শিল্প ও সাধারণ মানুষের ঋণের খরচ কমাতে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল চলছেই। বিভিন্ন বণিকসভা ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জোরালো দাবি উঠলেও আগামী ৭ এপ্রিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে সুদ কমানোর পথে না-ও হাঁটতে পারে। সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্ভবত জুন অবধি অপেক্ষা করবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রসঙ্গত, আগামী ৭ এপ্রিল ঋণনীতি পর্যালোচনা করবেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।
চলতি সপ্তাহেই ৪০ জন অর্থনীতিবিদকে নিয়ে এক সমীক্ষায় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মাত্র ৯ জন মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার রেপো রেট (যে-হারে বাণিজ্যক ব্যাঙ্ক আরবিআইয়ের কাছ থেকে ঋণ নেয়) কমাবে। তবে বাকিদের ধারণা, তা ৭.৫০ শতাংশেই ধরে রাখবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সাধারণ ভাবে সমীক্ষার গড় পূর্বাভাস হল, মে কিংবা জুন মাসে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে আরবিআই। তার পর তা আর এক দফা কমতে পারে বছরের শেষ তিন মাসে।
অন্য দিকে ৪ জন অর্থনীতিবিদ জানান, এই হার অপরিবর্তিত রেখে বরং নগদ জমার অনুপাত বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সি আর আর) কমিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি নগদের সংস্থান করতে পারে আরবিআই। এই অনুপাত মেনেই আমানতের নির্দিষ্ট অংশ শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে জমা রাখে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। ২০১৩ সালের গোড়ার দিক থেকেই এই হার ৪ শতাংশে বেঁধে রেখেছে আরবিআই। এই সমীক্ষার পূর্বাভাস অনুসারে অবশ্য কমপক্ষে ২০১৬-র জুন পর্যন্ত তা একই থাকবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এখনই সুদ না-কমানোর পিছনে কারণ কী?
সমীক্ষার মতে, আরবিআই তার ৭ এপ্রিলের আসন্ন ঋণনীতিতে অতি সাবধানেই পা ফেলতে চায়। রঘুরাম রাজন এর আগে অবশ্য ঋণনীতি পর্যালোচনার অপেক্ষায় না-থেকে অন্য সময়েই দু’দফা সুদের হার কমিয়েছেন জানুয়ারি ও মার্চে। কিন্তু এই মুহূর্তে অর্থনীতিবিদদের মতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সামনে যে-সমস্ত আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলি হল:
• বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অনেকটা কমায় নামছে মূল্যবৃদ্ধির হার। তবে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যান্য কারণে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।
• ভারতে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরে তলানিতে এসে ঠেকলেও, আবার তা বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করছে আরবিআই। ফেব্রুয়ারিতেই তা ফের বেড়ে ছুঁয়েছে ৫.৩৭ শতাংশ।
• বৃষ্টিপাত কম হলে খাদ্যপণ্যের দাম ফের মাথা চাড়া দিতে পারে।
• মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়াতে শুরু করলে ভারতের শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পারে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি। কারণ, তখন নিজেদের দেশেই লগ্নি করতে আগ্রহ বাড়বে তাদের। এ ক্ষেত্রে তাদের টাকার চাহিদা কমলে পড়তে পারে ভারতীয় মুদ্রার দরও।
এই সব কারণেই আপাতত সুদ কমানো থেকে আরবিআই বিরত থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, এখন সুদ কমালে তা মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন জুগিয়ে অর্থনীতির পক্ষে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেই হয়তো সাবধানে এগোবেন রাজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy