জঞ্জাল যে শুধু লাভের ব্যবসার কাঁচামাল হয়ে উঠেছে তা নয়, জঞ্জাল ব্যবসা এখন স্টক মার্কেটেও লগ্নিকারীদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
শহর এখন অনেক বেশি পরিষ্কার উষ্ণায়নের কারণে! হঠাৎ শুনলে চায়ের আড্ডায় মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বলা মনে হতেই পারে। কিন্তু জঞ্জাল যে শুধু লাভের ব্যবসার কাঁচামাল হয়ে উঠেছে তা নয়, জঞ্জাল ব্যবসা এখন স্টক মার্কেটেও লগ্নিকারীদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে! আর এই ব্যবসা জমে উঠছে পশ্চিমবঙ্গেও। আসতে শুরু করেছে বিদেশি বিনিয়োগও।
আমাদের চোখ এড়িয়ে নয় নয় করে এই মুহূর্তে রাজ্যে ৩৬টি সংস্থা পলিথিলিন টেরেফথ্যালেট বা পেটকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ব্যবসায় টাকা ঢেলেছে। বৈদ্যুতিন বর্জ্য ভেঙে তার থেকে নানান পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল সংগ্রহে বিনিয়োগ করেছে ৬১টি সংস্থা। এ তথ্য পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের।
তবে এটাও সত্যি যে পশ্চিমবঙ্গের থেকে এ ব্যবসায় অনেক এগিয়ে পশ্চিম, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারত। এবং তার কারণও কিন্তু অন্য শিল্পে এগিয়ে থাকা। পেট বোতল উৎপাদনকারী সংস্থা মাগপেট পেট বোতল থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল বার করে তার থেকে আবার বোতল তৈরি করতে শুরু করেছে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সংস্থাটির দাবি তারাই ভারতবর্ষে প্রথম সংস্থা যারা যতটা নতুন পেট কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে, ঠিক ততটাই পুরনো বোতল গলিয়ে নতুন বোতল তৈরি করে। বোতল তৈরিতে পেটের এই একশ শতাংশ চক্রাকার (রিসাইক্লিং) ব্যবহারে তারাই ভারতে পথিকৃৎ বলে দাবি করলেন সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক ইন্দ্রনীল গোহ এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সুরানা। আর এঁদের সংস্থাতেই ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ঢেলেছে ২৫০ কোটি টাকা। এই ব্রিটিশ সরকারের এই সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন সব ক্ষেত্রে লগ্নিতে সাহায্য করে যে সব ক্ষেত্র ব্যবসায় নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
তবে এক দিকে যেমন বিনিয়োগ আসছে তেমনি এ রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা না থাকায় রাজ্যে জন্ম নেওয়া সংস্থাই প্রতিবেশী রাজ্যে কারখানা তৈরি করছে। যেমন হুলাডেকের নন্দন মল। পারিবারিক ব্যবসা ওষুধের। ২০১৯ সালে সেন্ট জেভিয়ার্সে ছাত্রাবস্থায় বৈদ্যুতিন বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ব্যবসা নিয়ে একটি প্রস্তাব লিখে মার্কিন ওরাকল সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকের নজরে আসেন। তাঁরই উৎসাহে পরিবার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি বাজার বুঝতে নেমে পড়েন। শুরু করেছিলেন বর্জ্য জোগাড় করে অন্যদের বিক্রি করা দিয়ে। সেখান থেকেই বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে নেমে পড়েন বৈদ্যুতিন বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ব্যবসায়।
নন্দনের দাবি, এই ব্যবসায় যে বিরাট বিনিয়োগের প্রয়োজন তা নয়। একটা কারখানা তৈরি করতে এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা লাগে। কিন্তু তিনি গুয়াহাটিতে কারখানা করছেন তার অন্যতম কারণ হল অসম সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে তা তাঁর মতো নতুন বিনিয়োগকারীর পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তবে এটাও ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইটেই রাজ্যকে প্রধানত ‘গ্রামীণ’ বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। তাই বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণও বিশাল নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল তা মনে করতে নারাজ। যোগান ও চাহিদার হিসাবে এ রাজ্যে যা বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরি হয় তাতে এ শিল্প লাভজনক হতেই পারে।
এ ব্যাপারে নন্দন, ইন্দ্রনীল এবং দেবেন্দ্র তিনজনেই মনে করেন যে সব সংস্থা সে ভাবে লাভের মুখ দেখছে না তাদের সমস্যা বিক্রির বাজার নয়, জঞ্জাল সংগ্রহ করার পদ্ধতি সে ভাবে আয়ত্ত করতে না পারা।
বিক্রির বাজার কেন সমস্যার নয়? এর উত্তর খুব সোজা। প্লাস্টিক বা বৈদ্যুতিন শিল্পের নানান দূষণকারী কাঁচামালের ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঁচামালের ব্যবহারের অনুপাত আইন করে বলে দেওয়া আছে। ২০২৯ সালের মধ্যে তা বর্তমান অনুপাত থেকে বহুগুণ বেড়ে যাবে। যেমন পেট প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে এই অনুপাত গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ শতাংশ। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা ঠিক একই ভাবে বাড়বে।
তবে মাগপেট রাজ্য ছেড়ে ভুবনেশ্বর বা গুয়াহাটিতে এই নতুন বিনিয়োগ করল না কেন? এই খানে এই সংস্থার বক্তব্য হুলাডেক থেকে আলাদা। তাদের হিসাবে পেটের ব্যবহৃত বোতল সংগ্রহ করার খরচ এ রাজ্যে অনেক কম। তাই কাঁচামাল সংগ্রহের খরচ এবং ভিন্রাজ্যে বিনিয়োগের খরচ পাশাপাশি ধরলে নাকি এ রাজ্যে কারখানা করাটাই সুবিধার।
প্রশ্ন উঠতেই পারে যে তা সত্ত্বেও ভারতের অন্যান্য অঞ্চল কেন এ রাজ্য থেকে এগিয়ে? প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে বস্ত্র শিল্পের একটা বড় জায়গা রয়েছে। কারণ কৃত্রিম তন্তুতে প্লাস্টিক অন্যতম কাঁচামাল। তাই নিয়ম মেনে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহারও অনেক বেশি। আর বস্ত্রশিল্প বা অন্যান্য বড় শিল্প, যেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি, এইসব রাজ্যে অনেক বেশি। তাই জঞ্জাল শিল্পেও স্বাভাবিক ভাবে এরাই এগিয়ে দূষণের দায় এড়াতেই।
তবে এটাও ঠিক যে রাস্তায় আজকাল আগের তুলনায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জঞ্জাল কম দেখা যায়। নন্দনের কথায়, “বাড়ির ফেলে দেওয়া ব্যাটারি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন কি আর?” দেখব কী করে? পুরনো ব্যাটারিও তো এদের বিক্রি করলে কিছু পয়সা ফেরত আসতে শুরু করেছে আজকাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy