মন্ত্রী-আমলাদের পরে এ বার লক্ষ্য আমজনতা। গাড়ির পরে বাস-অটো। পেট্রোল-ডিজেলে নয়, সব কিছুই চলবে বিদ্যুতে।
কিছু দিন আগেই ১০ হাজার বৈদ্যুতিক (ইলেকট্রিক) গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সেই একই পথে হেঁটে আগামী দিনে ১০ হাজার বৈদ্যুতিক বাস ও ৫০ হাজার বৈদ্যুতিক অটোও কিনতে চায় তারা। যে জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র (গ্লোবাল টেন্ডার) চাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মোদী সরকার প্রথমে বলেছিল, ২০৩০ সালের পরে ভারতের রাস্তায় শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়িই চলবে। পরে বাস্তবে তা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, পেট্রোল-ডিজেল গাড়ি পুরোপুরি তুলে দেওয়া সম্ভব না-ই হতে পারে। কিন্তু ২০৩০-এর পর দেশে শুধু ই-গাড়িই বিক্রি হবে, এমন লক্ষ্য নেওয়া যেতে পারে।
সরকারি দফতর থেকেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার শুরু করতে গত অগস্টে ১০ হাজার সেডান কিনতে আন্তর্জাতিক স্তরে দরপত্র ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ১০ হাজার ই-গাড়ির মধ্যে প্রথম দফায় কেনা ১০০০টি দিল্লিতে সরকারি দফতরে ব্যবহার হবে। এমন গাড়ি চাওয়া হয়েছে, যা একবার চার্জ দিলে ১৫০ কিলোমিটার দৌড়তে পারবে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইইএসএল (এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড)-কে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইইএসএল এর আগে এলইডি বাল্বের ব্যবহার বাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছিল।
এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে গণ-পরিবহণের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ির আন্তর্জাতিক দরপত্র ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, অক্টোবরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বরে তিন চাকার গাড়ি এবং জানুয়ারিতে বাসের জন্য দরপত্র চাওয়া হবে। সরকারি কর্তারা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে এ দেশের বজাজ, টিভিএস, মহীন্দ্রা, টাটা মোটরস, অশোক লেল্যান্ড, কাইনেটিক, লোহিয়া অটোর মতো সংস্থাগুলিও প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
দু’দশক আগে ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালু হলেও তা বিশেষ জনপ্রিয় হয়নি। যার কারণ— এক, গাড়ির ‘চার্জিং পয়েন্ট’-এর অভাব। দুই, একবার চার্জে বেশি দূর যাওয়া কঠিন। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে এই ধরনের গাড়িতে উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে। সরকারি কাজে ও গণ-পরিবহণেও বৈদ্যুতিক যান চালু করতে চাইছে তারা। ১০ হাজার ই-গাড়ির সঙ্গে তাই ৪ হাজার চার্জিং পয়েন্টেরও বরাত দেওয়া হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী নিতীন গডকড়ীর লক্ষ্য, দেশে ২ লক্ষ বৈদ্যুতিক বাস চালু করা। অর্থের সংস্থান করতে জাপানি লগ্নি সংস্থা সফটব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলছেন গডকড়ী।
গডকড়ী, গয়ালদের যুক্তি, এতে এক দিকে দূষণ কমবে। অন্য দিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য বছরে যে প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকার অশোধিত তেল আমদানি করতে হয়, সেই খাতে খরচ কমবে। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, কেন্দ্র এক দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর কথা বলছে। অথচ অন্য দিকে, বৈদ্যুতিক গাড়িতে জোর দিচ্ছে। তবে সুবিধা কি বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা পাবে? ফায়দা লুটবে কিছু শিল্পগোষ্ঠী? বিতর্ক এখন একে ঘিরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy