প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষার ফল আসার পর, অনেক মাতাপিতা নিজের সন্তানের নম্বর ক্লাসের অন্যান্যদের সঙ্গে তুলনা করেন। ছাত্রছাত্রীদের এই তুলনা নিয়ে বিশাল আপত্তি থাকে। কিন্তু যদি সন্তান ক্লাসের প্রথম হওয়ার মতো প্রতিভা রাখে এবং স্রেফ কম পড়াশুনার জন্যে পিছিয়ে যায়, তখন বাবামায়ের আপসোস হবেই। কিছুটা এই ভাবেই যারা বহু বছর ধরে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিপিএফ) টাকা রাখেন তাঁদের আজকাল একটু খারাপ লাগার কারণ আছে বইকি। এটা মানতে কোনও দ্বিধা নেই যে, পিপিএফ হল ভারতের কোটি কোটি মানুষের অবসর পরিকল্পনা। না আছে পিপিএফ-এ বিনিয়োগের কোনও ঝুঁকি। তার ওপর মুচলেকা দেয় খোদ সরকার বাহাদুর। এই সব কারণের জন্যেই বোধহয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বছরের পর বছর আকর্ষিত হন পিপিএফ-এর দ্বারা। কিন্তু আপনি কি জানেন যে গত ১৫ বছরে পিপিএফ-এ টাকা রেখে আপনার ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে? আসুন দেখা যাক কী ভাবে পিপিএফ-এর এই রাস্তায় আপনি নীরবে খুইয়েছেন অনেক অনেক টাকা।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা ১৫ বছরের জন্যে রাখতে হয়। বর্তমান নিয়মে প্রত্যেক বছরে আপনি রাখতে পারেন সর্বাধিক দেড় লাখ টাকা। এর মানে গত ১৫ বছরে, যারা পুরো দেড় লাখ টাকা করে রেখেছেন, তাঁরা সব মিলিয়ে জমিয়েছিলেন সাড়ে বাইশ লাখ টাকা। বছরে দেড় লাখ টাকাটা পুরোটাই ইনকাম ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া হয়। অনেকেই ঠিক এই কারণে বেশির ভাগ টাকা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড রাখতে পচ্ছন্দ করেন, কারণ এতে এক ঢিলে মরে দুই পাখি মারা যায়। ট্যাক্স বাঁচানোও হল, আবার বিনিয়োগও হল।
গত ১৫ বছরে আপনার কষ্টের সাড়ে বাইশ লাখ টাকা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেড়ে হয়েছে ৪২ লাখ টাকা। এটুকু শুনেই মনে হতে পারে যে কী সুন্দর ভাবে পিপিএফ আপনাকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু চটজলদি কোনও সিদ্ধান্তে আসবেন না।
আরও পড়ুন: দেশে আবু ধাবির তেল দৈত্যও
যাঁরা ট্যাক্স কমাতে চান, তাঁরা নিশ্চয়ই ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডের কথা শুনেছেন। এই ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডকে বলা হয় ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম, সংক্ষেপে ইএলএসএস। ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ড ১৯৯৩ সাল থেকে ভারতে আছে। সুতরাং যারা গত ১৫ বছরে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের বদলে বার্ষিক দেড় লাখ টাকা ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডে রেখেছেন, তাঁরাও বিনিয়োগ করেছেন সাড়ে ২২ লাখ টাকা। কিন্তু এই সাড়ে ২২ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯২ লাখ টাকা!
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে বছরে ৯ শতাংশের থেকে বেশি লাভ/রিটার্ন ১৫ বছরে কেউ পায়নি। কিন্তু ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডদের মধ্যে সর্বনিম্ন লাভ হয়েছে ১৬ শতাংশ। এই ১৬ শতাংশ হারে প্রতি বছর টাকা বাড়ার ফলে, সাড়ে ২২ লাখ টাকা হয় ৯২ লাখ টাকা, অর্থাৎ পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৪২ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা বেশি।
মনে রাখতে ১৬ শতাংশ বার্ষিক লাভ কিন্তু ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডদের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদি ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডদের সব থেকে ভাল স্কিমে আপনি টাকা রেখে থাকেন, তা হলে আপনি এখন কোটিপতি। কারণ, এই স্কিম এনেছে গত ১৫ বছরে ২৫ শতাংশ বার্ষিক লাভ। এর ফলে সাড়ে ২২ লাখ টাকা ফুলেফেঁপে হয়ে গিয়েছে ২ কোটি টাকা!
পিপিএফ ন্যূনতম ১৫ বছর টাকা রাখতে হলেও, ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডের (ই.এল.এস.এস) টাকা শুধু স্রেফ তিন বছর রাখতে হয়।
ট্যাক্স বাঁচাতে গিয়ে পুরো টাকা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে না রেখে, কিছুটা টাকা ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডে রাখার কথা ভাবতেই পারেন। হ্যাঁ, এই বিনিয়োগের রাস্তায় সরকারি মুচলেকা নেই। টাকা শেয়ার বাজারে থাকার ফলে বিনিয়োগ পুরপুরিভাবে ঝুঁকিহীন নয়। কিন্তু, এই সব কিছু থাকা সত্ত্বেও ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ড গত ১৫ বছরে খারাপ টাকা দেয়নি।
নিশ্চিত রিটার্নের লোভে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে চুপি চুপি। এখনও সময় আছে। ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy