Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সুদ কমার আশা চাঙ্গা রাখবে বাজারকে

কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। শুরুটা অবশ্য আদৌ ভাল হয়নি। বরাবর বড় কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রথম ফল প্রকাশ করে ইনফোসিস। এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে ফলাফল নিয়ে প্রথম হাজির হয়েছে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস। দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির বার্ষিক ফলাফলে কিন্তু একটুও খুশি হতে পারেনি শেয়ার বাজার।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। শুরুটা অবশ্য আদৌ ভাল হয়নি। বরাবর বড় কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রথম ফল প্রকাশ করে ইনফোসিস। এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে ফলাফল নিয়ে প্রথম হাজির হয়েছে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস। দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির বার্ষিক ফলাফলে কিন্তু একটুও খুশি হতে পারেনি শেয়ার বাজার।

আপাতদৃষ্টিতে শেষ তিন মাসে সংস্থার লাভ ৫২৯৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৯০৬ কোটি হলেও টিসিএস তার কর্মীদের জন্য ২৬২৮ কোটি টাকার বিশেষ বোনাস ঘোষণা করায় প্রকৃত মুনাফা কমে দাঁড়াবে ৩৮৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা কমেছে ২৭%। গোটা বছরের হিসেবে নিট লাভ ১৯,১১৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২১,৬৯৬ কোটি। ইপিএস ৯৭.৬ টাকা থেকে উঠে এসেছে ১১০.৭৭ টাকায়। তাদের কর্মী সংখ্যা ৩.২০ লক্ষ, যাঁরা এককালীন বিশেষ বোনাস পাবেন ২,৬২৮ কোটি টাকা, যা দেওয়া হচ্ছে সংস্থার শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হওয়ার ১০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এ খবরে কর্মীরা বেজায় খুশি হলেও বেশ মুষড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। বৃহস্পতিবার ১৩৪ অঙ্ক নামার পরে শুক্রবার সেনসেক্স নামে ২২৪ অঙ্ক এবং সপ্তাহ শেষে থিতু হয় ২৮,৪৪২ অঙ্কে। অর্থাৎ সপ্তাহটা ভাল যায়নি লগ্নিকারীদের। সপ্তাহ শেষে টিসিএস শেয়ার নেমে এসেছে ২৪৭৬ টাকায়। ইনফোসিস ফল প্রকাশ করবে ২৪ এপ্রিল।

টিসিএস হতাশ করলেও সপ্তাহ শেষে তাক লাগানো ফলাফল প্রকাশ করেছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। শেষ তিন মাসে নিট লাভ ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে স্পর্শ করেছে ৬,৩৮১ কোটি। গোটা বছরে লাভ বেড়েছে ১০৭৩ কোটি টাকা। পৌঁছেছে ২৩,৫৬৬ কোটি টাকায়। ২০১৪-’১৫ সালে মোট আয় স্পর্শ করেছে ৩.৮৮ লক্ষ কোটি। ভাল ফলের আশায় গত কয়েক দিন ধরেই দাম বেড়েছে এই মার্কেট হেভিওয়েটের। সপ্তাহ শেষে উঠে এসেছে ৯২৭ টাকায়। গত সপ্তাহে ভাল ফল উপহার দিয়েছে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক-ও। শেষ তিন মাসে এই বেসরকারি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৩৯৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ৪৯৫ কোটি টাকায়।

গত মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমানোর পরে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উপর সুদ কমানোর চাপ ছিল। সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ক্রমাগত চাপ দিতে থাকায় অবশেষে ঋণ এবং জমা দু’ইয়ের উপরেই সুদ কমাতে শুরু করেছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। বড় মাপের প্রায় সব ক’টি ব্যাঙ্কই কমিয়েছে তাদের ঋণে‌ ন্যূনতম সুদের হার বা বেস রেট। কমানো হয়েছে গৃহঋণের উপর সুদ। পাশাপাশি, সুদ কমানো হয়েছে ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতের উপরও। সুদ কমতে শুরু করায় শিল্প-বাণিজ্য মহল খুশি। গৃহঋণে সুদ কমায় নতুন হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নীচে। এর ফলে বাড়ি ও ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সঙ্গের সারণিতে এক নজরে দেখে নেওয়া যাবে বিভিন্ন সংস্থায় গৃহঋণের উপর সুদের নতুন হার।

বাড়ি এবং গাড়ি ঋণে সুদ কমায় এক দিকে যেমন ইএমআই কমবে, অন্য দিকে তেমনই জমার উপর সুদের হার নেমে আসায় মধ্যবিত্তের উপর চাপ বেশ বাড়বে। সম্প্রতি মেয়াদি আমানতে ২৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমিয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক। সুদ আরও কমার সম্ভাবনা আগামী দিনে।

বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম যা-ই হোক, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুচরো এবং পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির গতি কমেছে উভয় ক্ষেত্রেই। ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে শূন্যের ২.৩% নীচে, অর্থাৎ দাম কমেছে ওই হারে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারও নেমে এসেছে গত তিন মাসের মধ্যে সব থেকে নিচু জায়গায় (৫.১৭%)। ফলে জোরালো হয়েছে সুদ আরও কমানোর দাবি। সুদ যদি আরও কমে, তবে তা বেশ অসুবিধায় ফেলবে অবসরপ্রাপ্ত এবং সুদ নির্ভর অসংখ্য মানুষকে। অন্য দিকে সুদ হ্রাসই চাঙ্গা রাখতে পারে শেয়ার বাজারকে। আশঙ্কা, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসের সংস্থা-ফলাফল তেমন ভাল হবে না। বাজার এরই মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রথম দিকের ফলে। সুদ কমার আশাই হয়তো এই জায়গা থেকে সূচককে বেশি নামতে দেবে না। আর্থিক ফলাফল প্রকাশ চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত।

গত সপ্তাহে বেরিয়েছে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বিভিন্ন ফর্ম। নতুন ফর্মে দেখাতে হবে আয়করদাতার সব ক’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য। দেখাতে হবে সেই সব অ্যাকাউন্টও, যেগুলি গত বছর বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া দাখিল করতে হবে বিদেশে রাখা সব সম্পদের তথ্য। আগের বছর বিদেশ গিয়ে থাকলে দাখিল করতে হবে তার খরচের পুরো তথ্য। তবে নতুন ফর্মের জটিলতা নিয়ে এরই মধ্যে অসন্তোষ জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। কেন্দ্র জানিয়েছে, ফর্মগুলি পুনর্বিবেচিত হবে, প্রয়োজনে সংশোধনও হবে। ফলে যত দিন নতুন ফর্ম প্রকাশিত না-হচ্ছে, তত দিন হয়তো রিটার্ন দাখিল সম্ভব হবে না। নজর রাখতে হবে, কবে সংশোধিত ফর্ম প্রকাশিত হয়, সে দিকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE