অনেক জেলাতেই বিদ্যুৎ বিল ঠিক মতো আদায় হয় না। বিদ্যুৎ চুরি-সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ক্ষতিও বাড়ছে। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সিইএসসি। ফলে নগদের সঙ্কটে নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তাদের কোষাগারে অর্থের টানাটানি আরও বাড়তে চলেছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। চলতি অর্থবর্ষে (২০১৫-’১৬) সংস্থার রাজস্ব ঘাটতি হবে পারে ১৯৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে সিইএসসি বছরে প্রায় ৮০০-৯০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনত। সম্প্রতি হলদিয়ায় ৬০০ মেগাওয়াটের নতুন একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়েছে সিইএসসি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সেখানে উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তারপরই বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে সিইএসিসি বিদ্যুৎ কেনা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে থাকে।
এ বছরও গ্রীষ্মকালে তিন মাস সিইএসসি প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ কিনেছে বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে। জুলাই মাসে অল্প পরিমাণে কেনার পরে, অগস্ট থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। বণ্টন কর্তৃপক্ষেরই হিসেব বলছে, চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত সিইএসসি যে-পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনেছে, তা অন্য বছরের ওই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩১৪ কোটি টাকা কম। আর এখন তো সিইএসসি বিদ্যুৎ কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ধাক্কা লেগেছে বণ্টন সংস্থার কোষাগারে। এর পাশাপাশি, বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ কেনার খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বকেয়া বিল মেটানোর তাড়া। চাপ সামলাতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদি ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে চলেছেন বণ্টন কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্ন উঠছে, সিইএসসি যে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করবে এবং তাতে যে আয় কমবে, সে কথা তো জানাই ছিল। তা হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন আগে থেকেই ব্যবস্থা নিল না বণ্টন সংস্থা? বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশের দাবি, তাঁদের সবই জানা ছিল। প্রাথমিক ভাবে কোষাগারে একটা ধাক্কা লাগলেও খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করে রেখেছেন তাঁরা। ওই কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ চলছে। আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। পাশাপাশি, অন্য উপায়েও নতুন গ্রাহক ধরার চেষ্টা চলছে। উদাহরণ হিসেবে এক কর্তা জানাচ্ছেন, আগে আসানসোল অঞ্চলে ইস্টার্ন কোলফিল্ডসের খনিগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত অন্য একটি সংস্থা। ওই সংস্থার থেকে কম মাসুলে বণ্টন সংস্থা এখন খনিতে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। তাতে আসানসোল অঞ্চলে তাদের রাজস্ব এক লাফে অনেকটা বেড়েছে।
এক বিদ্যুৎ-কর্তা বলেন, ‘‘সিইএসসি-কে বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের বিশেষ আর্থিক লাভ হত না। এটা ছিল গ্রাহক স্বার্থে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ব্যবসায়িক লেনদেন। সিইএসসি বিদ্যুৎ নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যুৎও কম কিনতে হচ্ছে। ফলে আমাদের বিদ্যুৎ বিলও কিছুটা কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy