মাঝে বিবৃতির যুদ্ধ বন্ধ ছিল মোটে তিন দিন। দীপাবলির রেশ না-কাটতেই ফের কথার তেতো লড়াই শুরু হয়ে গেল সাইরাস মিস্ত্রি ও টাটাদের মধ্যে।
মঙ্গলবার কর্মীদের পাঠানো চিঠিতে অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরে আসা রতন টাটার দাবি, ‘‘টাটা সন্সের নেতৃত্বে বদল পরিচালন পর্ষদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত কঠিন। কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনা ও আলাপ-আলোচনার পরে নেওয়া। পর্ষদের বিশ্বাস, টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য এই সিদ্ধান্ত একান্ত জরুরি ছিল।’’ উল্লেখ্য, টাটা গোষ্ঠীর মূল সংস্থাই হল টাটা সন্স।
রতন টাটার এই চিঠি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসার আগে এ দিনই টাটাদের দিকে ফের এক প্রস্ত অভিযোগের তির ছোঁড়েন সাইরাস। তাঁর দফতর এক বিবৃতিতে জানায়, ‘‘সুকৌশলে ইঙ্গিত ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে যে, মিস্ত্রির জমানায় ডোকোমো-সমস্যা যে ভাবে সামলানোর চেষ্টা হয়েছিল, তা টাটাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের বিরোধী। কিন্তু এই আভাস ভিত্তিহীন। রতন টাটা এবং টাটা সন্সের ট্রাস্টিরা কখনও সমস্যা সমাধানের এই পথে হাঁটতে মত দিতেন না বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তা-ও প্রকৃত তথ্যের বিপরীত।’’ বিষয়টি সম্পর্কে রতন টাটা ও টাটা সন্সের ট্রাস্টি এন এ সুনাওয়ালাকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল বলেই সাইরাসের তরফে দাবি।
এর পাল্টা বিবৃতিতে টাটাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কৌশলে ইঙ্গিত ভাসিয়ে দেওয়ার এই তত্ত্ব কাল্পনিক। এই মুহূর্তে বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করবে না টাটা সন্স।
২০০৯ সালের নভেম্বরে ১২,৭৪০ কোটি টাকায় টাটা টেলি সার্ভিসেসের ২৬.৫% অংশীদারি কেনে জাপানি সংস্থা এনটিটি ডোকোমো। শেয়ার পিছু দর দেয় ১১৭ টাকা। শর্ত ছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে গাঁটছড়া ছিন্ন হলে অন্তত ওই টাকার ৫০% পাবে তারা। ২০১৪ সালের এপ্রিলে সংযুক্তি ভাঙলে, সেই অনুযায়ী টাটাদের কাছে হয় শেয়ার পিছু ৫৮ টাকা নয়তো এক লপ্তে ৭,২০০ কোটি টাকা চায় ডোকোমো। কিন্তু টাটারা দিতে চেয়েছিল প্রতি শেয়ারে ২৩.৩৪ টাকা। তাদের দাবি ছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে এর থেকে বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যায় ডোকোমো। সেখানে ১১৭ কোটি ডলার দিতে বলা হয় টাটাদের।
সাইরাসের তরফে দাবি, বিষয়টি মেটাতে পরেও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ডোকোমোকে পুরো টাকা দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সায় মেলেনি। এ নিয়ে ফের আর্জি জানানোর আগেই আদালতে যায় ডোকোমো। আর সব জানা সত্ত্বেও ওই সমস্যা ঠিক ভাবে না-সামলানোর দায় মিস্ত্রির দিকে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ঠিক নয় বলেই তাঁদের অভিযোগ।
সাইরাস বিদায়ের পর থেকে যত দিন যাচ্ছে, তত তেতো হচ্ছে দু’পক্ষের কথার লড়াই। কর্পোরেট দুনিয়ার অনেকের ধারণা, পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার সম্ভাবনা। দুই শিবিরের বয়ান থেকে স্পষ্ট যে, কেউ বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ।
তা ছাড়া, টাটা সন্সের প্রায় ১৮.৫% অংশীদারি নির্মাণ সংস্থা শাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠীর হাতে। তার চেয়ারম্যান পালোনজি মিস্ত্রিরই ছেলে সাইরাস। কর্ণধারের পদ থেকে সরতে বাধ্য হলেও এখনও টাটা সন্সের পর্ষদে রয়েছেন তিনি। আছেন টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার পর্ষদেও। এই সমস্ত জায়গা থেকে সাইরাসকে সরাতে টাটারা উদ্যোগী হবে কি না কিংবা হলেও তা তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে শিল্পমহলে।
এরই মধ্যে এ দিন জল্পনা দানা বেঁধেছে টাটাদের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের প্রাক্তন কর্ণধার ৭১ বছরের সুব্রহ্মণ্যম রামদোরাইকে ঘিরে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের দুই প্রতিষ্ঠান এনএসডিএ এবং এনএসডিসি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। তার পরই অনেকে বলছেন, তবে কি ‘বড় কোনও দায়িত্ব’ নিয়ে ফের টাটা গোষ্ঠীতেই ফিরবেন রামদোরাই? বিশেষত এ দিনের চিঠিতে রতন টাটা যেখানে ফের বলেছেন যে, শীর্ষ পদে তাঁর ফিরে আসা সাময়িক। দ্রুত নতুন কর্ণধারের খোঁজ চান তিনি। ঢেলে সাজার পরিকল্পনা রয়েছে গোষ্ঠীর পরিচালন কাঠামোও।
• টাটা সন্সের নেতৃত্বে বদলের এই সিদ্ধান্ত কঠিন। কিন্তু ভেবেচিন্তে নেওয়া। বোর্ডের মতে, টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য এই সিদ্ধান্ত একান্ত জরুরি ছিল।
রতন টাটা
• ডোকোমো-সমস্যা সামাল দেওয়ার ধরন টাটাদের মূল্যবোধের বিরোধী বলে রটনার ভিত্তি নেই। রতন টাটারা এতে সায় দিতেন না বলা হলেও আসল ঘটনা তা নয়।
সাইরাস মিস্ত্রি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy