Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ব্রাজিল হয়েই না দৌড় থেমে যায় ভারতের!

রথীনবাবুর ব্যাখ্যা, বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হলেও এ দেশের অর্থনীতির গতিতে একমাত্র ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছিল আয়ের নিরিখে উপরের সারিতে থাকা ১০ কোটি মানুষের কেনাকাটা। রফতানি নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

ভারতীয় অর্থনীতি ‘মাঝারি আয়ের ফাঁদ’-এ পড়তে পারে বলে সতর্ক করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য রথীন রায়।

রথীনবাবুর ব্যাখ্যা, বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হলেও এ দেশের অর্থনীতির গতিতে একমাত্র ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছিল আয়ের নিরিখে উপরের সারিতে থাকা ১০ কোটি মানুষের কেনাকাটা। রফতানি নয়। কিন্তু সেই কেনাকাটা বাড়ার গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে তা আর বাড়বে না। যার ধাক্কা লাগবে বৃদ্ধির হারে। তাঁর সতর্কবার্তা, এমনটা চলতে থাকলে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হারে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ধস নামতে পারে। অর্থনীতির কাঠামোয় ধরতে পারে মন্দার রোগ। দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় মাঝারি স্তরেই আটকে থাকবে। বিপুল পরিমাণ মানুষ দারিদ্রের মধ্যে বাস করবেন। অপরাধের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

এত দিন বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিল যে, ভোটের মরসুমে অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া ঘনাচ্ছে। বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের আসল তথ্য নরেন্দ্র মোদীর সরকার ধামাচাপা দিয়ে রাখছে বলেও দাবি করেছিল বিভিন্ন মহল। কিন্তু এ বার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কার্যত একই কথা বলায় অস্বস্তিতে পড়ল সরকার। সারাদিন ধরে অর্থ মন্ত্রকে তুলকালাম চলেছে কী ভাবে এই অভিযোগ খণ্ডন করা যায়। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বিষয়টি আরও বড় হয়ে যেতে পারে, নাকি উপেক্ষা করাই ঠিক হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও জবাব তৈরি করতে পারেনি অর্থ মন্ত্রক।

আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা বলে লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি ঢাক পেটাচ্ছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে জেটলিরই অর্থ মন্ত্রক এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। এর পিছনে সাধারণ মানুষের কেনাকাটা কমে যাওয়াকে অন্যতম প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছিল অর্থ মন্ত্রকও। গাড়ি, বাইক-স্কুটার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিমানে যাতায়াত কমে যাওয়াও এর লক্ষণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন অর্থনীতিবিদেরা।

আর রথীনবাবু তো এই বিশ্বসেরার তকমাকে গুরুত্ব দিতেই রাজি নন। তাঁর যুক্তি, চিনের বৃদ্ধির হার কম বলেই ভারতের বৃদ্ধির হার গোটা বিশ্বে সর্বোচ্চ। তা ছাড়া এই বৃদ্ধির হার ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, এমনটাও নয়। এখন ভারতের বৃদ্ধির হার ৬.১ থেকে ৬.৬ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু কেনাকাটা কমে গেলে সেই হারও বিপদের মুখে পড়বে। আগামী পাঁচ-ছয় বছরে তা ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামবে। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন তা থেমে যাবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর রথীন রায় প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, এই দুশ্চিন্তার কথা তিনি সরকারি স্তরেও জানিয়েছেন। রথীনবাবু বলেছেন, মাঝারি আয়ের ফাঁদে পড়ে যাওয়ার অর্থ ভারত দক্ষিণ কোরিয়া বা চিন হবে না। ব্রাজিল বা দক্ষিণ আফ্রিকা হবে। তিনি সাবধান করেছেন, অনেক দেশই মাঝারি আয়ের ফাঁদে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছে। যারা এক বার পড়েছে তারা আর বার হতে পারেনি।

বুধবারই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে কংগ্রেস অর্থনীতির মলিন ছবি নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছিল। চিদম্বরমের অভিযোগ ছিল, মোদী-জেটলির যুগলবন্দি ভারতকে বিপজ্জনক ভাবে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

রথীনবাবুর আশঙ্কাকে সমর্থন জানান অর্থনীতিবিদ প্রণব সেন। তাঁর মতে, ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে আয়ের নিরিখে নীচের দিকে থাকা ৫০ থেকে ৬০ কোটি মানুষের আয় উপরের সারির ১০ কোটি মানুষের থেকে বেশি হারে বাড়ছিল। কিন্তু গত তিন বছরে কৃষি থেকে আয়ের ছবিটা একেবারে ভেঙে পড়েছে।

বিরোধীদের কটাক্ষ, ফুটবলে অনেক ভারতীয় ব্রাজিলের সমর্থক। কিন্তু অর্থনীতিতে ব্রাজিল হতে ভারত নিশ্চয়ই চায় না। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ইঙ্গিত তেমনই।

অন্য বিষয়গুলি:

Growth Indian Economy Rathin Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE