গালে-হাত। বাগানের না-বদলানো ছবি। ফাইল চিত্র
দুনিয়াজোড়া যে চায়ের খ্যাতি, দার্জিলিঙের সেই ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ এ বার আর বাজারের মুখই দেখবে না সে ভাবে। পাহাড়ে আন্দোলনের মুখে পড়ে এ কথা কার্যত মেনেই নিয়েছেন হতাশ বাগান মালিকরা। তাঁদের দাবি, ক্ষতি এখনই ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে। আশঙ্কা তা ১৫০ কোটিতে পৌঁছনোর। কিন্তু শুধু এ বছরের জন্য নয়, তাঁদের কপালে এখন থেকে ভাঁজ পড়ে গিয়েছে সামনের বছরের জন্য। তাড়া করছে দুশ্চিন্তা। এ বারের খারাপ ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব আগামী বছরেও গড়াবে না তো? ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট দেখে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না তো আমদানিকারীরা?
পরিকাঠামো থেকে শুরু করে একেই চা বাগানগুলির সমস্যা বিস্তর। বাম জমানায় এক সময় লাগাতার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবল ভাবে ভুগতে হয়েছে তাদের। মাঝে সেই সমস্যা কিছুটা কমেছিল। এখন নতুন করে তা মাথাচাড়া দেওয়ায় চা শিল্পের সঙ্কট দীর্ঘায়িত হবে কি না, তা নিয়েই চিন্তিত চা শিল্প।
ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ভরত আরিয়ার আশঙ্কা, এ বার রফতানি বাজারে দার্জিলিঙের সেকেন্ড-ফ্লাশ চায়ের প্রায় কিছুই না পৌঁছনোর নেতিবাচক প্রভাব আগামী বছরেও পড়তে পারে। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহার কথায়, ‘‘বাগান বন্ধ থাকার ক্ষতি অপূরণীয়।’’
সেকেন্ড ফ্লাশ
•বসন্তের শেষ আর গ্রীষ্মের শুরু, এই ঋতু সন্ধিক্ষণ থেকে বর্ষার আগে পর্যন্ত তোলা চা পাতাই সেকেন্ড ফ্লাশ
•প্রতি কেজির দাম কমপক্ষে ১,০০০-১,২০০ টাকা। ওঠে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত
•দার্জিলিঙের মাসকাট্ল ফ্লেভারের কদর দুনিয়াজুড়ে। তার দৌলতে সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের প্রায় পুরোটাই রফতানি
•আন্দোলনের জেরে ৯ জুনের পর থেকে পাতা তোলাই যায়নি
•কারখানা বন্ধ। বাগানে পড়ে তৈরি চা-ও। ক্ষতি ১০০ কোটি
•বর্ষা মুখ বাড়াচ্ছে ইতিমধ্যেই। ফলে এ বারের মতো প্রায় শেষ এই চায়ের মরসুম
•এ বারের মতো ব্যবসা তো গেলই। এর খারাপ প্রভাব পড়বে আগামী বছরেও
•ধাক্কা আমদানিকারীদের কাছে ভাবমূর্তিতে। চিন্তা সেই শাঁসালো বাজার হাতছাড়া হওয়া নিয়েও
মোর্চার আন্দোলনের জেরে ৯ জুন থেকে বাগানগুলিতে চা পাতা তোলা বন্ধ। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পৌঁছে দার্জিলিঙের চা বাগান মালিকদের সংগঠন জানাচ্ছে, এ বছর সেকেন্ড ফ্লাশ চা বাজারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মরসুম শেষ এবং বন্ধের আগে তোলা পাতার অধিকাংশও কারখানায় পড়ে আছে।
বাগান মালিকদের অভিযোগ, চা শিল্পকে বন্ধের আওতার বাইরে রাখতে বারবার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কান দেয়নি মোর্চা। কার্শিয়াঙের একটি চা বাগানের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘বাগান বন্ধ মানে শ্রমিকরাও মজুরি পাচ্ছেন না। তা ছাড়া একবার চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার হাতছাড়া হলে, তা ফিরে পাওয়া কষ্টকর।’’
ডিটিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল কৌশিক বসুর দাবি, লোকসান ১৫০ কোটি ছুঁতে পারে। তা ছাড়া, এত দিন বাগান বন্ধ থাকায় পাতা বড় হয়ে গিয়েছে। যে দিন বাগান খুলবে, তার পর থেকে অন্তত সাত দিন লাগবে ফের উপযুক্ত পাতা তৈরি হতে। ততদিনে মরসুম শেষ।
তাই এ বারের এই টানা বন্ধ দার্জিলিং চায়ের শিরদাঁড়াই ভেঙে দিল বলে অভিযোগ ওই শিল্পের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy