Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
তোপ সামলাতে চোখ কর্মসংস্থানে

কথা দু’কোটি কাজের, হাতে রইল পকোড়া

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যদিও শ্রম নীতি সংস্কার না করে শুধু বাড়তি বরাদ্দে সেই সমস্যার সুরাহা কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান শিল্পমহল।

উঁকি: কাজ খালি? নোটিসে উন্মুখ চোখ চাকরিপ্রার্থীদের। —ফাইল চিত্র।

উঁকি: কাজ খালি? নোটিসে উন্মুখ চোখ চাকরিপ্রার্থীদের। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

চাকরির বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল কিছু দিন আগে। সরকারি অফিসে, ৩৬৬টি পিওনের পদে। তার জন্য আবেদন জমা পড়েছিল প্রায় ২৩ লক্ষ! এর মধ্যে ২৫৫ জন পিএইচডি। ২ লক্ষের বেশি ইঞ্জিনিয়ার। আর স্নাতকোত্তর? কয়েক লক্ষ! ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের। কিন্তু এই ছবি আসলে সারা দেশেরই। তা-ও আবার সেই প্রধানমন্ত্রীর জমানায়, যিনি দিল্লির মসনদে এসেছিলেনই বছরে অন্তত দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতিতে সওয়ার হয়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যদিও শ্রম নীতি সংস্কার না করে শুধু বাড়তি বরাদ্দে সেই সমস্যার সুরাহা কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান শিল্পমহল।

নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন, ২০১৯ সালে ব্যালটের লড়াই জিততে জরুরি তরুণদের পাশে পাওয়া। তাঁদের মন জয়ের প্রথম শর্ত চাকরি। অথচ বছরে দু’লক্ষ কাজ তৈরি করতেই হিমসিম খাচ্ছে কেন্দ্র। নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর অস্ত্, বরং অনেকের রোজগার কেড়েছে নোটবন্দি। মার্কিন মুলুকে ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি ও নতুন প্রযুক্তির আক্রমণে অনেক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কাজ হারানোর ভয়ে কাঁটা। শ্রম আইন সংস্কারের পথেও বাধা সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে আপত্তি। এই পরিস্থিতিতে কাজ তৈরি না হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে রোজ নিয়ম করে বিঁধছেন বিরোধীরা।

রাহুল গাঁধী বলছেন, ‘‘বেকারত্বে হতাশাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে না পেরে মোদী সরকার সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছে।’’ তাঁদের মতে, তার হাতে গরম উদাহরণ পদ্মাবত নিয়ে উত্তর ভারত জুড়ে করণী সেনার তাণ্ডব।

নতুন কাজ

বছর চাকরি*

• ২০১১ ৯.৩০

• ২০১২ ৩.২২

• ২০১৩ ৪.১৯

• ২০১৪ ৪.২১

• ২০১৫ ১.৫৫

• ২০১৬ ২.৩১

* হিসেব লক্ষে।

তথ্যসূত্র: কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক

মোদীর সাফাই, ‘‘কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে নথিভুক্তি বেড়েছে। কর্মসংস্থান না বাড়লে তা হল কী ভাবে?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনার অফিসের সামনে যে পকোড়ার দোকান খুলেছে, সে কি রোজগার করছে না?’’ তাতে কেন্দ্রকে আরও চেপে ধরেছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন, দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি তবে পকোড়া ভাজায় এসে ঠেকল?

তা ছাড়া, মোদী সরকারের আর্থিক উপদেষ্টারা জানেন, প্রশ্নটা স্রেফ পেট চালানোর নয়। এখানে যোগ্যতা অনুযায়ী ভাল বেতনের চাকরি বা আয়ের সুযোগ তৈরির বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নীতি আয়োগের তিন বছরের ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’ও বলছে, এই কম বেতনের চাকরির ছবি বদলানো দরকার। এ অবস্থায় বাজেটে কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করছেন জেটলি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশ, যেখানে টাকা ঢালা হচ্ছে, সেখানে যেন রোজগারও তৈরি হয়। নতুন চাকরির সংখ্যা ৮ বছরে সর্বনিম্ন। অথচ ফি বছর এক কোটি ছেলেমেয়ে পা রাখছেন কাজের বাজারে। এমন নির্দেশ না দিয়েই বা উপায় কি?

বাজেটে মরিয়া


প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশ, বাজেটে টাকা শুধু সেখানেই, যেখানে কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা


ঘোষণা হতে পারে নতুন কর্মসংস্থান নীতি


কাজের সুযোগ তৈরিতে বেসরকারি সংস্থাকে উৎসাহ


জোর প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে


বস্ত্রে কর্মীদের প্রশিক্ষণে বরাদ্দ ৩ গুণ বেড়ে হয়তো ৬০০ কোটি


রোজগারের সুযোগ বাড়াতে বাড়তি বরাদ্দ সম্ভবত পরিবহণ, আবাসন, দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রককে


একই কারণে গুরুত্ব পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও। বরাদ্দ হতে পারে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এই ধাঁধার সমাধান খুঁজতে নতুন কর্মসংস্থান নীতি ঘোষণা হতে পারে। সংস্থাগুলিকে চাকরি তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া হবে। সেখানেও অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রী রোজগার প্রোৎসাহন যোজনা’য় পিএফের ৮.৩৩% দায় সরকার বইছে। বস্ত্র, চর্ম-জুতো শিল্পের প্যাকেজেও সরকার নতুন কর্মীদের পিএফে অতিরিক্ত ৩.৬৭% দায় নিচ্ছে। কিন্তু এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক তথা ইপিএফ অছি পরিষদের সদস্য শঙ্কর সাহার মতে, তাতে নতুন কর্মসংস্থান তেমন হয়নি।

সূত্রের খবর, কাজের সুযোগ তৈরির জন্য কিছু মন্ত্রকের বরাদ্দ বাড়তে পারে। কিন্তু সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, আগে নমনীয় শ্রম নীতি জরুরি। নজর দিতে হবে দক্ষতা বাড়ানোতেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE