Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
২০১৮-১৯: ভরসা বাড়তে পারে সরকারি লগ্নিতে

চাহিদা তলানিতে, শিল্প সেই ঝিমিয়ে

দামামা বাজিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুরু করেছিলেন মোদী। জোরগলায় বলেছিলেন, দুনিয়া জুড়ে সব জিনিসে এখন যেমন ‘মেড ইন চায়না’ লেখা থাকে, ভবিষ্যতে তেমনই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, সেখানেও ভোঁ-ভাঁ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না।

এমনটা অভিমান হতেই পারে নরেন্দ্র মোদীর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসবেন, আর দেশের শিল্পপতিরা ঝুলি উপুড় করে লগ্নি করবেন, এমনটাই তো কথা ছিল। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চার বছরে লগ্নির খাতায় তেমন দাগই পড়েনি।

দামামা বাজিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুরু করেছিলেন মোদী। জোরগলায় বলেছিলেন, দুনিয়া জুড়ে সব জিনিসে এখন যেমন ‘মেড ইন চায়না’ লেখা থাকে, ভবিষ্যতে তেমনই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, সেখানেও ভোঁ-ভাঁ।

শিল্পপতিদের লগ্নি নিয়ে প্রশ্ন করলেই বলেন, বাজারে চাহিদা নেই বলে কারখানার গড় উৎপাদন ক্ষমতার ৩০% কাজেই লাগানো হচ্ছে না। নতুন কারখানা খুলে হবেটা কী? বিদেশি লগ্নি যা এসেছে, সেটাও চালু কারখানা কিনতে বা অংশীদারি বাড়াতে।

সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত, এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পড়েছেন মহা বিপদে। উপর মহলের নির্দেশ, বাজেটে লগ্নি টানার রাস্তা তৈরি করতে হবে। কিন্তু কোন পথে? ইলা পট্টনায়কের মতো অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যত চেষ্টাই হোক, লগ্নি বাড়বে ধীর গতিতে, তা-ও অনেক কষ্টে। এর কোনও শর্টকাট নেই।

তা হলে জেটলি কী করবেন? বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত, এত দিন যা করেছেন, ফের তা-ই করতে হবে। অর্থাৎ, বেসরকারি লগ্নির অভাব ঢেকে অর্থনীতিকে সজীব রাখতে, সরকারকেই বিপুল লগ্নি করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দিয়েও লগ্নি করাতে হবে। চলতি অর্থবর্ষেই যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তাদের দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি লগ্নি করিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, নতুন অর্থবর্ষে মূলধনী খাতে রেকর্ড ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই অর্থ ঢালবে।

সরকারি সূত্রে খবর, শিল্পমহলকে খুশি করতে গত বাজেটে ছোট-মাঝারি শিল্পে কোম্পানি কর কমানোর পরে এ বার বড় শিল্পের বোঝা কমতে পারে। ছোট-মাঝারি শিল্প ও স্টার্ট-আপের জন্য থাকতে পারে উৎসাহ ভাতা ঘোষণা। নতুন লগ্নির জন্যও বিশেষ ভাতার সুপারিশ করছে বাণিজ্য মন্ত্রক। যেমন, তাদের কর্মীদের পিএফ, ইএসআইয়ের কিছুটা দায় নিতে পারে কেন্দ্র। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মডেলকে আরও আকর্ষণীয় করে এই খাতে বেসরকারি লগ্নি টানার চেষ্টা হতে পারে।

নতুন লগ্নি হচ্ছে কি না, তা বোঝার মাপকাঠি হল কারখানায় নতুন যন্ত্রপাতি বসানো ও ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ বাড়া। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, দুই রেখচিত্রই নীচের দিকে। জেটলির অবশ্য দাবি, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চিদম্বরম মানতে নারাজ। এত দিন জেটলির দাবি ছিল, সরকারি লগ্নি বাড়ালে তার হাত ধরে বেসরকারি লগ্নিও বাড়বে। কিন্তু শিল্পমহলের কাছে বারবার লগ্নির আহ্বান জানিয়েও লাভ হয়নি। তাদের যুক্তি, দেশে চাহিদায় এখনও মন্দার ছায়া। গ্রামে কেনাকাটা না বাড়লে, কারখানা বাড়ানোর প্রশ্ন নেই। তাই বাজেটে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বরাদ্দ বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে সরকারি সূত্রে।

শিল্পমহলের দাবি, পরিকাঠামোর খরচ কমানো হোক। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বিশ্লেষণ, পরিকাঠামো তৈরিতে এখনও অনেক কাজ বাকি। সড়ক-বন্দরের কাজে উন্নতি হলেও, রেলের গতি বাড়াতে বাড়তি বরাদ্দ জরুরি। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলেছেন, সড়ক, বন্দর, রেলের কাজে গতি এলে রোজগারের সুযোগও তৈরি হয়। উন্নয়নও হয়। ২০১৯-এর ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে জোয়ার আনতে সরকারি লগ্নি মারফত পরিকাঠামোয় টাকা ঢালাই সম্ভবত জেটলির একমাত্র অস্ত্র, এমনটাই আঁচ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE