি তা হলে প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ছে না কেন? কেন স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপিদের ১.৮৮ লক্ষ কোটির ধার মকুব করে দিয়েছে কেন্দ্র?
আগের দিন মোদী বলেছিলেন, ‘‘আগের সরকারের আমলে কিছু বড় শিল্পপতিকে ব্যাঙ্কের উপর চাপ দিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এনপিএ নিয়ে হইচই আগের সরকারের রেখে যাওয়া সব থেকে বড় বোঝা।’’ এ দিন তাই মোদী সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। যা দেখে বিজেপির অনেকে বলছেন, অর্থ মন্ত্রক আগেই দেখিয়েছে কী ভাবে গত সাড়ে তিন বছরে ইউপিএ জমানায় লুকিয়ে রাখা অনুৎপাদক সম্পদ টেনে বার করেছে বর্তমান সরকার।
উল্লেখ্য গত অক্টোবরে সচিবদের সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানে দেখানো হয়েছিল, আগল খুলে ধার দিতে গিয়ে কী ভাবে ঋণ খেলাপ বেড়েছে ইউপিএ জমানায়। দাবি করা হয়েছিল, ২০১৫ সাল থেকে সেই লুকিয়ে রাখা অনুৎপাদক সম্পদ টেনে বার করার শুরু। তখনই দেখা যায় যে, এত দিন যা অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক বলে সামনে আসত, আসলে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। অর্থাৎ মোদী সরকারের দাবি, তারাই এই সমস্যা খুঁজে ব্যাঙ্কগুলিকে সেই অনুযায়ী টাকা তুলে রাখতে বাধ্য করেছে।
বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, কাছের শিল্পপতিদের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার চাপ ব্যাঙ্কের উপর সব সরকারের আমলেই থাকে। ঋণ খেলাপের সমস্যাকে দিনের আলোয় টেনে আনার মূল কৃতিত্ব বরং রাজনের। তিনিই বলেছিলেন, ‘‘অনুৎপাদক সম্পদের পাহাড় টপকাতে সবার আগে তাকে কার্পেটের নীচ থেকে বার করতে হবে। ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে তা দ্রুত কমানো প্রয়োজন। পিছিয়ে আসা চলবে না তার জন্য টাকার সংস্থান করা থেকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy