চলেই যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক। রবিবার রাতে স্পেনের বার্সেলোনায় ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসের মঞ্চে এত ক্ষণ নিজের সংস্থার নানা ফোন নিয়ে বলছিলেন। হঠাৎ বেরোতে গিয়েও ফিরে এলেন তিনি— আর্তো নুমেলা। নোকিয়া-এইচএমডি গ্লোবালের সিইও। ‘ভুলেই গিয়েছিলাম’ ভাব করে পকেট থেকে বার করলেন একটা মোবাইল।
নোকিয়া ৩৩১০।
মৃত্যু ঘটেছিল এক যুগ আগে। দেখা গেল, নবজন্মে সেই মোবাইলই ফিরে এসেছে মেদ ঝরিয়ে। রঙিন হয়ে। ফ্ল্যাশ-সহ ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নিয়ে। কিন্তু ইন্টারনেট? সে দিনও ছিল না। এখনও নেই। এ নিয়ে প্রশ্নও উঠল। তবে কেউ কেউ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বেশি ভাবিত ‘নোকিয়া’ নামটা নিয়ে। ইন্টারনেট নিয়ে নয়।
কলেজপড়ুয়া বা পোড়খাওয়া সেল্সম্যান— গত দশকের গোড়ায় হাতে হাতে ঘুরত নোকিয়া মোবাইল। ২০০০-এ বাজারে আসা, মূলত গাঢ় নীল ৩৩১০-র একটা ‘ওজন’ ছিল। ভারী, শক্তপোক্ত, বোতাম টেপা ফোন, সাদা-কালো ছোট্ট ডিসপ্লে। ক্যামেরা নেই, গান শোনার ব্যবস্থা নেই। ফোন আর এসএমএস করা— গল্প শেষ।
আরও পড়বে: কর বাঁচাতে শেষ ওভারে খেলতে হবে বল গুনে
এই চলছিল। কিন্তু যুগ বদলাল। এল রঙিন ডিসপ্লে, হরেক ফিচারের নিত্যনতুন মডেল। মোবাইল আর শুধু কথা বলার যন্ত্র রইল না। বোতাম টেপা ফোন হয়ে গেল ডাইনোসর। স্মার্টফোন বাজার ধরার অনেক আগেই, ২০০৫ সালে ৩৩১০ তৈরি বন্ধ করে দিল নোকিয়া। তার আগে অবশ্য প্রায় ১২ কোটি ৬০ লক্ষ নোকিয়া ৩৩১০ বিক্রি হয়েছে সারা দুনিয়ায়। কাজেই, চাহিদা তার ছিল।
কিছুটা চাহিদা ও নস্ট্যালজিয়াকে কুর্নিশ করেই ৩৩১০-র প্রত্যাবর্তন। যাতে বড় পরিবর্তন তেমন নেই। এক বার চার্জ দিলে কথা বলা যাবে ২২ ঘণ্টা। আছে এমপিথ্রি প্লেয়ার। ৩২ জিবি পর্যন্ত মেমরি। আর হ্যাঁ, পুরনো স্নেক গেমও আছে। শোনা যাচ্ছে, ভারতে আসতে পারে মে মাসে, দাম প্রায় আগের মতোই, ৪০০০ টাকা। ‘ব্র্যান্ড নেম’ থাকবে নোকিয়ার। নির্মাতা এইচএমডি গ্লোবাল।
একটা ‘সাধারণ’ ফোন ঘিরে এত কৌতূহল কেন? আর কিনবেই বা কে?
উত্তরে অনেকে বলছেন, হালফিলে নস্ট্যালজিয়ার স্রোত তো বইছেই। রেকর্ড প্লেয়ার তৈরি আবার শুরু হয়েছে, স্টিল ছবি তোলা হচ্ছে ফিল্ম ক্যামেরায়, এমনকী ফরাসি সংস্থা ‘পুজো’র হাত ধরে অ্যাম্বাসাডর নতুন চেহারায় ফিরবে বলে গাড়িবিলাসীরা আশাবাদী। তেমনই তো নোকিয়া।
আর এখানেই দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর। যে শ্রেষ্ঠ ছিল, সেই ‘পুরাতন’ই ফিরছে। যা স্বাভাবিক। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, শখের ফোটোগ্রাফার শুভজ্যোতি রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘ফিল্মে তোলা ছবির গুণমান ডিজিটালের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কোডাক আবার ফিল্ম তৈরির কথা ভাবছে। আর সাদাকালোতেই তো গল্প ফোটে ভাল।’’ কম্পিউটার ব্যবসায়ী ধ্রুবজ্যোতি পাল নোকিয়ার মোবাইলই ব্যবহার করেছেন বরাবর। বললেন, ‘‘স্মার্টফোনের সঙ্গে একটা সাধারণ ফোন সঙ্গে রাখলে হঠাৎ ব্যাটারি ফুরোনোর হাত থেকে বাঁচা যায়। এই ফোনটা তো বয়স্কদের পক্ষে খুবই ভাল। ‘কোয়ালিটি’ নিয়ে যে ভাববে, সে কিন্তু বেছে নেবে নোকিয়াকেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy