নতুন আয়কর কাঠামোতে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে দিতে হবে না একটা টাকাও কর। ১ ফেব্রুয়ারি সংসদের বাজেট বক্তৃতায় এ কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে সঙ্গত কারণেই মূলধনী লাভের (ক্যাপিটাল গেইন্স) থেকে আয়ের উপর কর প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন লগ্নিকারীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, এক লক্ষ টাকা মূলধনী লাভ নিয়ে বার্ষিক আয়ের অঙ্ক ১৩ লক্ষ টাকা হলে, নতুন কাঠামোতে পাবেন করছাড়?
বিনিয়োগকারীদের এই প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে রয়েছে সদ্য সংসদে পেশ হওয়া আয়কর বিলের মধ্যে। আমজনতার সুবিধার্থে বিলটির মূল অংশ ইতিমধ্যেই ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে আয়কর দফতর। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সস বা সিবিডিটি) জানিয়েছে, নতুন বিলের ৮৭এ ধারা অনুযায়ী মূলধনী লাভ থেকে আয়ের উপর করছাড় বা রিবেট পাবেন না লগ্নিকারীরা।
প্রস্তাবিত আয়কর বিলে নতুন কর কাঠামোকে ১১৫বিএসি ধারার অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্র। সেখানে ১১১এ এবং ১১২ ধারায় রয়েছে মূলধনী লাভকে করযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন কাঠামোতে ৮৭এ ধারায় করদাতাদের রিবেট বা ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা। কিন্তু, তাতে ক্যাপিটাল গেইন্সকে রাখেননি তিনি।
তবে এক লক্ষ টাকা মূলধনী লাভ নিয়ে বার্ষিক আয়ের অঙ্ক ১৩ লক্ষ টাকা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নতুন কাঠামো মেনে দিতে হবে না কোনও কর। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মোট বার্ষিক রোজগার থেকে এক লক্ষ টাকা বাদ দেওয়া হবে। বাকি টাকা বার্ষিক ১২ লক্ষ করছাড়ের আওতাধীন। আর তাই ওই ব্যক্তির আয়করের অঙ্ক দাঁড়াবে শূন্য।
গত বছরের বাজেটে নতুন কর কাঠামোতে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশানের পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার করেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণী নির্মলা। এ বার সেই অঙ্কের কোনও বদল করেননি তিনি। ফলে আগামী আর্থিক বছর থেকে চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা রোজগারে দিতে হবে না একটা টাকাও কর।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, লগ্নিকারীরা যখন তাঁদের বিনিয়োগ বিক্রির মাধ্যমে সেখান থেকে বিপুল আয় করেন, অর্থনীতির পরিভাষায় তাকেই বলে মূলধনী লাভ বা ক্যাপিটাল গেইন্স। উদাহরণ হিসাবে কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর হাতে থাকা এক লক্ষ টাকার শেয়ার বিক্রি করে ১.২০ লক্ষ টাকা পান, তা হলে লাভের ২০ হাজার টাকাকে ক্যাপিটাল গেইন্স হিসাবে ধরা হবে।
মেয়াদের উপর ভিত্তি করে এই মূলধনী লাভকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটিকে বলা হয়, স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ (সর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইন্স)। অপরটির পরিচিতি দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন্স) হিসাবে। এগুলির উপর বিভিন্ন ধরনের আয়কর প্রযোজ্য রয়েছে।
আরও পড়ুন:
নিয়ম অনুযায়ী, ইক্যুইটি শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনার ১২ মাসের মধ্যে সেগুলি বিক্রি করলে স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভের উপর লগ্নিকারীকে দিতে হবে কর। আগে এর পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। গত বছরের বাজেটে তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে কেন্দ্র। এ বারও সেই অঙ্কের কোনও বদল করা হয়নি।
বিনিয়োগকারী ইক্যুইটি শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড ১২ মাসের বেশি ধরে রেখে তা বিক্রি করলে তাকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ হিসাবে গণ্য করবে সরকার। গত বছরের বাজেটে এর পরিমাণও ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা। এ বার এটিও অপরিবর্তিত রেখেছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভের ক্ষেত্রে ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড় পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট লগ্নিকারী।