—ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগৃহীত সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে রায় দিল ন্যাশনাল কোম্পানি ল আপিল ট্রাইবুনাল (এনসিএলএটি)।
২০১৭ সালের মে মাসে নতুন দেউলিয়া বিধি মোতাবেক ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি)-এর কলকাতা বেঞ্চের দ্বারস্থ হন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। পেশ করা হয় পাওনাদারদের টাকাকড়ি মেটানোর পরিকল্পনা বা রেজ়োলিউশন প্ল্যান। এর পর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড গোটানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রেল মন্ত্রক। পরের মাসেই সেই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয় এনসিএলটি। পাশ হয় রেজ়োলিউশন প্ল্যানও।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ট্রাইবুনালে যান কর্মীরা। সোমবার আপিল ট্রাইবুনাল তার রায়ে বলেছে, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের যে রেজ়োলিউশন প্ল্যান এনসিএলটি-র কলকাতা বেঞ্চ অনুমোদন করেছে, তা দেউলিয়া আইনের পরিপন্থী। সংস্থা বন্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়েই কর্তৃপক্ষ দেউলিয়া আইনে মামলা করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেছে আপিল আদালত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সম্প্রতি দেউলিয়া আইন পর্ষদের চেয়ারম্যান এম এস সাহু বলেছিলেন, সংস্থা গুটিয়ে নেওয়া নয়, তাকে পুনরুজ্জীবিত করাই দেউলিয়া আইনের উদ্দেশ্য। কোনও পক্ষের গাফিলতিতে এর উল্টোটা হলে সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।
সংস্থা পরিচিতি
• বার্ন অ্যান্ড কো এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন কোম্পানি মিশে তৈরি বার্ন স্ট্যান্ডার্ড। জাতীয়করণ ১৯৭৬ সালে।
• বার্নের পরিচিতি দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং অন্যতম অগ্রণী ওয়াগন নির্মাতা হিসেবে।
• কারখানা হাওড়া ও বার্নপুরে।
এ দিন এনসিএলএটি তার রায়ে বলেছে, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড চালু রাখতে হবে। কোনও কর্মী ছাঁটাই করা চলবে না। পাশাপাশি সংস্থা কর্তৃপক্ষকে তাঁদের পরিকল্পনা থেকে সংস্থা বন্ধ করার প্রস্তাবটি বাদ দিয়ে নতুন প্রস্তাব এনসিএলটিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়ার জন্য কলকাতা বেঞ্চকে বলেছে আপিল আদালত। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কতৃর্পক্ষ সেটা না করলে পুরো পরিকল্পনাই বাতিল করা হবে বলে আপিল ট্রাইবুনালের রায়ে জানানো হয়েছে। তবে আপাতত রেজ়োলিউশন পরিকল্পনার বাকি অংশ বহাল থাকবে।
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করার প্রস্তাব এনসিএলটি-র অনুমোদন পাওয়ার পরে ২০১৮-র এপ্রিলে তাতে সায় দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর পরে রেল মন্ত্রক ৪১৭ কোটি টাকা দিয়ে সংস্থার পাওনাদারদের সব পাওনা মিটিয়ে দেয়। কর্মীদের দেওয়া হয় স্বেচ্ছাবসর।
তবে ৫৭ জন কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিতে অস্বীকার করায় তাঁদের ছাঁটাই করা হয়। এ দিন আপিল ট্রাইবুনাল যে রায় দিয়েছে, তাতে ওই সব কর্মীকে ফের চাকরিতে বহাল করতে হবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ছাঁটাই বেআইনি ছিল। এ বার ওই ৫৭ জন কর্মীকেই ফের চাকরিতে বহাল করতে হবে।’’
সময় সারণি
• ১৯৯৪: বিআইএফআরে গেল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড।
• ১৯৯৫: রুগ্ণ সংস্থার তকমা।
• সেপ্টেম্বর, ২০১০: সংস্থার রাশ রেল মন্ত্রকের হাতে।
• ডিসেম্বর, ২০১৬: উঠে গেল বিআইএফআর।
• মে, ২০১৭: নতুন দেউলিয়া বিধি মেনে এনসিএলটি-তে কর্তৃপক্ষ।
• জুলাই, ২০১৭: পাওনাদারদের নিয়ে তৈরি হল ক্রেডিটর্স কমিটি। নিযুক্ত হল মূল্যায়নকারী। রেজ়োলিউশন প্রফেশনাল (আরপি) নিয়োগ।
• অগস্ট, ২০১৭: জমা পড়ল মূল্যায়নের রিপোর্ট।
• অক্টোবর, ২০১৭: পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা (রেজ়োলিউশন প্ল্যান) তৈরির নির্দেশ এনসিএলটি-র।
• ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: সংস্থা গোটানোর সিদ্ধান্ত জানাল রেল।
• মার্চ, ২০১৮: সংস্থা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত-সহ রেজ়োলিউশন প্ল্যান পাশ এনসিএলটি-তে।
• এপ্রিল, ২০১৮: সংস্থা গোটানোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার।
• মে, ২০১৮: কর্মীরা এনসিএলএটি-তে আবেদন করলেন রেজ়োলিউশন প্ল্যানের বিরুদ্ধে।
• জুলাই, ২০১৮: ওই মামলায় সামিল করতে হবে রেলকেও, বলল আপিল ট্রাইবুনাল। ফলে আটকে গেল সংস্থা গোটানোর কাজ।
• ১৩ মে, ২০১৯: সংস্থা গোটানোর পরিকল্পনা বাতিল করল এনসিএলএটি।
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অনুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আগেই দাবি করেছি, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড হয় রেল নিজে চালাক অথবা রেলের আওতায় থাকা কোনও সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দিক।’’
তবে আপিল আদালতের রায়ের পর বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের সমস্যা সমাধান বেশ সময়সাপেক্ষ হবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ-সহ বিভিন্ন ওয়াকিবহাল মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy