একা বাজেটে করের কোপে রক্ষে নেই। দোসর বিশ্ব বাজারের পতনও। সেই সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে রাজকোষ ঘাটতি বাড়া নিয়ে রেটিং সংস্থাগুলির উদ্বেগ। আর এই তিনের চাপে শুক্রবার সেনসেক্সের পতন হল প্রায় ৮৪০ পয়েন্ট। নিফ্টি-ও নেমে গিয়েছে ২৫৬.৩০ অঙ্ক। আর এর ফলে বাজার থেকে মুছে গিয়েছে ৪.৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার মূল্য।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে পতনের বহর আরও বাড়তে পারে। যদিও তাঁদের বড় অংশ বাজারের এক ধাক্কায় এতটা নেমে যাওয়াকে স্বাগতই জানিয়েছেন। বলেছেন, চোখের পলকে ৩৬ হাজারের মাইলফলক পেরনো বাজারের কিছুটা সংশোধন জরুরি ছিল। ঠারেঠোরে সে কথা বলছিল কেন্দ্রও। তাঁদের মতে, এই সংশোধন আগামী দিনে বাজারের পায়ের তলার জমি আরও পোক্ত করবে।
যেমন, স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই সংশোধন আসলে অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। আরও কিছুটা হওয়া জরুরি। তবেই বাজারের ভিত শক্ত হবে।’’
গত দু’বছরে এক দিনে এতটা পড়েনি বাজার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর অন্যতম কারণ বাজেটের ধাক্কা। শেয়ারের উপর দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভ কর বসানো। শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড বন্টনকে করের আওতায় আনা। এবং রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো।
বিশেষত ঘাটতির ভূত যে অর্থনীতির উপর আগামী দিনে আঘাত হানতে পারে, এ দিন তার ইঙ্গিত দিয়েছে ফিচ, ক্রিসিলের মতো রেটিং সংস্থাগুলিও। বলেছে, দেশের ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল ধার, চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ছাপানো ঘাটতি এবং পরের আর্থিক বছরেও তা পূরণ না-হওয়ার ইঙ্গিত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ফিকে করছে মূল্যায়নে উন্নতির সম্ভাবনাকে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, তার উপর এ দিন সকাল থেকেই আতঙ্ক ছড়ায় বিশ্ব জুড়ে বেশির ভাগ দেশে শেয়ার সূচকের পতন। আমেরিকা, এশিয়া-সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে দ্রুত বন্ডের রিটার্ন বাড়তে থাকাই ছিল যার অন্যতম কারণ। যা শেয়ারের লগ্নিতে কোপ ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। সিঙ্গাপুর, হংকং-সহ এশিয়ার অধিকাংশ বাজারকেই নামতে দেখা যায় সকাল থেকে। পড়েছে আমেরিকা, ইউরোপের সূচকগুলিও। ফলে ভারতে বাজার খোলার পরেই তাড়তাড়ি শেয়ার বেচতে থাকেন লগ্নিকারীরা। বিশেষজ্ঞ অজিত দে-ও বলেন, ‘‘বাজার যে শুধু বাজেটের জন্য পড়েছে, তা মনে হয় না। আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারের পতনও অনেকাংশে দায়ী।’’
ভ্যালু রিসার্চের সিইও ধীরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘বাজার কবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বলা কঠিন। কিছু দিন অনিশ্চয়তা থাকবে। তবে দেশের আর্থিক অবস্থা তুলনায় ভাল হওয়ায় তা স্বল্প মেয়াদি হবে।’’ এ দিনও অবশ্য ৯৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy