—ফাইল চিত্র।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজকোষ ঘাটতির আড়ালে অনেক কিছু ধামাচাপা দিয়ে রাখার অভিযোগ তুললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। খাতায় কলমে যে ঘাটতির তথ্য দেখানো হয়ে থাকে, কার্যত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনের আশঙ্কা, আসলে সেই অঙ্ক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, সম্ভবত এই বিষয়টিই গোটা দেশকে একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওপি জিন্দল’ বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতির এই বেহাল দশার জন্য ফের কেন্দ্রের নোটবাতিল ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর সিদ্ধান্তকেও দায়ী করেছেন তিনি। এর আগেও তিনি মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে বলেছিলেন, ওই জোড়া সিদ্ধান্তেই সর্বনাশ হয়েছে অর্থনীতির।
শনিবার রাজনের মতো সরকারের রাজকোষ ঘাটতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও। পাশাপাশি ভারতের অর্থনীতি প্রবল সঙ্কটের মুখে, দাবি করে তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গোটা বিষয়টি নিয়ে কার্যত চোখ বুজে রয়েছেন।
রাজনের তোপ
• রাজকোষ ঘাটতির বিষয়ে অনেক তথ্য লুকোনো আছে। আসলে সেই অঙ্ক অনেক বেশি। রাজস্ব আদায় নিয়ে প্রচুর আশার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি ধার করা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ অডিটর জেনারেল।
• জোরালো আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে অর্থনীতি দিশা হারাচ্ছে।
• দেশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে।
• নোটবাতিল খুবই খারাপ পরিকল্পনা। জিএসটি-র রূপায়ণও দুর্বল। এই দুই সিদ্ধান্ত ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।
• শীঘ্রই অবস্থার উন্নতির
আশা নেই।
এ দিন রাজনের অভিযোগ, সামগ্রিক ভাবে জোরালো দৃষ্টিভঙ্গির অভাবেই ভারতের অর্থনীতি দিশা হারিয়ে সঙ্কটে ডুবেছে।
সম্প্রতি চাহিদার অভাবে ৫ শতাংশে নেমে ছ’বছরের তলানি ছুঁয়েছে দেশের বৃদ্ধি। সরাসরি ১.১% কমে গিয়ে সাত বছরের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থায় শিল্পোৎপাদন। মুখ থুবড়ে পড়েছে উৎপাদন শিল্প। নাগাড়ে কমছে গাড়ি বিক্রি। একের পর এক মূল্যায়ন সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে ভারতে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটছে। কেন্দ্র একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেও চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত এখনও তেমন মেলেনি।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজনের তোপ, ‘‘...আসল সমস্যা হল ভারত বুঝতেই পারছে না বৃদ্ধির নতুন উৎসগুলি।’’ তাঁর মতে মুখ থুবড়ে পড়া আর্থিক ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অবিলম্বে সাহায্য দরকার। প্রাক্তন গভর্নরের এটাও বক্তব্য, ‘‘কারণ হিসেবে দেখার বদলে বরং ভারতের এই আর্থিক সমস্যাকে লক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত।’’ এই সব কিছুর জন্য লগ্নি, চাহিদা, রফতানি কমে যাওয়া, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির (এনবিএফসি) নগদ পাওয়ার সঙ্কট দায়ী করেছেন তিনি। তবে প্রধান দুই খলনায়কের তকমা দিয়েছেন মোদী সরকারের নোট বাতিল ও খারাপ ভাবে জিএসটি চালু করার সিদ্ধান্তকে।
আরবিআইয়ের ভাঁড়ারের ভাগ কেন্দ্রকে দেওয়া হোক বা দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগেও সরব হয়েছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর। ২০০৮ সালের বিশ্ব জোড়া মন্দার পূর্বাভাসের জন্য যাকে এক ডাকে চেনে গোটা বিশ্ব। সেই রাজনই ফের বিদেশ থেকে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন কারও নাম না করেই। তাঁর দাবি, ভারতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হলেও, উপরের স্তরে জোরালো আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবই অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
রাজনের মতে অর্থনীতির রথের চাকায় গতি হারানো ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। তাঁর কথায়, ‘‘অর্থনীতি যখন তুলনায় নড়বড়ে, ঠিক সেই সময় পর পর নোটবন্দি হয় ও জিএসটি আসে। ভাল ভাবে পরীক্ষা না করে আচমকা করা সাহসী পদক্ষেপও গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।’’
কেন্দ্র অর্থনীতির দুরবস্থার কথা সরাসরি মানতে না চাইলেও একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। যা আবার রাজকোষ ঘাটতির বেলাগাম হওয়ার সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছে। সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজনও। তাঁর আশঙ্কা, রাজকোষ ঘাটতির অঙ্ক আসলে বেশি। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি মিলিয়ে প্রায় ৯-১০%। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস সম্পর্কে অনেক আশার কথা বলা হলেও ধার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রাজকোষ ঘাটতি নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার দাবি, তা আসলে ৮%, ৩.৩% নয়। তিনি বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ে দিশাহীন। তিনি ইকনমিক্সের ‘ই’ এবং ফিনান্সের ‘এফ’-ও বোঝেন না। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার মোকাবিলার বদলে ধনীদের কর ছাড় দিচ্ছেন। শিল্পপতিদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। গরিবদের কোনও সুরাহা
হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy